পাকিস্তানের কুখ্যাত রেহমান ডাকাতই কি অক্ষয়, জানুন পর্দার আড়ালের সত্যি ঘটনা
গতকাল মুক্তি পেয়েছে আদিত্য ধরের নতুন সিনেমা ‘ধুরন্ধর’। প্রথম টিজার, এরপর ট্রেলারে সাড়া ফেলছিল সত্য ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত তারকাবহুল সিনেমাটি। এতে অভিনেতাকে দেখা গেছে বাস্তব থেকে অনুপ্রাণিত বিভিন্ন চরিত্রে। তবে বিশেষভাবে আলোচনায় অক্ষয় খান্না অভিনীত রহিম ডাকাত চরিত্রটি। ট্রেলার দেখে অনেকে বলছেন, এটি তৈরি হয়েছে পাকিস্তানের কুখ্যাত রহিম ডাকাতের জীবনের আধারে।
কে এই রেহমান
‘ধুরন্ধর’ ছবিতে অক্ষয় অভিনীত চরিত্রের নামও রেহমান ডাকাত। কিন্তু সত্যিই কি ‘ধুরন্ধর’-এ কুখ্যাত পাকিস্তানি মাফিয়া রেহমান ডাকাতের চরিত্রে অভিনয় করছেন অক্ষয়? অনেকে তেমন দাবি করলেও ছবির নির্মাতাদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।
রেহমান ডাকাতের আসল নাম ছিল সর্দার আবদুল রেহমান বালুচ। খুব কম বয়সেই অপরাধজগতে হাতেখড়ি হয় রেহমানের। ধীরে ধীরে আন্ডারওয়ার্ল্ডের ‘বাদশা’ হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
রেহমানের জন্ম ১৯৮০ সালে। বাবা মুহাম্মদ ও মা খাদিজা বিবি। রেহমানের বাবা ও চাচা ছিলেন কুখ্যাত মাদক পাচারকারী। ১৯৬৪ সাল থেকে মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিলেন তাঁরা। অল্প বয়স থেকে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন রেহমানও।
মাত্র ১৩ বছর বয়সে ছুরি মেরে খুনের অভিযোগ উঠেছিল রেহমানের বিরুদ্ধে। কেউ কেউ দাবি করেন, ১৯৯৫ সালে নিজের মাকেও খুন করেছিলেন তিনি। প্রতিপক্ষ গ্যাংয়ের সদস্যের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে সন্দেহেই নাকি মাকে খুন করেছিলেন তিনি।
শোনা যায়, রেহমান এতটাই নির্মম ছিলেন যে করাচির মানুষ তাঁর নাম মুখে আনতেও ভয় পেতেন। আবার করাচি আর আশপাশের এলাকায় প্রচলিত ছিল, রেহমান কোনো মানুষ ছিলেন না, ছিলেন ‘সাক্ষাৎ শয়তান’।
পাকিস্তানে রেহমানের মূল প্রতিপক্ষ ছিলেন আরশাদ পাপ্পু নামের অন্য এক গ্যাংস্টার। ২০০০ সালের গোড়ার দিকে, মাদক, চাঁদাবাজি আর এলাকা দখল নিয়ে আরশাদের সঙ্গে রেহমানের বিরোধ তীব্র আকার ধারণ করে।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে প্রবেশের উচ্চাকাঙ্ক্ষাও দেখেছিলেন রেহমান। তার জন্য অনেক চেষ্টাও করেছিলেন। তবে সেভাবে সফল হননি। সেই সূত্রে অনেক বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে নাকি ওঠাবসা ছিল তাঁর। ২০০৮ সালে পিপলস আমান কমিটি (পিএসি) নামে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী তৈরি করেছিলেন রেহমান। বলা হয় ‘পাকিস্তান পিপলস পার্টি’র সঙ্গে সরাসরি যোগ ছিল এই গোষ্ঠীর।
২০০৮ থেকে অপরাধজগতে রেহমানের প্রভাব আরও বৃদ্ধি পেয়েছিল। তাঁকে দমন করতে উঠেপড়ে লাগে প্রশাসন। ২০০৯ সালে করাচি পুলিশের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন রেহমান ও তাঁর গ্যাং। ২০০৯ সালেই পুলিশের গুলিতে মৃত্যু হয় রেহমানের।
রেহমানের ছেলেও পুলিশের গুলিতে মারা যান
রেহমান ডাকাতের ছেলে সরবান ডাকাত গত বছর পুলিশের ‘এনকাউন্টারে’ নিহত হন। সরবান আগে ড্রাগ ব্যবসা ও মুক্তিপণ বিনিময়ের জন্য অপহরণ মামলায় জড়িত ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, রেহমান ডাকাতের তিন স্ত্রী থেকে অনেক ছেলেমেয়ে রয়েছে। সরবান ছিলেন দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে, যাঁর আরও তিন ছেলে ছিল। রেহমানের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী স্থানীয় এক নির্মাতার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
সিনেমায় কী দেখানো হয়েছে
টিজার ও ট্রেলার মুক্তির পর অক্ষয়ের লুক প্রশংসিত হলেও অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, সিনেমায় চরিত্রটিকে অতিরঞ্জিত করে দেখানো হয়েছে। বলিউড সিনেমায় বরাবরই ভারতীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের নায়কোচিতভাবে দেখানো হয়, এ সিনেমাতে হয়তো সেটাই করা হয়েছে।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, করাচির গ্যাংস্টারের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল একেবারেই স্থানীয় ঘটনা, যার মূল কারণ ছিল দারিদ্র্য, রাজনৈতিক উদাসীনতা ও সামাজিক-অর্থনৈতিক বৈষম্য। রেহমান ডাকাত লটারির অপরাধজগৎ নিয়ন্ত্রণ করতেন; আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল না। স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা চৌধুরী আসলাম নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে এই গ্যাংগুলো ভাঙার জন্য কাজ করেছিলেন। তিনি শহরে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছিলেন, পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছেন।
তিনি এই ঘটনাগুলোর কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন, কোনো বিদেশি নায়কের সহায়ক নয়, যা হয়তো এ সিনেমায় দেখানো হয়েছে।
সিনেমায় রেহমান ডাকাতকে এক বৃহৎ ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে, যা আসলে বাস্তবতাবিবর্জিত। এ জন্য পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমগুলো দেশটির নির্মাতাদেরও দায়ী করেছেন। কারণ, তাঁরা কেবল পর্দায় রোমান্টিক ড্রামাই বানান, সত্যিকারের অপরাধের ঘটনাগুলো নিয়ে সিনেমা-সিরিজ বানান না।
কী আছে ‘ধুরন্ধর’-এ
‘ধুরন্ধর’-এর মূল চরিত্রে অভিনয় করছেন রণবীর সিং। তিনি ছাড়াও ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সঞ্জয় দত্ত, আর মাধবন, অক্ষয় খন্না ও অর্জুন রামপাল। প্রত্যেকেরই ‘লুক’ সাড়া ফেলেছে। ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় রয়েছেন সারা অর্জুন। ২৮০ কোটি টাকার বাজেটে তৈরি হয়েছে ‘ধুরন্ধর’। ছবিটি তৈরি হয়েছে সত্য ঘটনা অবলম্বনে। অন্তত তেমনটাই দাবি করা হয়েছে ছবির ট্রেলারে। মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তানে গিয়ে ভারতীয় কোনো সৈনিকের অভিযান উঠে আসবে সিনেমায়।
আনন্দবাজার, দ্য ডন ও ইন্ডিয়া টুডে অবলম্বনে