এই সিনেমাগুলো নিয়ে ভারতে এত বিতর্ক যে কারণে

অবস্থা দেখে মনে হয়, দর্শক যেন আতশি কাচ নিয়ে বসেই থাকেন। কোনো সিনেমা মুক্তি তো দূর, টিজার বা স্রেফ পোস্টার প্রকাশের পরই শুরু হয় বিতর্ক। সিনেমাটি কী নিয়ে, পুরো সিনেমায় পরিচালক কী দেখিয়েছেন—সেটা না জেনেই অনেকে জড়িয়ে পড়েন বিতর্কে। কোনো সিনেমার বিরুদ্ধে মামলাও হয়। মুক্তির পর কোনো সংলাপ বা দৃশ্য পছন্দ না হলে তো কথাই নেই। ‘বয়কট’ ট্রেন্ড শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। চলতি বছর ভারতে মুক্তি পাওয়া বা মুক্তির অপেক্ষায় থাকা পাঁচ সিনেমা নিয়ে বিতর্কের কারণ জেনে নেওয়া যাক।

আদিপুরুষ
বিতর্কের ঝড় মাথায় নিয়েই গত ১৬ জুন মুক্তি পায় ‘আদিপুরুষ’। এরপরই নতুন করে আইনি ঝামেলায় জড়ায় সিনেমাটি। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে দিল্লি হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেন হিন্দু সেনা সংগঠনের সভাপতি বিষ্ণু গুপ্ত। তখন অভিযোগে বলা হয়েছে, সিনেমায় বিভিন্ন স্থানে দেবতাদের ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

‘আদিপুরুষ’ নিয়ে ভারত ও ভারতের বাইরে প্রবল বিতর্ক হয়
কোলাজ

এগুলো এই সম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। আর এই সিনেমায় তথ্য বিকৃত করা হয়েছে। এ ছাড়া যেসব জায়গায় দেবতাদের চরিত্রগুলো বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, সেসব জায়গা কেটে ফেলার দাবি করেছেন হিন্দু সেনা সংগঠনের নেতারা। এর আগে সিনেমার পোস্টার প্রকাশ্যে আসার পর একই অভিযোগ এনেছিলেন মুম্বাইয়ের বাসিন্দা সঞ্জয় দীননাথ তিওয়ারি। এ ছাড়া সংলাপ নিয়ে আপত্তি তুলে ছবিটিকে নিষিদ্ধ করে নেপাল। শুরুতে মোটামুটি ভালো ব্যবসা করলেও বিতর্ক শুরুর পর ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। এত বিতর্ক হলেও ছবির প্রধান দুই পাত্রপাত্রী প্রভাস ও কৃতি শ্যানন মুখ খোলেননি।

মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে
চলতি বছরের মার্চে মুক্তি পায় রানী মুখার্জি অভিনীত ছবিটি। ছবিটি তৈরি হয় সত্য ঘটনা অবলম্বনে। এক নরওয়েপ্রবাসী ভারতীয় সাগরিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি তাঁর সন্তানদের সঠিকভাবে দেখাশোনা করেন না। সেই কারণেই সাগরিকার সন্তান দেখভালে আপত্তি তুলেছিল নরওয়ে সরকার।

‘মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে’ ছবির পোস্টার
আইএমডিবি থেকে নেওয়া

সন্তানের কাছ থেকে সাগরিকাকে আলাদা করা হয়। পরে শুরু হয় নরওয়ে সরকারের সঙ্গে আইনি লড়াই। এই ঘটনা নিয়ে নির্মিত ছবিতে গল্পের প্রয়োজনে বেশ কিছু বিষয় অদলবদল করা হয়েছে। ভারতে মুক্তির পর ছবিটি দেখে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখায় নরওয়ে। ভারতে নরওয়ের রাষ্ট্রদূত ছবিটিতে দেখার পর টুইট করেন, ছবিতে তাঁর দেশের পারিবারিক ধ্যানধারণা নিয়ে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে।

ওপেনহাইমার
ক্রিস্টোফার নোলানের সর্বশেষ ছবি ‘ওপেনহাইমার’ ভারতে ভালো ব্যবসা করলেও ছবিটির একটি দৃশ্য নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক তৈরি হয়। দৃশ্যটিতে যৌনসঙ্গমের সময় গীতা পাঠ করতে দেখা গেছে সিনেমার অভিনেতাকে।

‘ওপেনহাইমার’ সিনেমার দৃশ্য। আইএমডিবি

ছবির শুরুর দিকেই একটি দৃশ্য রয়েছে, যেখানে রবার্ট ওপেনহাইমারকে (কিলিয়ান মার্ফি) দেখা গিয়েছে তাঁর প্রেমিকা জিন ট্যাটলকের (ফ্লোরেন্স পিউ) সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতে। বইয়ের তাক থেকে পুরোনো বই বের করে আনেন জিন। পাতা খুলে দেবনাগরী হরফে লেখা শ্রীমদ্ভগবদ্গীতার শ্লোক পাঠ করার নির্দেশ দেন ওপেনহাইমারকে। তা মেনে নেন নায়ক। এটা নিয়েই হিন্দুত্ববাদী বেশ কয়েকটি সংগঠন আপত্তি তুলেছে।

ওএমজি২
২০১২ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘ওএমজি: ওহ মাই গড’। সেই ছবির সিকুয়েল ‘ওএমজি২’। আগামী ১১ আগস্ট মুক্তি পাওয়ার কথা অক্ষয়ের ছবির। এর আগেই একের পর এক বাধা ‘ওএমজি২’-এর সামনে। ভারতের সেন্সর বোর্ড ছবিটির ২০টি দৃশ্যে কাঁচি চালিয়েছে তা-ই নয়, ছবিটিকে ‘এ’। অর্থাৎ, প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রেটিংও দিয়েছে। ‘আদিপুরুষ’ নিয়ে অভিজ্ঞতার পর আর তার পুনরাবৃত্তি চায়নি সেন্সর বোর্ড। তাই ‘ওএমজি ২’-এর মতো একটি ছবিকে ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতার পথে হেঁটেছে বোর্ড, জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র।

‘ওএমজি২’ ছবির পোস্টার। আইএমডিবি

অন্য একটি সূত্র ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, কাঁচি চালানোর কারণে সিনেমাটির সৌন্দর্য অনেকটাই নষ্ট হবে। এ নিয়ে নির্মাতারা অসন্তুষ্ট। এ ছাড়া ছবিটি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রেটিং পাওয়া নিয়েও খুশি নন তাঁরা। তবে বিষয়টি নিয়ে নির্মাতাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।