তবে কি বিজেপিতেই যোগ দিচ্ছেন কঙ্গনা

কোনো দিনই বিজেপিপন্থী ছিলেন না কঙ্গনাদের পরিবারের কেউ। কঙ্গনার দাদা এক সময়ে কংগ্রেসের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। কঙ্গনার মায়ের দাবি, বিষয়টি জানা সত্ত্বেও বিজেপি থেকে যথেষ্ট সমর্থন ও সাহায্য পেয়েছেন তাঁরা। কঙ্গনার মা যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। কঙ্গনাও দেবেন, সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।

অথচ কঙ্গনার দাদা ছিলেন কংগ্রেসের সক্রিয় সদস্যকোলাজ:আমিনুল ইসলাম

‘সেই তো নথ খসালি, তবে কেন লোক হাসালি।’ যারা কঙ্গনাকে চেনেন, খবরের শিরোনাম দেখে তাঁদের এ কথাই আগে মনে হবে। বলিউড তারকা কঙ্গনা রনৌতের কীর্তিকলাপ এমনই।

বলিউডে রাজনীতি হয়, এটা নিত্যদিনের ঘটনা। রাজনীতিতে বলিউড, এটা যুগের পর যুগ ঘটে আসছে। ভারতের স্বাধীনতার পরপর, মনোনীত সাংসদ হিসেবে সংসদে পা রেখেছিলেন পৃথ্বীরাজ কাপুর। এরপর আরও কত জন এলেন–গেলেন। বড় তারকা অমিতাভ বচ্চন থেকে শুরু করে আরও কত তারকা এসেছিলেন এ জগতে। শোনা যাচ্ছে, সেদিনের অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌতও...। বলিউডে তিনিই এখন সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি। কদিন পরপর তাঁকে নিয়ে দিতে হচ্ছে নানা রকম খবর। বিনোদন দুনিয়া থেকে প্রশাসন, রাজনীতির মঞ্চ সব জায়গায় কঙ্গনা, কঙ্গনা আর কঙ্গনা।

কঙ্গনার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে
সংগৃহীত

কঙ্গনা রনৌত আর মহারাষ্ট্রের শিবসেনা সরকারের বিরোধের পেছনে আসলেই ছিল রাজনীতি। ভারতের বিনোদন ও রাজনীতি বিশ্লেষকেরা সেটা আগেই ধারণা করেছিলেন। এক প্রতিবেদনে বিবিসি সে রকমই জানিয়েছিল। এর মধ্যে জানা গেল, কঙ্গনা রনৌতের মা আশাদেবী রনৌত বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। বেশ কয়েকটি ভারতীয় গণমাধ্যম নানা সূত্রের বরাত দিয়ে এ খবর প্রকাশ করেছে। এর আগে কঙ্গনার মুম্বাই–যাত্রার আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাঁর মা আশাদেবী বলেছেন, ‘আমার মেয়ের ওপর দেশবাসীর আশীর্বাদ রয়েছে। মা হিসেবে আমি গর্বিত যে কঙ্গনা সব সময় সত্যের পক্ষে লড়েছে এবং এখনো লড়ে যাচ্ছে। আমরা কোনো দিনই বিজেপিপন্থী ছিলাম না। কঙ্গনার দাদা একটা সময়ে কংগ্রেসের একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এটা জানা সত্ত্বেও বিজেপি থেকে আমরা যথেষ্ট সমর্থন ও সাহায্য পেয়েছি। তাই এবার থেকে বিজেপিকেই সমর্থন করব।’ পাশাপাশি কঙ্গনার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার জন্য নরেন্দ্র মোদিকে তিনি বিশেষ ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘এবার থেকে আমরা মোদিজির সঙ্গে আছি।’ সম্প্রতি মানালির ভাম্বলা গ্রামে বিজেপির এক পদযাত্রায় অংশ নিয়েছেন কঙ্গনা রনৌতের মা।

এমন খবরও ছড়িয়েছে, কঙ্গনাকেও দলে চাইছে বিজেপি। জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আঠাওয়ালে কঙ্গনা রনৌতের বাড়িতে গিয়েছিলেন। অভিনেত্রীকে বিজেপিতে স্বাগত জানিয়েছেন তিনি। সুশান্ত সিং রাজপুতের অপমৃত্যুর ঘটনাকে ঘিরে শিবসেনার সঙ্গে সংঘাতের পর একটা ক্ষেত্র আগেই প্রস্তুত ছিল। এবার কঙ্গনাকে বিজেপিতে স্বাগত জানিয়ে বিজেপির পক্ষ থেকে সেই আগুনে যেন ঘি ঢেলেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।

এর আগে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধে জড়িয়েছিলেন কঙ্গনা। তাঁকে তুই-তুকারি করে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন। আবার কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীর নাম জড়িয়ে শিবসেনাকে ‘সোনিয়া-সেনা’ বলেও ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন তিনি। তবে বিজেপির প্রতি কঙ্গনা রনৌতের দুর্বলতা ছিল আগেই। তাঁর কাজকর্মে সেটা আগেই বোঝা গিয়েছিল। গতকাল শুক্রবার সকালে একাধিক টুইটে কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধীকে ‘বিদেশিনী’ বলে কটাক্ষ করেছেন কঙ্গনা। এতে আরও পরিষ্কার হয়, রাজনীতির মাঠে নামছেন কঙ্গনা।

উল্লেখ্য, বুধবার কঙ্গনার মুম্বাই পৌঁছানোর আগেই বৃহন্মুম্বই পুরসভা অভিনেত্রীর বান্দ্রার অফিস ভাঙতে শুরু করে। যার জের ধরে এবার আদালতের কাঠগড়ায় মুম্বাই সিটি করপোরেশন। যথাযথ তথ্য-প্রমাণ না দেখাতে পারলে উদ্ধব প্রশাসনকে বলিউড অভিনেত্রীর অফিস মেরামত করে দিতে হতে পারে। মহারাষ্ট্রের শাসক দল শিবসেনার সঙ্গে কঙ্গনার দ্বন্দ্ব এত খারাপ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে গেরুয়া শিবির সেটাকেই হাতিয়ার করে তুলেছে।

সিনেমা নেই বলে ইনস্টাগ্রামে সক্রিয় কঙ্গনা
ইনস্টাগ্রাম

ভাঙা অফিস মেরামতের টাকা নেই। তাই উদ্ধব প্রশাসনের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন কঙ্গনা। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আঠাওয়ালে বলিউড অভিনেত্রীর সঙ্গে দেখা করে এ কথা জানিয়েছেন। এদিন আঠাওয়ালে কঙ্গনার বাড়িতে গিয়ে দেখা করে এসেছেন।

অভিনেত্রীর বাড়ি থেকে বেরিয়েই রামদাস বলেন, ‘কঙ্গনার সঙ্গে এক ঘণ্টা কথা হয়েছে। তাঁকে আশ্বস্ত করেছি যে আমাদের দল তাঁর পাশে আছে। মুম্বাইয়ে ভয় পাওয়ার কোনে কারণ নেই। এখানে থাকার সবার সমান অধিকার।’ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে কঙ্গনা জানিয়েছেন, মুম্বাই হাইকোর্টে তিনি বৃহন্মুম্বই পুরসভার কাছে থেকে ক্ষতিপূরণের আবেদন জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রাতে টুইট করে কঙ্গনা জানিয়েছিলেন, গত ১৫ জানুয়ারি নতুন অফিস উদ্বোধন করেছেন তিনি। করোনা আবহে কাজ বন্ধ থাকায় সবার মতো তিনিও লোকসানে পড়েছেন। তার মধ্যে ভাঙা অফিস মেরামত করার টাকা নেই তাঁর। তাই একপ্রকার হুংকার দিয়েই তিনি বলেছেন, ‘ভাঙা অফিস এ রকমই থাকবে, ঠিক করব না। স্মারক হিসেবে ওই ধ্বংসস্তূপ রেখে দেব।’

সোনিয়া গান্ধীর উদ্দেশে কঙ্গনা লিখেছেন, ‘আপনি তো পশ্চিমে বড় হয়েছেন। এখন ভারতে থাকেন। নারীদের সংগ্রামের কথা আপনার নিশ্চয়ই জানা উচিত। আপনার দলের লোকের হাতে একজন নারীকে এমন হেনস্তার শিকার হতে হচ্ছে, তখন আপনি চুপ করে আছেন। ইতিহাস আপনার এই নীরবতার বিচার করবে।’

এদিকে কঙ্গনা-পর্বে মহারাষ্ট্র সরকারের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল ভগৎ সিং কোশিয়ারি। কঙ্গনার অফিসে ভাঙচুরের ঘটনার পর মুখ্যমন্ত্রী ঠাকরের প্রধান উপদেষ্টা অজয় মেহতাকে রাজভবনে ডেকে পাঠিয়েছিলেন তিনি। পরদিনই রাজ্যপালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আঠাওয়ালে। সংবাদমাধ্যমকে রামদাস বলেন, সিটি করপোরেশন তো দাউদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয় না। প্রায় ৫২ হাজার অবৈধ বাড়ি আছে মুম্বাইয়ে। কঙ্গনার সঙ্গে যা হয়েছে, তা নিন্দনীয়, তাঁকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। অভিনেত্রীর রাজনীতিতে যোগদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিজেপি কঙ্গনাকে কোনো সমর্থন দেয়নি। তবে তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে চাইলে স্বাগত জানানো হবে। বিজেপিতে যোগ দিলে তাঁর বেশি লাভ। অন্তত রাজ্যসভায় একটা আসন তো পাবেনই।