ভারতের বিনোদন অঙ্গন আর ক্রিকেটাঙ্গনের মধ্যে আগে থেকে অন্য রকম একটা সম্পর্ক রয়েছে। ক্রিকেটারদের জীবনসঙ্গী হিসেবে পছন্দের তালিকায় যেন এগিয়ে থাকেন অভিনেত্রীরাই। তেমনই ১৯৬৮ সালে ভারতীয় বাঙালি অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন ক্রিকেটার নবাব মনসুর আলী খান পতৌদি। আর বিয়ের আগের এই জুটির প্রেমকাহিনি শোনালেন শর্মিলা ঠাকুর।
সেদিন ছিল ফ্রান্সের জাতীয় উৎসব। পুরো প্যারিস তখন উৎসবের আনন্দে মেতেছিল। সেখানে মনসুর আলীর সঙ্গে দেখা হয় শর্মিলা ঠাকুর। তাঁরা একে অপরকে আগে থেকেই চিনতেন। হঠাৎ হাঁটু গেড়ে বসে প্রেম নিবেদন করে বসেন মনসুর আলী। শর্মিলাকে বলেন, ‘আমাকে বিয়ে করবে?’ উৎসবের শহরে চারদিকে এত শব্দ হচ্ছিল যে মনসুর আলীর কথা শুনতে পাননি অভিনেত্রী। একই কথা আবার বলেন মনসুর।
বিশ্বের ‘রোমান্টিক’ শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম প্যারিস। আর এই শহরে কেউ যদি প্রপোজ করেন, তাঁকে কি ফিরিয়ে দেওয়া যায়? শর্মিলা ঠাকুরও ফিরেয়ে দেননি তাঁকে। শুধু প্রেমেই রাজি হননি, এরপর ১৯৬৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর রাজকীয়ভাবে গাঁটছড়া বাঁধেন মনসুর আলীর সঙ্গে। আগে থেকেই ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল শর্মিলা ঠাকুরের। তাঁর মা-বাবা ক্রিকেট পছন্দ করতেন এবং তিনিও ছিলেন ক্রিকেটের ভক্ত। তখনকার ভারতীয় জাতীয় দলের ক্রিকেটার এম এল জয়সিং ছিলেন তাঁর পছন্দের খেলোয়াড়।
মনসুর আলীর সঙ্গে শর্মিলা ঠাকুরের পরিচয় হয় কলকাতায়। ব্রিটিশ উচ্চারণে ইংরেজি বলতেন মনসুর, তাই তাঁর ইংরেজি ভালো বুঝতে পারতেন না শর্মিলা। তখনই হয়তো শর্মিলাকে মনে ধরেছে মনসুর আলীর। সে সময় শর্মিলার মনে প্রেম না জাগলেও তৈরি হয়েছিল তাঁর প্রতি বিশ্বাস। মনসুর নিজে কৌতুক বলে নিজেই হাসতেন। তাঁর এই সরলতা দেখে তিনি ধরেই নিয়েছিলেন, মনসুর তাঁকে কোনো দিন কষ্ট দেবেন না। এই বিশ্বাস আর ভরসাই তাঁকে আস্তে আস্তে অগ্রসর করেছে ভালোবাসার দিকে।
আর যেদিন মনসুর আলী প্রেম নিবেদন করলেন, সেদিন তিনি আর দেরি করলেন না। জানিয়ে দিলেন তাঁর মনের মধ্যে এত দিন ধরে পুষে রাখা অব্যক্ত কথা। সম্প্রতি কপিল শর্মা শোতে উপস্থিত হয়ে তাঁর এই প্রেমের গল্প শোনালেন শর্মিলা ঠাকুর।
কয়েক বছর ধরে অভিনেত্রীদের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন একাধিক ক্রিকেটার। বর্তমানের কোহলি-আনুশকা জুটির মতো তখনো চর্চিত ছিল মনসুর-শর্মিলা জুটি। দীর্ঘদিন তাঁরা একসঙ্গে সংসার করার পর ২০১১ সালে মারা যান মনসুর।
সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে ১৯৫৯ সালে অভিনয়ের জগতে পা রাখেন শর্মিলা ঠাকুর। ‘অপুর সংসার’ সিনেমায় অভিনয় করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন তিনি। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি।
‘কাশ্মীর কী কলি’র মধ্য দিয়ে বলিউডেও নিজের জায়গা পাকা করে নেন তিনি। এরপর একে একে অভিনয় করেন ‘অনুপমা’, ‘অ্যান ইভিনিং ইন প্যারিস’, ‘আরাধনা’, ‘দাগ’, ‘চুপকে চুপকে’, ইত্যাদির মতো সুপারহিট সিনেমায়। মধ্যে অভিনয় থেকে বিরতি নিলেও আবার অভিনয়ে ফিরে এসেছেন ৭৮ বছর বয়সী এই অভিনেত্রী।