অমিতাভ ভাই আর নভেরার ওপর আস্থা আছে: মিতালি পারকিন্স

ডারবান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ প্রযোজনার ছবি ‘রিকশা গার্ল’। দক্ষিণ আফ্রিকায় উৎসবটির ৪২তম আসর বসছে এবার। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে ছবিটি প্রযোজনা করেছে। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে হতে যাচ্ছে ছবিটির আন্তর্জাতিক উদ্বোধনী প্রদর্শনী। ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন লেখিকা মিতালি পারকিন্সের কিশোর সাহিত্য ‘রিকশা গার্ল’কে বড় পর্দার জন্য তৈরি করেছেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী। ‘রিকশা গার্ল’ ছাড়া মিতালি বোস পারকিন্স ‘টাইগার বয়’, ‘ফরোয়ার্ড মি ব্যাক টু ইউ’, ‘ব্যাম্বু পিপল’, ‘মুনসুন সামার’সহ বেশ কিছু উপন্যাসের লেখক। ছবিটির বিষয়ে যোগাযোগ করা হয় তাঁর সঙ্গে। মিতালি জানালেন রিকশা গার্ল সিনেমাটি নিয়ে তাঁর যাত্রা, অভিজ্ঞতা আর প্রত্যাশার কথা—
মিতালি পারকিন্স
ফেসবুক

আমার বাবার ‘দেশ’ ছিল ফরিদপুর। মা বাংলাদেশেরই, কুমিল্লার মেয়ে। দেশভাগের সময় আমার মা–বাবা ভারতে চলে আসেন। মা–বাবার মুখে তাঁদের গ্রামের গল্প শুনে শুনেই আমার বড় হওয়া। আমিও বছর তিনেক বাংলাদেশে থেকেছি। তখন আমি বাংলাদেশের রিকশা পেইন্টিংয়ের প্রেমে পড়ি। জানতে পারি, ক্ষুদ্র ঋণ কর্মসূচির মাধ্যমে কীভাবে দেশের গ্রামের নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছে। সেখান থেকেই এমন একটা গল্প লেখার আইডিয়া মাথায় আসে। আমি বিশ্বকে বাংলাদেশের একটা মেয়ের সাহস আর প্রাণশক্তির গল্প জানাতে চেয়েছি।

মিতালি পারকিন্স ও রিকশা গার্ল সিনেমার পোস্টার
সংগৃহীত

মার্কিন প্রযোজক এরিক অ্যাডামস আমার বন্ধু। আবার এরিকের বন্ধু বাংলাদেশি নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী। আমার ‘রিকশা গার্ল’ বইটা এরিকের স্ত্রী পড়েছিল। ওর খুব ভালো লেগেছিল। গল্পটাকে সিনেমায় রূপ দেওয়ার ব্যাপারে সে-ই তাঁর প্রযোজক বর এরিককে বলে। এরিক রাজি হয়। সেখান থেকেই শুরু হলো বইটাকে বড় পর্দায় নিয়ে আসার কার্যক্রম। এরিকের মাধ্যমেই আমি অমিতাভ রেজা চৌধুরী আর এই ছবির মূল অভিনেত্রী নভেরা রহমানের সঙ্গে পরিচিত হলাম। আমি এই ছবির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নই। তবে নভেরার ভেতর আমি একজন নাইমাকে (‘রিকশা গার্ল’ সিনেমার মূল চরিত্র) দেখেছি। ও অসম্ভব মেধাবী, পড়াশোনা জানা, থিয়েটার করা শিল্পী। আমি ওদের ওপর বিশ্বাস রেখেছি।

রিকশা গার্ল সিনেমার বিহাইন্ড দ্য সিনে নভেরা রহমান ও অভিতাভ রেজা চৌধুরী
সংগৃহীত

আমি এই সিনেমার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলাম না। তবে আমার ও এই ছবির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব আর পরম বিশ্বাসের একটা সম্পর্ক রয়েছে। ২০১৭ সালে ৯০ বছর বয়সে আমার বাবা মারা যান। আমি জানি, অমিতাভ ভাই বোঝেন, আমি আমার বাবাকে কী প্রচণ্ড মিস করি। আমি জানি আমার কলমে, কল্পনায় বেড়ে ওঠা এই বাবা আর মেয়ের গল্পটা উনি যত্ন করেই বড় পর্দার জন্য বানিয়েছেন। ওনার হাতে এই বাবা–মেয়ের ভালোবাসার গল্প নিরাপদে বেড়ে উঠবে।

আমার বিশ্বাস, দর্শকেরা যাঁরা ছবিটি দেখবেন, নাইমার সাহস, কল্পনাশক্তি, সৃজনশীলতা আর প্রাণোচ্ছলতা বড় পর্দা থেকে চোখ হয়ে তাঁদের মন স্পর্শ করবে।


অনুলিখন: জিনাত শারমিন