যে বই পড়ে ধূমপান ছেড়েছিলেন হৃতিক

হৃতিক রোশন। এএনআই

বলিউডের সবচেয়ে ফিট নায়কদের মধ্যে তিনি অন্যতম। কিন্তু জানেন কি, ছোটবেলা থেকেই শারীরিক নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। বলিউড তারকা হৃতিক রোশনের কথায় বলছি। ছোটবেলায় ছিল উচ্চারণগত জড়তা। কথা সাজিয়ে অনর্গল বলতে পারতেন না। ভারতীয় গণমাধ্যমকে অভিনেতা জানিয়েছিলেন, ‘স্কুলে যখন মৌখিক পরীক্ষা হতো, আমি কামাই করতাম। অসুস্থ হয়ে পড়তাম। হাত ভেঙে বসতাম বা পেশির চোট লাগত।’ এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে স্পিচ থেরাপিস্টের শরণাপন্নও হতে হয়েছিল তাঁকে।

২১ বছর বয়সে হৃতিক আক্রান্ত হন স্কোলিওসিস নামের এক বিরল রোগে, যা মূলত মেরুদণ্ড বেঁকে যাওয়া। এই সময়ে হুইলচেয়ারে বসে কাটানোর মতো পরিস্থিতিও তৈরি হয়। পাশাপাশি এই আশঙ্কাও তৈরি হয়েছিল যে অভিনয়কে পেশা হিসেবে হয়তো তিনি আর  গ্রহণ করতে পারবেন না! কিন্তু সব প্রতিবন্ধকতা পেছন ফেলে ক্রমে এগিয়েছেন তিনি।

‘কাহো না... পেয়ার হ্যায়’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

হৃতিকের প্রথম সিনেমা ‘কাহো না পেয়ার হ্যায়’। ২০০০ সালের ১৪ জানুয়ারি মুক্তি পায়। তাঁর বিপরীতে এই সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন আমিশা প্যাটেল। হৃতিক-আমিশার এই ছবি আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। অনবদ্য অভিনয়ের জন্য সেরা অভিনেতা ও সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জয় করেছিলেন হৃতিক। ২০০৩ সালে লিমকা বুক অব রেকর্ডসেও স্থান করে নিয়েছিল ছবিটি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ক্রমে এগিয়েছেন তিনি। দর্শকদের উপহার দিয়েছেন ‘কোই মিল গয়া’,‘ কৃষ’, ‘ধুম ২’-এর মতো জনপ্রিয় সব ছবি। ‘ওয়ার’, ‘ফাইটার’, ‘কৃষ থ্রি’, ‘ব্যাং ব্যাং’, ‘সুপার থার্টি’, ‘অগ্নিপথ’, ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’র বক্স অফিস কালেকশন ঈর্ষণীয়।

হৃতিকের সফল ছবির তালিকা যেমন দীর্ঘ, ব্যর্থ ছবির তালিকাও একেবারে ছোট নয়। ‘না তুম জানো না হাম’, ‘কাইটস’, ‘মহেঞ্জোদারো’, ‘কাবিল’ বক্স অফিসে অর্থ তুলে আনতে না পারলেও দর্শকমত এই যে হৃতিক হৃদয় উজাড় করে অভিনয় করেছেন। অভিনয়ের পাশাপাশি সহকারী পরিচালক হিসেবেও কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। অর্ধযুগের বেশি সময় সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। ভারতীয় গণমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছিলেন, এই সময়ে সেটে ঝাড়ু দেওয়াসহ সব কাজই করতেন।

হৃতিক রোশন। এএফপি

সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন দাতব্য কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন হৃতিক। হাসপাতালে রক্তদানের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করে তিনি জানিয়েছিলেন, ‘আমাকে বলা হয়েছে যে আমার রক্তের গ্রুপ বি নেগেটিভ পাওয়া যায় না বললেই চলে। হাসপাতালে প্রায়ই এই গ্রুপের চাহিদা পড়ে। খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্লাডব্যাংকের ক্ষুদ্র অংশগ্রহণকারী হলাম।’ পাশাপাশি ভক্তদেরও রক্তদানের জন্য উৎসাহিত করেছিলেন তিনি।

সব সময় স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে অভ্যস্ত হৃতিক। অ্যালেন কারের ‘ইজি ওয়ে তো স্টপ স্মোকিং’ বই পড়ে ধূমপান ছেড়ে ছিলেন তিনি। স্বাস্থ্৵সচেতন হলে কী হবে? ২০১৩ সালে আবারও শারীরিক প্রতিবন্ধকতা পথ আটকে দেয় তাঁর। মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধে। অস্ত্রোপচার করাতে হয়। চিকিৎসকের বক্তব্য ছিল, সেরে ওঠা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। অস্ত্রোপচারও বেশ জটিল। এমনকি, রয়েছে মৃত্যুর ঝুঁকি। এই পথও পাড়ি দিয়েছেন তিনি। ফিরেছেন অভিনয়ে। ২০১৯ সালে তাঁর ‘ওয়ার’ সিনেমা প্রশংসা কুড়িয়েছিল। ভারতীয় সেনাসদস্য কবির চরিত্রে অভিনয় করে নন্দিত হয়েছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে খালিদ চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন টাইগার শ্রফ। দুজনের যুগলবন্দী দর্শককে আকর্ষণ করেছিল। এর  প্রায় ছয় বছর পর সিনেমাটির দ্বিতীয় কিস্তি আসতে চলেছে।

আরও পড়ুন

১৯৭৪ সালের ১০ জানুয়ারি হৃতিক রোশনের জন্ম। আজ তাঁর ৫১তম জন্মদিন। বাবা চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক রাকেশ রোশন ও মা পিঙ্কি রোশন। তাঁর চাচা সংগীত পরিচালক রাজেশ রোশন। নানা প্রযোজক এবং নির্মাতা জেওম প্রকাশ। এ ছাড়া পরিবারের অন্যরাও বিনোদনজগতে কাজ করেন।