ওডিশায় যাওয়ার আগে ঢাকায় ‘চিত্রাঙ্গদা’
ভারতের রাষ্ট্রীয় নাট্যশিক্ষা প্রতিষ্ঠান দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা আয়োজিত ‘ভারত রঙ্গ মহোৎসব’-এর ২৩তম আসর চলছে। নাট্যসমালোচকেরা মনে করেন, এত বড় নাট্য উৎসব শুধু ভারতে নয়, এশিয়া মহাদেশেই আর নেই। এমন উৎসবে যোগদান ও পারফর্ম করার জন্য যেকোনো নাট্যদলই যে মুখিয়ে থাকে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর এবারের উৎসবে বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ পাঁচটি দল যোগ দিচ্ছে।
এ মহোৎসবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্বকারী দলের অংশগ্রহণে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে চলছে ৫ দিনব্যাপী ‘ভাষার সঙ্গ, নাট্যরঙ্গ বাংলাদেশ উৎসব’। আগামীকাল সোমবার উৎসবের সমাপনী। এদিন সন্ধ্যা সাতটায় এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার মিলনায়তনে নাট্যসংগঠন স্বপ্নদলের দর্শকনন্দিত প্রযোজনা ‘চিত্রাঙ্গদা’র বিশেষ মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হবে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের চিরায়ত সৃষ্টি ‘চিত্রাঙ্গদা’র গবেষণাগার নাট্যরীতিতে নির্দেশনা দিয়েছেন জাহিদ রিপন। এর আগে ‘১৭তম ভারত রঙ্গ মহোৎসব ২০১৫’-তে যুদ্ধবিরোধী গবেষণাগার নাট্য ‘ত্রিংশ শতাব্দী’ মঞ্চায়ন করে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয় স্বপ্নদল।
রবীন্দ্রনাথ মহাভারতের ‘চিত্রাঙ্গদা-উপাখ্যান’ অবলম্বনে ১৮৯২ সালে কাব্যনাট্যরপে এবং ১৯৩৬ সালে নৃত্যনাট্যরূপে ‘চিত্রাঙ্গদা’ রচনা করেন। স্বপ্নদলের ‘চিত্রাঙ্গদা’ প্রযোজনাটি নির্মিত হয়েছে ‘কাব্যনাট্য’ পাণ্ডুলিপি অবলম্বনে। এর নাট্যকাহিনিতে উপস্থাপিত হয়Ñঅর্জুন সত্যপালনের জন্য এক যুগ ব্রহ্মচর্যব্রত গ্রহণ করে মণিপুর বনে এসেছেন। মণিপুরের রাজকন্যা চিত্রাঙ্গদা অর্জুনের প্রেমে উদ্বেলিত হলেও অর্জুন রূপহীন চিত্রাঙ্গদাকে প্রত্যাখ্যান করেন।
অপমানিত চিত্রাঙ্গদা প্রেমের দেবতা মদন ও যৌবনের দেবতা বসন্তের সাহায্যে এক বছরের জন্য অপরূপ সুন্দরীতে রূপান্তরিত হন। এবার অর্জুন যথারীতি চিত্রাঙ্গদার প্রেমে পড়েন। কিন্তু অর্জুনকে লাভ করেও চিত্রাঙ্গদার অন্তর দ্বন্দ্বে ক্ষত-বিক্ষত হতে থাকে। অর্জুন প্রকৃতপক্ষে কাকে ভালোবাসেন, চিত্রাঙ্গদার বাহ্যিক রূপ নাকি তার প্রকৃত অস্তিত্বকে? এভাবে ‘চিত্রাঙ্গদা’ পৌরাণিক কাহিনির আড়ালে যেন একালেরই নর-নারীর মনোদৈহিক সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং পাশাপাশি পারস্পরিক সম্মানাবস্থানের প্রেরণারূপে উপস্থাপিত হয়। ‘চিত্রাঙ্গদা’ প্রযোজনাটি ২০১১ সালে সার্ধশত রবীন্দ্রবর্ষ উপলক্ষে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুদানে নির্মাণ করে স্বপ্নদল।
ইতিমধ্যে দেশ-বিদেশে প্রযোজনাটির ১০৪টি সফল মঞ্চায়ন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
‘চিত্রাঙ্গদা’ প্রযোজনার শিল্পীরা হলেন সোনালী, জুয়েনা, শিশির, শ্যামল, অর্ক, জেবু, সুমাইয়া, সামাদ, ঊষা, আলী, বিপুল, নিসর্গ, হাসান, সুকুমার, তুষার, হৃদয়, বিমল, রেহান, অনিন্দ্য, নিশক, সবুজ প্রমুখ। প্রযোজনাটির মঞ্চ ও আলোক পরিকল্পনা করেছেন ফজলে রাব্বি।
‘ভারত রঙ্গ মহোৎসব ২০২৪’-এ ১০ ফেব্রুয়ারি ওডিশার ভুবনেশ্বরে এবং ১২ ফেব্রুয়ারি এনএসডি, নয়াদিল্লিতে ‘চিত্রাঙ্গদা’র দুটি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ থেকে এতে আমন্ত্রিত এবং ‘ভাষার সঙ্গ, নাট্যরঙ্গ বাংলাদেশ উৎসব’–এ মঞ্চস্থ হয়েছে ম্যাড থেটারের ‘অ্যানা ফ্রাঙ্ক’, থিয়েটার ফ্যাক্টরির ‘আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে’, নাট্যম রেপার্টরির ‘দমের মাদার’ ও বটতলার ‘খনা’।