টুইটারে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ কঙ্গনা

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় তৃণমূল কংগ্রেসের। এই জয়ে প্রতিহিংসায় জ্বলছেন বিজেপির সমর্থক বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌত। এমনিতেই ‘ঠোঁটকাটা’ হিসেবে পরিচিতি তাঁর। অনলাইনে যেকোনো ইস্যুতে বিতর্কের ঝড় তোলার জুড়ি নেই। এবার পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জড়িয়ে কটাক্ষ করায় মামলা দায়ের হয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। শুধু তা–ই নয়, টুইটার কর্তৃপক্ষ বন্ধ করেছে তাঁর অ্যাকাউন্ট।

কঙ্গনা রনৌত
ছবি: ইনস্টাগ্রাম

তবে এবারই প্রথম নয়; এর আগেও কঙ্গনার টুইটার অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা হয়েছিল। ওয়েব সিরিজ ‘তাণ্ডব’ নিয়ে প্ররোচনামূলক টুইট করেছিলেন তিনি। এ কারণে কয়েক ঘণ্টার জন্য বন্ধ করা হয়েছিল তাঁর অ্যাকাউন্ট। কঙ্গনার বোন এবং তাঁর ব্যবস্থাপক রাঙ্গোলি চান্ডেলের টুইটার অ্যাকাউন্টও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিয়ম ভাঙায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

কঙ্গনা রনৌত
ছবি: ফেসবুক

পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস বিজয়ী হওয়ার পরেই একের পর এক বিরূপ টুইট করতে থাকেন কঙ্গনা। তৃণমূলের এই বিজয়ের পেছনে কঙ্গনা রনৌত সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে দায়ী করেছেন বাংলাদেশি আর রোহিঙ্গাদের। কঙ্গনা টুইটারের একটি পোস্টে লেখেন, ‘বাংলাদেশি আর রোহিঙ্গারা মমতার সবচেয়ে বড় শক্তি। যা চলছে, তাতে হিন্দুরা আর সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়। তথ্য অনুযায়ী, ভারতে বাঙালি মুসলিমরা বেশি দারিদ্র্য আর সবচেয়ে দুরবস্থায় জীবন যাপন করে। ভালো, আরেকটি কাশ্মীর তৈরি হচ্ছে।’

বলিউড অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌত
ইনস্টাগ্রাম

তবে অসংখ্য টুইটার ব্যবহারকারী কঙ্গনার এই মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন। একজন লিখেছেন, ‘এভাবে জোর করে গায়ে পড়ে বিজয়ীর অযৌক্তিক সমালোচনা করে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে পারবেন না। তাতে আরও বেশি করে আপনাদের অসহায়ত্ব ধরা পড়ে।’

এখানেই থামেননি কঙ্গনা। তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘ভিলেন’ আখ্যা দিয়ে রাহুল গান্ধীর সঙ্গেও তুলনা করেছেন। এ ছাড়া তিনি প্রতিহিংসামূলক টুইট করে লিখেছেন, ‘এটা ভয়ংকর...গুন্ডাকে মেরে ফেলার জন্য আমাদের সুপার গুন্ডার প্রয়োজন...। তিনি অব্যক্ত দানবের মতো, তাঁকে দমন করার জন্য দয়া করে ২০০০ সালের প্রথম দিকের বিরাট রূপটা দেখান মোদিজি...#PresidentRuleInBengal।’

কঙ্গনা রনৌত
ইনস্টাগ্রাম

ভারতের স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, বিজেপিকে সমর্থন করতে গিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরির চেষ্টা করছেন এই বলিউড অভিনেত্রী। এই অভিযোগ তুলে কলকাতা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে কঙ্গনা রনৌতের বিরুদ্ধে। হাইকোর্টের আইনজীবী সুমিত চৌধুরী ই–মেইল মারফত কঙ্গনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন গতকাল সোমবার। এবার তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টও বন্ধ করা হলো। অনেক তারকাই কঙ্গনার টুইটার অ্যাকাউন্ট স্থগিত হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।

ভারতীয় গণমাধ্যমকে টুইটারের এক মুখপাত্র বলেছেন, ‘আমরা বারবার জানিয়েছি, কোনো অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে অনলাইনে অশান্তি সৃষ্টি করা হলে কঠোর পদক্ষেপ নেব। এই অ্যাকাউন্ট একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে আমাদের হেটফুল কনডাক্ট (ঘৃণা ছড়ানো) পলিসি ও অ্যাবিউসিভ বিহেভিয়র (খারাপ ব্যবহার) পলিসি না মানার জন্য। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, টুইটারের সব ব্যবহারকারীর জন্যই এক নিয়ম মেনে চলি আমরা।’

কঙ্গনা রনৌত
ইনস্টাগ্রাম

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছুদিন পরপরই তাই কঙ্গনার ‘নীল বাক্য’-এর বিস্ফোরণ ঘটে। বলিউড তো আছেই, ভারতের এমন কোনো বিষয় নেই, যা নিয়ে এই তারকা তির্যক মন্তব্য করেননি। সমকালীন আন্দোলন, রাজনীতি, মাদক থেকে শুরু করে কৃষকের অধিকার—সব বিষয়ে তাঁর মন্তব্য করা চাই-ই চাই। বিশেষ করে টুইটারে ভিডিও বার্তা দিয়ে তিনি আলোচনায় আসেন প্রায়ই। গত বছরের অক্টোবর মাসে ভারতের কৃষি বিল নিয়েও মন্তব্য করে বিতর্কে পড়েছিলেন কঙ্গনা। কৃষি বিলের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর জন্য কঙ্গনার বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন রমেশ নায়েক নামের এক আইনজীবী। নির্বাচন নিয়েও তিনি বেফাঁস মন্তব্য করেছিলেন।

কঙ্গনা রনৌত
ইনস্টাগ্রাম