‘কেউ যখন শুধু ছোট করে দেখানোর জন্যই সমালোচনা করেন, সেটাকে আমি মোটেও পাত্তা দিই না’

অদিতি রাও হায়দারি
এএনআই

বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানির সিরিজ ‘জুবিলি’ মুক্তির পর খ্যাতির তুঙ্গে অদিতি রাও হায়দারি। সিরিজের সাফল্য নিয়ে অদিতির ভার্চ্যুয়াল সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি।

মণিরত্নম, সঞ্জয় লীলা বানসালি ও ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবির ভক্ত অদিতি। তাঁদের সিনেমা দেখে এই নায়িকার বড় হয়ে ওঠা। এই তিন পরিচালকের ছবির নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তিনি। ধীরে ধীরে অদিতির অনেক ইচ্ছাই পূরণ হচ্ছে। এখন বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানির ‘জুবিলি’র সাফল্য উপভোগ করছেন তিনি। সফলতার স্বাদ ভাগ করে নেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির সঙ্গে, ‘আমি সব সময় সাফল্য সবার সঙ্গে ভাগ করে নিতে ভালোবাসি। এভাবেই আমি সফলতা উদ্‌যাপন করি। দর্শকের ভালোবাসা আমাকে তারকা বানিয়েছে। একটি প্রকল্পের সফলতার পেছনে গোটা দলের অবদান থাকে। তাই এই সফলতার দাবিদার সবাই।’

আরও পড়ুন

২০১৬ সালে মণিরত্নমের ছবির নায়িকা হয়েছিলেন অদিতি। জীবনের প্রথম ইচ্ছেপূরণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি শুধু ভালো পরিচালকদের দুনিয়ার অংশ হতে চেয়েছিলাম, তা সে যেকোনো ভাষার হতে পারে। স্বপ্ন দেখতাম মণিরত্নম, সঞ্জয় লীলা বানসালি, ঋতুপর্ণ ঘোষের ছবিতে কাজ করব। আমি ভাষা নিয়ে কখনো কোনো ভেদাভেদ করিনি। আমার কাছে সিনেমাই সবকিছু।’

ইদানীং দক্ষিণি নায়িকাদের বলিউডে কাজ করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। অথচ দীর্ঘ সময় ধরে অদিতি বলিউড ও দক্ষিণি ছবির দুনিয়ায় সমতা বজায় রেখে কাজ করছেন।

‘জুবিলি’র প্রচারে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় ও অদিতি রাও হায়দারি
এএফপি

তিনি কি বরাবরই ‘প্যান ইন্ডিয়া’ নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন? ‘না, এ রকম কোনো স্বপ্ন কোনো দিনই আমি দেখিনি। আমি মনে করি, সিনেমা এক অনুভূতিমাত্র। আর অনুভূতির কোনো সীমানা হয় না। শুধু চেয়েছি মানুষের হৃদয়ের নায়িকা হতে’, বলেন অদিতি। এই অভিনেত্রীর মতে, একটা ছবি মুক্তির পর দর্শকের ভালোবাসাই ছবিটিকে ‘প্যান ইন্ডিয়া’ করে তোলে। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, একটা ছবি যতসংখ্যক মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারবে, যত বেশি ভালোবাসা পাবে, সেটাই ‘প্যান ইন্ডিয়া’ ছবি। সিনেমা যেকোনো ভাষার হতে পারে, তার আত্মাকে যেন সারা বিশ্বের মানুষ অনুভব করতে পারেন।

আরও পড়ুন

দক্ষিণ বনাম বলিউড বিতর্ক প্রসঙ্গে অদিতি সোজাসাপটা বলেন, ‘আমার কাছে একজন মানুষই সবকিছু। তার ভাষা, বর্ণ প্রাধান্য পায় না। একটা সিনেমার কাহিনি, সেট, সংগীত, অভিনয় সবকিছু মানুষেরই সৃষ্টি। তাই বলিউড বা দক্ষিণ নিয়ে ভেদাভেদ করার কোনো মানেই হয় না। একটা ছবি নির্মাণের পেছনে মানুষের আবেগ আর সততা কতখানি আছে, সেটাই দেখা উচিত।’

ছায়াছবির জগতে রাজনীতি নতুন কথা নয়। অদিতিকে কি কখনো এর শিকার হতে হয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, ‘রাজনীতি কোথায় নেই? সব ইন্ডাস্ট্রিতেই আছে। অভিনেতা হিসেবে রোজ সংগ্রাম করতে হয়। আর আমার সংগ্রাম কখনোই বিশ্ব সিনেমার চেয়ে বড় নয়।’

অদিতি রাও হায়দারি
ইনস্টাগ্রাম

এখন প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন অদিতি। কিন্তু সমালোচনাকে কীভাবে নেন তিনি? একটু হেসে বলেন, ‘উন্নতির জন্য কেউ যখন সমালোচনা করেন, ভালোভাবে গ্রহণ করি। যাঁদের সম্মান করি, তাঁদের সব সমালোচনা মাথা পেতে নিই। কিন্তু কেউ যখন শুধু ছোট করে দেখানোর জন্যই সমালোচনা করেন, সেটাকে আমি মোটেও পাত্তা দিই না।’

‘জুবিলি’ ওয়েব সিরিজে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন অদিতি। প্রসেনজিতের প্রসঙ্গ উঠতেই উচ্ছ্বাসের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘বুম্বাদা তো কিংবদন্তি। আমি প্রথম তাঁকে “চোখের বালি” ছবিতে দেখেছিলাম। তাঁর “জ্যেষ্ঠপুত্র” দেখেছি। বুম্বাদা আমাকে “অটোগ্রাফ” দেখার কথা বলেছিলেন। সেই ছবিও দেখেছি। এত বড় তারকা হওয়া সত্ত্বেও তিনি অত্যন্ত বিনয়ী, অমায়িক। সবাইকে কী সুন্দরভাবে সহজ করে দিতেন! আমাকেও একই রকমভাবে সহজ করে দিয়েছিলেন। সেটে তিনি শিশুর মতো থাকতেন।’

অদিতি রাও হায়দারি
ইনস্টাগ্রাম

ভার্চ্যুয়াল আড্ডার শেষ প্রান্তে অদিতি নিজের ১২ বছরের ভ্রমণের প্রসঙ্গে বলেন, ‘বাধ্য ছাত্রীর মতো এখনো শিখে চলেছি। এই ভ্রমণে বুঝেছি, আমি পরিচালকের অত্যন্ত বাধ্য অভিনেত্রী।’

অদিতি রাও হায়দারিকে আগামী দিনে সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘হীরামন্ডি’, বিজয় সেতুপতি ও অরবিন্দ স্বামীর সঙ্গে নির্বাক ছবি ‘গান্ধী টকস’-এ দেখা যাবে।