‘আমার একটাই সমস্যা, আমি ইন্ডাস্ট্রির বাইরে থেকে এসেছি’

এত সফলতার মাঝেও এই লম্বা বিরতি কেন? প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধির সঙ্গে প্রাচী দেশাইয়ের এক সাক্ষাৎকারের শুরুতে উঠে এসেছিল এই প্রশ্ন। তার জবাবে প্রাচী বলেন, ‘বিরতি নেওয়ার কোনো ইচ্ছাই আমার ছিল না। কিন্তু একটা ভালো প্রজেক্টের অপেক্ষায় লম্বা ব্রেক হয়ে গেল। এরপর কোভিড–১৯ হানা দিল। লকডাউনের জন্য ঘরবন্দী হয়ে পড়ি। তবে আমি একলা থাকতে পছন্দ করি, তাই আমার কোনো সমস্যা হয়নি। অনলাইনে যোগব্যয়ামের ক্লাস করেছিলাম। মনোবিজ্ঞানের ওপর কিছু কোর্স করেছিলাম। তবে রান্না করা বা বেকিং করা আমি শিখিনি। এই করোনার সময় আমি উপলব্ধি করেছি যে জীবনে শত ব্যস্ততার মাঝে নিজের জন্য সময় বের করা খুব জরুরি।’

প্রাচী দেশাই
ইনস্টাগ্রাম

কাজের জগৎ থেকে দূরে থাকলে অনেক সময় একাকিত্ব মানুষকে ঘিরে ধরে। নানা মানসিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এ প্রসঙ্গ উঠতে তিনি বলেন, ‘আমার মনেও দ্বন্দ্ব ছিল। তবে সেটাকে মেনে নিয়ে আগে এগিয়ে গেছি। এই সময় আমি শুরুর দিনের কথা মনে করতাম। আমি প্রথম সুযোগ কীভাবে পেয়েছিলাম, তা মনে করতাম। ইন্ডাস্ট্রির বাইরে থেকে এসেও আজ যে জায়গায় আমি পৌঁছেছি, তার জন্য আমি সত্যি কৃতজ্ঞ।’

প্রাচী দেশাই
ইনস্টাগ্রাম
‘তবে আমি একলা থাকতে পছন্দ করি, তাই আমার কোনো সমস্যা হয়নি। অনলাইনে যোগব্যয়ামের ক্লাস করেছিলাম। মনোবিজ্ঞানের ওপর কিছু কোর্স করেছিলাম। এই করোনার সময় আমি উপলব্ধি করেছি যে জীবনে শত ব্যস্ততার মাঝে নিজের জন্য সময় বের করা খুব জরুরি।’

আবান ভারুচা দেওহান্স পরিচালিত ‘সাইলেন্স’ ছবিতে প্রাচী এক দাপুটে পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় আছেন। এই ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে তাঁর সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ কী ছিল, তিনি বলেন, ‘এত দিন পর্যন্ত পুলিশের যা ইমেজ ছিল, এখানে তা অনেকটাই অন্য রকম। সেটে নির্দেশক প্রথমেই বলেছিলেন যে এখানে আমাকে এক অন্য রূপ তুলে ধরতে হবে। আমার মুখে যেন নারীত্বর অভিব্যক্তি থাকে। আমি যেমন তেমনই যেন নিজেকে পর্দায় মেলে ধরি, এটা পরিচালক বলেছিলেন। আর তাই আমার জন্য কাজটা সহজ হয়ে গিয়েছিল। আর কোনো রকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি আমায় হতে হয়নি। আমার মতে, এক নারী পরিচালকের চিন্তাধারা ব্যতিক্রমী হয়। আর এই চরিত্রে আমি নিজেকে রিলেট করতে পারছিলাম।’

প্রাচী দেশাই
ইনস্টাগ্রাম

জাতীয় পুরস্কারজয়ী অভিনেতা মনোজ বাজপেয়ী এই ছবির মূল চরিত্রে আছেন। বলিউডের এই প্রভাবশালী অভিনেতার সঙ্গে কাজ করে দারুণ উচ্ছ্বসিত প্রাচী। একরাশ উচ্ছ্বাস নিয়ে তিনি বলেন, ‘সেটে আমি মনোজ স্যারের থেকে সব সময় কিছু না কিছু শিখতে থাকতাম। সত্যি বলতে, ওনার থেকে শেখার শেষ নেই। তবে পর্দার অন্তরালে মনোজ স্যার একদম অন্য রকম। সেটে উনি ভীষণ ঠাট্টা–তামাশা করতেন। আমাদের মজার মজার জোকস শোনাতেন।’

প্রাচী দেশাই
ইনস্টাগ্রাম
‘আমার এটাই সমস্যা, যেকোনো জিনিস ঠিক না লাগলে তা আমি মুখের ওপর বলে দিই। আর সেজন্য অনেকে আমাকে অপছন্দ করে। আমাকে পর্দায় কম দেখার আর একটা কারণ যে আমি ইন্ডাস্ট্রির বাইরে থেকে এসেছি।’
প্রাচী দেশাই

সোজা কথা সোজাভাবে বলতে ভালবাসেন প্রাচী। আর এই স্পষ্টবাদীতার জন্য তাঁর বন্ধুসংখ্যা নেহাতই কম। এমনকি কোনো বলিউডি পার্টিতে দেখা যায় না তাঁকে। আর এর জন্য তাঁর ক্যারিয়ার কি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, জবাবে প্রাচী বলেন, ‘যেকোনো জিনিস ঠিক না লাগলে তা আমি মুখের ওপর বলে দিই। আর সেজন্য অনেকে আমাকে অপছন্দ করে। আমাকে পর্দায় কম দেখার আর একটা কারণ যে আমি ইন্ডাস্ট্রির বাইরে থেকে এসেছি। এটাই আমার একমাত্র সমস্যা। ক্যারিয়ারের শুরুতে তা বুঝতাম না। তখন আমার অতটা বোধবুদ্ধি ছিল না। তবে এখন সবকিছু বুঝতে পারি। আর এর যোগ্য জবাবও দিতে পারি।’

প্রাচী দেশাই
ইনস্টাগ্রাম

এ প্রসঙ্গের হাত ধরে উঠে আসে বলিউড ইন্ডাস্ট্রির সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় ‘স্বজনপ্রীতি’। সশব্দে হেসে প্রাচী বলেন, ‘বলিউডে ‘নেপোটিজম’ আছে। আর এত দিন ধরে যা আছে, তাকে হটানো সম্ভব নয়। তাই একে সঙ্গে নিয়েই কাজ করতে হবে।
সবশেষে উঠে এল প্রাচীর বিয়ের প্রসঙ্গ। আর এ প্রসঙ্গ উঠতে তিনি বলেন, ‘বিয়ে করলে সবাইকে নিশ্চয়ই জানাব। আমার নিজের জীবনটা একান্তই নিজের। তাই আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনটা নিজের মতো রাখতেই ভালবাসি।’

‘বলিউডে ‘নেপোটিজম’ আছে। আর এত দিন ধরে যা আছে, তাকে হটানো সম্ভব নয়। তাই একে সঙ্গে নিয়েই কাজ করতে হবে।’
প্রাচী দেশাই
ইনস্টাগ্রাম