১০০ ছবির প্রতিশ্রুতি, এরপর ২০ বছর দেখাই হয়নি
অভিনেতা হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিলেন ১৯৯১ সালে। কিন্তু নব্বই দশকে একের পর এক ছবি ফ্লপ হওয়ায় প্রযোজক-পরিচালকেরা মুখ ফিরিয়ে নেন, কেউ কেউ খোলাখুলি বিদ্রূপও করেছিলেন। আজ সেই অভিনেতাই বলিউডের অন্যতম সফল অভিনেতা। তিনি আর কেউ নন, অক্ষয় কুমার।
অক্ষয় কুমারের ক্যারিয়ার যেন এক রোলার কোস্টার। তাঁর প্রথম ছবি ‘সওগন্ধ’ (১৯৯১) তেমন সাড়া ফেলেনি, কিন্তু পরের বছর ‘খিলাড়ি’ তাঁকে রাতারাতি তারকাখ্যাতি এনে দেয়। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত ‘খিলাড়িয়োঁ কা খিলাড়ি’ ও ‘সংঘর্ষ’-এর মতো কিছু ছবিতে সাফল্য এলেও অধিকাংশ ছবিই বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। একপর্যায়ে তাঁকে ‘অযোগ্য’, ‘ফ্লপ মেশিন’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে প্রায় অচ্ছুত করে দিয়েছিলেন ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই।
সে সময়েই পরিচালকের ভূমিকায় নামেন সুনীল দর্শন। তখন তিনি ‘জানওয়ার’ নামে একটি ছবি করতে চাইছিলেন সানি দেওলকে নিয়ে। কিন্তু ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এরপর প্রস্তাব যায় অজয় দেবগনের কাছে। ছবিটি করার ব্যাপারে আগ্রহীও ছিলেন অজয়। ঠিক তখনই হঠাৎ হাজির অক্ষয় কুমার।
‘১৩-১৪টা ফ্লপের পর ওর হাতে কিছুই ছিল না’
সম্প্রতি বলিউড বাবলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সুনীল দর্শন বলেন, ‘একটা সময় অক্ষয় ছবি পাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিল। ১৩-১৪টা ফ্লপ চলছিল টানা। তখন কেউ ওকে কাছে টানতে চাইত না, বরং দূরে ঠেলেই দিত।’
সেই কঠিন সময়েই ‘জানওয়ার’-এর জন্য সুনীল দর্শনের দরজায় কড়া নাড়েন অক্ষয়। পরিচালকের ভাষায়, ‘আমি ভাবলাম, কী সুদর্শন ছেলে! কী বিনয়! একেবারে পাঞ্জাবি ছেলের মতো নিরহংকার। তার ওপর ওর একটা বড় প্লাস পয়েন্ট ছিল, ডিসিপ্লিন। কিন্তু সমস্যা ছিল, ও বাণিজ্যিকভাবে তখনো ঠিক সফল নয়। তবু আমি ঝুঁকি নিয়েছিলাম।’
হিট হওয়ার পরও তিক্ততার শুরু
‘জানওয়ার’ হিট করতেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। যে পরিচালক-প্রযোজকেরা একসময় ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁরা ফিরতে থাকেন অক্ষয়ের দিকে। এরপর সুনীল দর্শনের সঙ্গে আরও ছবি করেন অক্ষয়—‘এক রিশতা’, ‘তালাশ’, ‘দোস্তি’, ‘মেরে জীবনের সাথি’, ‘আন্দাজ’সহ মোট সাতটি ছবি। এর মধ্যে ছয়টি পরিচালনা করেছিলেন সুনীল নিজে। তবে সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতাও ছিল।
সুনীল বলেন, ‘আমরা একসঙ্গে সাতটা ছবি করলাম, আর কাকতালীয়ভাবে শেষ ছবিটার নামই ছিল “দোস্তি”। টানা সাত বছর অক্ষয় এই অফিস থেকেই কাজ করত, প্রতিদিন আসত, এমনকি শুটিং না থাকলেও। আমি প্রথম থেকেই ওর মঙ্গল চেয়েছি। ও নিজেই বলেছিল, “আপনি ছাড়া কেউ পাশে ছিল না আমার।” পরে ও যখন নিজের শর্তে অন্যদের সঙ্গে কাজ করতে লাগল, তখন আমি খুশিই হয়েছিলাম।’
‘১০০টা ছবি করব আপনার সঙ্গে’
‘জানওয়ার’-এর সাফল্যের পর একদিন অক্ষয় নিজেই ডেকে নিয়ে গিয়েছিলেন সুনীল দর্শনকে। গাড়ি চালিয়ে নিয়ে যান এক নির্মীয়মাণ বিল্ডিংয়ে। সেখানে বসে বলেন, ‘স্যার, শুনেছি আপনি নতুন ছবির জন্য নতুন কোনো হিরো খুঁজছেন। দয়া করে অন্য কাউকে সাইন করবেন না। এটা আমার ক্যারিয়ারে প্রভাব ফেলবে।’ এরপর পরিচালকের হাত ধরে বলেন, ‘সুনীলজি, আমি আপনার সঙ্গে ১০০টা ছবি করব, প্রমিজ!’
কিন্তু সপ্তম ছবির সময় থেকেই সুনীল টের পান অক্ষয়ের মধ্যে কিছু একটা বদল এসেছে। বলেন, ‘ওর আচরণে পরিবর্তন স্পষ্ট ছিল। তখনই বুঝেছিলাম, সময় এসেছে সরে যাওয়ার।’
‘২০ বছর ধরে দেখা হয়নি’
২০০৫ সালের পর আর দেখা হয়নি দুজনের। সুনীল দর্শন জানান, ‘সর্বশেষ ২০০৫ সালে দেখা হয়েছিল। তারপর ও হয়তো এক-দুবার জন্মদিনে শুভেচ্ছা পাঠিয়েছে। আমি ওকে একটা কথাই বলেছিলাম, “তুমি ক্যারিয়ার ভালোভাবে চালিয়ে নাও, সেটাই আমার চাওয়া।” অমিতাভ বচ্চনও তো বহু ছবি করেছিলেন প্রকাশ মেহরার সঙ্গে, কিন্তু একটা সময়ে পথ আলাদা হয়ে গিয়েছিল। এটা ইন্ডাস্ট্রিতে হয়ই।’
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস