কোথায় বেড়ালেন আশা-ওয়াহিদা-হেলেন

ষাটের দশকের তিন উজ্জ্বল অভিনেত্রী আশা পারেখ, ওয়াহিদা রেহমান ও হেলেনছবি: টুইটার

দুজন ৮০ পেরিয়েছেন, একজন ৮০ ছুঁইছুঁই। বয়স যেন তাঁদের কাছে প্রকৃত অর্থেই একটি সংখ্যা। ষাটের দশকের তিন উজ্জ্বল অভিনেত্রী আশা পারেখ, ওয়াহিদা রেহমান ও হেলেন। শুধু বয়স নয়, এ তিন নারীর কাছে যেন হার মেনেছে করোনাভাইরাসও। নইলে এই মহামারির সময়ে কোন সাহসে তাঁরা ঘুরে বেড়ান আন্দামান দ্বীপে?
এক বছরের বেশি সময় ধরে চলছে মহামারি। সংক্রমণের নতুন ঢেউ ভারতে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে, বিপর্যস্ত করেছে জনজীবন। লকডাউনে জনসমাগম পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। অক্সিজেনের জন্য তৈরি হয়েছে হাহাকার। এমন পরিস্থিতিতে মন ভালো করে দেওয়া কিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে তাঁদের। ইতিবাচক ভাবনার রসদ জোগানো এসব ছবি তিন বরেণ্য অভিনেত্রী আশা, ওয়াহিদা ও হেলেনের। সম্প্রতি আন্দামানে অবকাশ যাপনে গেছেন তাঁরা।

ওয়াহিদা রেহমান
ছবি: টুইটার

তাঁরা সমসাময়িক। দুজন ষাটের দশকের বলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পাওয়া নায়িকা, আরেকজন নাচের জন্য ছিলেন খ্যাতিমান। একে অন্যের প্রতিযোগী ছিলেন, তবে এখন আর সেসবের ভাবনা নেই।

বলিউড প্রযোজক তনুজ গর্গ টুইটার ও ফেসবুকে তিন নায়িকার সেই আন্দামান ভ্রমণের ছবি পোস্ট করেছেন। ক্যাপশনে লিখেছেন, ‘বলিউড যদি কখনো “দিল চাহতা হ্যায়” সিনেমার রিমেকের কথা ভাবে, তাহলে আশা পারেখ, ওয়াহিদা রেহমান ও হেলেনকে দারুণ মানাবে।’

আত্মসম্মানের লড়াই, অতীতের মতবিরোধ, অন্যের চেয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠার হিংসার বদলে এখন তাঁদের ভেতরে আছে নিখাদ বন্ধুত্ব। হয়তো জীবনের শেষ অধ্যায়ে এ বন্ধুত্বকে অবলম্বন করেই তিনজন কাটিয়ে উঠেছেন একাকিত্ব, অবসাদ। পাশে সরিয়ে রেখেছেন মন খারাপের সময়টা।

একটি ছবিতে তো ওয়াহিদা রেহমানকে দেখা গেল পানির নিচে

আশিতেও মনের দিক থেকে তাঁরা যে চিরতরুণ, ভাইরাল ছবিগুলোই তার প্রমাণ। ছবিতে এ কালের তরুণদের মতোই আধুনিক তাঁরা। ওয়াহিদা ঝকঝকে জিনস, টপ, চওড়া কোমরবন্ধনীতে। আশা, হেলেন অনায়াস আধুনিক পোশাকে।

ওয়াহিদাকে কখনো দেখা যাচ্ছে নিজেই বোট চালাচ্ছেন, আবার হেলেন-আশা মেতেছেন খোলা আকাশের নিচে হাসিমুখ আড্ডায়। একটি ছবিতে তো ওয়াহিদা রেহমানকে দেখা গেল পানির নিচে। মেয়ের হাত ধরে ডুবসাঁতারের আনন্দে মেতেছেন তিনি। যদিও এই সাগরতলে নেমে সামান্য হলেও আড়ষ্ট হয়ে আছেন ওয়াহিদা রেহমান, শক্ত করে ধরে রেখেছেন মেয়ের হাত। এইটুকু দ্বিধা ৮৩ বছর বয়সে থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে শুধু এই দিকটা বাদ দিলে বোঝার উপায়ই নেই যে বয়স কাবু করেছে কাউকে। আশা-হেলেন-ওয়াহিদার ছবি শেয়ার করে অনেকেই বলছেন, ‘বন্ধুত্বের যথার্থ উদাহরণ।’ অনেকেই লিখেছেন, ‘জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত তাঁরা উপভোগ করছেন।’

আশা পারেখ

ওয়াহিদা রেহমান ১৯৩৬ সালের ১৪ মে ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৬ সালে ‘সিআইডি’ ছবিতে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে হিন্দি সিনেমার জগতে প্রবেশ করেন। এ ছবির সাফল্যের পর ১৯৫৭ সালে ‘পয়সা’ ছবিতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করেন। এরপর ষাট, সত্তর ও আশির দশকে তিনি ছিলেন হিন্দি সিনেমার খ্যাতিমান অভিনেত্রী। তিনি সত্যজিৎ রায়ের ‘অভিযান’ ছবিতেও অভিনয় করেন।

১৯৪২ সালের ২ অক্টোবর আশা পারেখের জন্ম। বাবা, বাচুভাই পারেখ ছিলেন গুজরাতি জৈন সম্প্রদায়ের মানুষ। তবে তিনি অনেক দিন ধরেই ছিলেন তৎকালীন বোম্বের বাসিন্দা। জন্মের পর বাবা–মায়ের একমাত্র মেয়ের নাম রাখা হয়েছিল সুধা আর সালমা। পরে তা বদলে হয় আশা। বলিউডে যে কজন অভিনেত্রী নাচে পটু ছিলেন, আশা তাঁদের মধ্যে অন্যতম। শিশুশিল্পী হিসেবে প্রথম ছবি ‘আসমান’ মুক্তি পায় ১৯৫২ সালে। এরপর এক অনুষ্ঠানে ১০ বছর বয়সী আশার নাচ দেখে ভালো লাগে পরিচালক বিমল রায়ের। তাঁর ‘মা’ ছবিতে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন আশা। ছবিতে তাঁর পরিচয় দেওয়া হতো ‘বেবি আশা পারেখ’ বলে।

বলিউড তারকা সালমান খান হেলেনের সৎছেলে

অভিনেত্রী হেলেন অ্যান রিচার্ডসনের জন্ম ১৯৩৮ সালের ২১ নভেম্বর। বাবা জর্জ ডেসমায়ার ছিলেন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান সম্প্রদায়ের। মা তৎকালীন বার্মার। বার্মাতেই ছিল সংসার। তাঁর অভিনীত চলচ্চিত্র ‘মেরে নাম চিন চিন চু’, ‘ও হাসিনা জুলফওয়ালে’, ‘পিয়া তু আন তো আজা’, ‘মেহবুবা ও মেহবুব’ দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল। বলিউড তারকা সালমান খান তাঁর সৎছেলে।