ভুল চিকিৎসা, প্রেমে প্রতারিত, সেই আলোচিত নায়িকার করুণ মৃত্যু

ভিজি আশ্বত। আইএমডিবি

তাঁর নাম হয়তো আজকের প্রজন্মের কাছে খুব পরিচিত নয়; কিন্তু একসময় তিনি ছিলেন মোহনলাল, মাম্মুট্টি, রজনীকান্তদের সহ-অভিনেত্রী—দক্ষিণ ভারতের আলোচিত অভিনেত্রী। ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে প্রায় ৪০টি সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। মালয়ালম, তামিল ও তেলেগু—তিন ভাষার সিনেমায় কাজ করেছেন সাফল্যের সঙ্গে; কিন্তু এক ব্যর্থ প্রেম তাঁর জীবনকে থামিয়ে দেয় অকালেই।

খ্যাতির শুরুর দিনগুলো
১৯৬৬ সালে জন্ম নেওয়া ভিজি আশ্বত ১৬ বছর বয়সে চলচ্চিত্রে পা রাখেন লেখক-পরিচালক গঙ্গাই আমারনের ‘কোজি কুভুথু’ (১৯৮২) সিনেমার মাধ্যমে। প্রভু, সুরেশ ও বিখ্যাত অভিনেত্রী সিল্ক স্মিতার সঙ্গে অভিনীত সেই সিনেমা ছিল হিট। সেখান থেকেই শুরু হয় ভিজির তারকাযাত্রা। পরের বছরই তিনি একাধিক ছবিতে অভিনয় করেন—বিজয়কান্তের ‘সাচ্চি’ ও ‘ডাওরি কল্যানাম’, কার্তিকের ‘ধুরম আধিঘামিল্লাই’—সব কটিই বাণিজ্যিকভাবে সফল।

এরপর  ভিজি দক্ষিণ ভারতের বড় তারকাদের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন। মোহনলালের সঙ্গে ‘উয়ারাঙ্গালিল’ ও ‘নায়কান’, মাম্মুট্টির সঙ্গে ‘অননুম মিনদাথা ভার্যা’ ও ‘সায়ম সন্ধ্যা’, রজনীকান্তের সঙ্গে ‘মিস্টার ভারত’ আর নন্দমুরি বালকৃষ্ণের সঙ্গে ‘সহাসামে জীবিতম’—সব কটি ছবিতেই ভিজির পারফরম্যান্স প্রশংসিত হয়। বিজয়কান্তের সঙ্গে তিনি আবারও জুটি বাঁধেন ‘নল্লা নাল’ ও ‘ইট্টি’ ছবিতে।

ভিজি আশ্বত। আইএমডিবি

ভিজি আশ্বত অভিনয় করেন মালয়ালমের প্রথম থ্রিডি চলচ্চিত্র ‘পৌর্ণমি রাভিল’-এ, যার পরিচালক ছিলেন এ ভিনসেন্ট; কিন্তু ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে ধীরে ধীরে তাঁর ছবির প্রস্তাব কমতে থাকে। তখন তিনি অতিথি চরিত্রে বা গানে উপস্থিত হয়ে টিকে থাকার চেষ্টা করেন।

চিকিৎসাবিভ্রাট
১৯৯০-এর দশকের মাঝামাঝি এক ব্যর্থ অস্ত্রোপচার তাঁর জীবন ওলট–পালট করে দেয়। পিঠের ব্যথার জন্য চেন্নাইয়ের এক বেসরকারি হাসপাতালে মেরুদণ্ডে অস্ত্রোপচার করান ভিজি; কিন্তু সেই অপারেশনের পর ১৩ দিন ধরে জ্বর ও সংক্রমণে ভোগেন তিনি। ভুল চিকিৎসা হয়েছিল অভিনেত্রীর। এরপর পরপর দুটি সার্জারি হয়। এরপর তিনি প্রায় তিন বছর শয্যাশায়ী ছিলেন।
অবশেষে আবার অস্ত্রোপচারের পর হাঁটতে পারলেও চলচ্চিত্রজগৎ তাঁকে তখন অনেকটাই ভুলে গেছে। একমাত্র বিজয়কান্তই তাঁর পাশে দাঁড়ান। ‘ক্যাপ্টেন’ তারকা তাঁকে নিজের ছবি ‘সিম্মাসনম’-এ অভিনয়ের সুযোগ দেন। এমনকি ভিজির বাবার অনুরোধে পরের সিনেমা ‘ভাঞ্চিনাথান’-এ তাঁকে নেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন; কিন্তু সে সুযোগ আর কাজে লাগাতে পারেননি ভিজি।

আরও পড়ুন

প্রেম ভঙ্গ ও মর্মান্তিক পরিণতি
২০০০ সালের ২৭ নভেম্বর, মাত্র ৩৪ বছর বয়সে চেন্নাইয়ের ফ্ল্যাটে আত্মহত্যা করেন ভিজি। তাঁর মৃত্যুর পেছনে কারণ হিসেবে উঠে আসে প্রেম ভঙ্গের বেদনা। মৃত্যুর আগে তিনি এক বন্ধুর কাছে একটি ভয়েস মেসেজ রেখে যান—যেখানে জানান, তাঁর প্রেমিক, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের পরিচালক এ আর রমেশ তাঁকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেছেন। রমেশ তখন বিবাহিত, ভিজিকে তিনি শুধু আশ্বাসই দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।

ভিজি আশ্বত। আইএমডিবি

ঘটনার পর রমেশ পালিয়ে কোয়েম্বাটুরে যান, পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে তাঁর স্ত্রী এ আর সুমতী ও বন্ধু চিন্নাসামিকেও অভিযুক্ত করা হয়। আদালতে আইনজীবী দাবি করেন, মৃত্যুর তিন দিন আগে এক অনুষ্ঠানে রমেশের সঙ্গে ভিজির তর্ক-বিতর্ক হয় এবং রমেশ তাঁকে অপমানসূচক কথা বলেন, যা সহ্য করতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেন।
তবে ২০০৫ সালের জুলাইয়ে চেন্নাই আদালত তিনজনকেই খালাস দেয়। আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল—ভিজি ছিলেন ‘অতি সংবেদনশীল নারী, জীবনের ধাক্কা সহ্য করতে পারেননি।’

এক অসমাপ্ত জীবন
১৮ বছরের ক্যারিয়ারে ভিজি প্রায় ৪০টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। একসময় তিনি ছিলেন দক্ষিণের অন্যতম ব্যস্ত অভিনেত্রী—রজনীকান্ত থেকে মাম্মুট্টি, বিজয়কান্ত থেকে মোহনলাল, সবার সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন সমান দক্ষতায়।
কিন্তু ভাগ্য তাঁর সঙ্গে ছিল নির্মম। চিকিৎসাবিভ্রাট, ভুলে যাওয়া আর শেষে এক ব্যর্থ প্রেম—সব মিলিয়ে তাঁর জীবন যেন হয়ে উঠেছিল এক অসমাপ্ত সিনেমা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস অবলম্বনে