বাস্তবে নাজরিয়ার প্রেমে পড়েছিলেন ফাহাদ

বেঙ্গালুরু ডেজ সিনেমায় স্বামী–স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করতে করতেই প্রণয় ফাহাদ ফাসিল আর নাজরিয়া নাজিমের। দুজনে থাকতে চেয়েছেন একসঙ্গে।ছবি: কোলাজ

গ্রাম থেকে বেশ দূরে। পাহাড়ের ওপর ছোট্ট এক মন্দির। সেখানে নিভিন পৌলি তরুণ নাজরিয়া নাজিমকে পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, খানিক পরেই বৃষ্টি নামবে। তাতে বিশ্বাস হয়নি নাজরিয়ার। যখন বৃষ্টি নামে, তখন নাজরিয়া ভিজতে ভিজতে নিভিনকে বলেছিলেন, ‘এই বৃষ্টির মতোই সত্য, তোমায় ভালোবাসি।’

এর প্রায় এক মাস আগে মুঠোফোনে টাকা রিচার্জের দোকান থেকে নম্বর নিয়ে দুলকার সালমান বিচিত্র কায়দায় নাজরিয়াকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন জীবনসঙ্গী করার।

‘ওম শান্তি ওশানা’ আর ‘সালালা মোবাইলস’ সিনেমা দুটির সে দৃশ্য দেখে কিছুটা আফসোস হতে পারে নাজরিয়ার বাস্তব জীবনের সঙ্গী ফাহাদ ফাসিলের। নাজরিয়াকে জীবনসঙ্গী করার প্রস্তাব সিনেমার মতো করে দিতে পারেননি তিনি। নাজরিয়াও সরাসরি কিছু বলেননি। দুজনকে এক রাস্তা দেখিয়েছিল তাঁদের পরিবার।

সিনেমাগুলোতে নিভিন ও দুলকারের সঙ্গে নাজরিয়ার প্রেমের দৃশ্য থাকলেও, বাস্তবে প্রেমে পড়েছিলেন ফাহাদই।
ইনস্টাগ্রাম

তবে পরিবারের মধ্যস্থতায় জীবনসঙ্গী পাওয়া আবার ‘বেঙ্গালুরু ডেজ’ সিনেমার গল্পের মতো। যা ফাহাদ নিজেই বলেছেন দুবাইভিত্তিক রেডিও ক্লাব এফএমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে। নিভিন পৌলি, দুলকার সালমান ও ফাহাদ ফাসিল, তিনজনই অভিনয় করেছিলেন ‘বেঙ্গালুরু ডেজ’ সিনেমাতে। আগের সিনেমাগুলোতে নিভিন ও দুলকারের সঙ্গে নাজরিয়ার প্রেমের দৃশ্য থাকলেও, বাস্তবে প্রেমে পড়েছিলেন ফাহাদই। তখন ‘বেঙ্গলুরু ডেজ’ সিনেমার শুটিং চলছে। সেই শুটিং সেটেই প্রকাশ পেয়েছিল নাজরিয়া-ফাহাদের প্রথম ভালো লাগার অনুভূতি। তবে তা সরাসরি নয়। কোনো এক কথার ছলে নাজরিয়া ফাহাদকে বলেছিলেন, ‘বাকি জীবনটাও যদি এভাবে চলত...।’

তবে এই গল্পও ভিন্ন রকম হতে পারত। মালয়ালম সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির দুই অভিনয়শিল্পী ফাহাদ ফাসিল আর নাজরিয়া নাজিমের বাস্তব জীবনে কাছে আসার গল্পের প্লটে নাটকীয়তা যোগ করতে পারতেন আরেক জনপ্রিয় অভিনেত্রী নিথিয়া মেনন।
কীভাবে? সে কথা জানতে ফ্ল্যাশব্যাকে যেতে হবে ১৯৮৩ সালে। ধরা যাক, এই গল্পের নায়িকা নাজরিয়া আর নায়ক ফাহাদ। সেখানে নিভিন পৌলি, দুলকার সালমান ও নিথিয়া মেনন পার্শ্বচরিত্র।

বেঙ্গালুরু ডেজ এর শুটিং সেটেই প্রকাশ পেয়েছিল নাজরিয়া-ফাহাদের প্রথম ভালো লাগার অনুভূতি।
ইনস্টাগ্রাম

১৯৮৩ সালের জুনে কপিল দেবের হাত ধরে ভারতে তখন প্রথমবারের মতো ক্রিকেট বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার উন্মাদনা। এর ঠিক এক বছর আগে দক্ষিণ ভারতের কচি শহরে মালয়ালম সিনেমার সুপরিচিত পরিচালক ফাসিলের ঘরে জন্ম ফাহাদের। এর প্রায় ১২ বছর পরে থিরুভানানথাপুরাম শহরে নাজরিয়ার জন্ম। ফাহাদের জীবনে নাজরিয়ার ‘এন্ট্রি’ আরও পরে।
বাবার খ্যাতির কারণে অভিষেক বচ্চনের রুপালি পর্দায় আসা যতটা সহজ হয়েছে, ফাহাদেরও তেমন। ফ্লপ সিনেমার তালিকায় অভিষেকের যেমন নাম থাকে, ফাহাদের শুরুটাও তেমন। ১৯ বছর বয়সে ফাহাদের অভিষেক ‘কায়েত্থুম দুরাথ’ (২০০২) দিয়ে। তখনকার জনপ্রিয় দক্ষিণি অভিনেতা ম্যামুট্টিও সিনেমাটিকে মুখ থুবড়ে পড়া থেকে রক্ষা করতে পারেননি। তাতে ফাহাদেরও যেন শিক্ষা হয়ে যায়। বংশপরম্পরায় আর যা–ই হোক, অভিনয় হয় না।

সিনেমায় ফাহাদ আবার ফেরেন ২০০৯ সালে ‘কেরালা ক্যাফে’ দিয়ে। আলোচনায় আসেন ‘টোয়েন্টি টু ফিমেল কোট্টায়াম’ দিয়ে।

ফাহাদ যখন অভিনয়ের বেলায় ‘শিশু’, তখনই ২০০৬ সালে ‘পালুনকু’ সিনেমায় শিশু চরিত্রে অভিনয় শুরু নাজরিয়ার। কাকতালীয়ভাবে দুজনেরই প্রথম সিনেমায় অভিনয়ের পর লম্বা বিরতি। ফাহাদ-নাজরিয়ার গল্পের ‘ইন্টারভ্যাল’ও ধরে নিতে পারেন এটিকে।

ক্যারিয়ারের বিরতিতে ফাহাদ মনোযোগ দেন পড়াশোনায়। নাজরিয়াও পরিবারের সঙ্গে পাড়ি জমান সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল আইন শহরে। সিনেমায় ফাহাদ আবার ফেরেন ২০০৯ সালে ‘কেরালা ক্যাফে’ দিয়ে। আলোচনায় আসেন ‘টোয়েন্টি টু ফিমেল কোট্টায়াম’ দিয়ে। নায়ক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এসে নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করে জিতে নেন সেরা অভিনেতার পুরস্কার।

অন্যদিকে দেশে ফিরে নাজরিয়া তখন ব্যস্ত টিভি উপস্থাপনায়। মালয়ালম ভাষার টেলিভিশন চ্যানেল এশিয়া নেটে কাজ শুরু করেন। ফাহাদের আলোচনায় আসতে সময় লাগলেও নাজরিয়ার বেলায় তা হয়নি। ২০১৩ সালে মুক্তি পায় তাঁর প্রথম কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করা সিনেমা ‘ম্যাড ড্যাড’।

নিভিন পৌলির সঙ্গে

একই বছর মুক্তি পাওয়া ‘নেরাম’ নিয়ে আসে পাদপ্রদীপের আলোয়। সে আলোর নিচে আসার পরই ফাহাদ-নাজরিয়ার গল্পে ‘এন্ট্রি’ হয় পার্শ্বচরিত্র নিভিন পৌলির। ‘নেরাম’-এ নাজরিয়ার সঙ্গে কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন নিভিন। সিনেমায় তাঁদের ‘প্রোপোজ’ করার দৃশ্যের অংশটুকু এখনো ইউটিউবে বেশ জনপ্রিয়।

নাজরিয়া নাজিম
ইনস্টাগ্রাম

এই জুটির রসায়ন দেখা যায় ২০১৪-তে মুক্তি পাওয়া ‘ওম শান্তি ওশানা’তেও। আর এই বছরই ফাহাদ-নাজরিয়ার গল্পে ‘এন্ট্রি’ দুলকার সালমানের। ‘সালালা মোবাইলস’ দিয়ে।


একই বছর (২০১৪) মুক্তি পাওয়া ‘বেঙ্গালুরু ডেজ’কেই ধরা হয় ফাহাদ-নাজরিয়ার বাস্তব জীবনের মূল গল্প হিসেবে। শুরুতে এই গল্পের নাটকীয়তা যোগ করার যে প্রসঙ্গ আনা হয়েছিল, তা এবার খোলাসা করা যাক।

বিয়ের পর ফাহাদও সিনেমা থেকে বিরতি নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে নিয়ে কোনো কথা হয়নি। যত কথা শুধু মেয়েদের নিয়ে।
নাজরিয়া নাজিম

সিনেমাটিতে ফাহাদের স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নাজরিয়া। তবে নাজরিয়ার জায়গায় ফাহাদের স্ত্রী হিসেবে পরিচালকের প্রথম পছন্দ ছিলেন নিথিয়া মেনন। কিন্তু সে চরিত্র অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন নিথিয়া। আসেন নাজরিয়া। স্বামী-স্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করতে করতেই শুটিং সেটে ফাহাদকে বলা নাজরিয়ার সে কথা, ‘বাকি জীবনটাও যদি এভাবে চলত...।’ আর পরবর্তী সময়ে তাঁরা একসঙ্গে পথাচলা শুরু করেন।

এক নিবন্ধে বলিউড শাদিস ডটকম উল্লেখ করেছে, এরপরই নাকি মজা করে নিথিয়া মেনন বলেছিলেন, চরিত্রের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে ফাহাদ-নাজরিয়ার একসঙ্গে হওয়ার পেছনে তিনিই মূল ভূমিকা রেখেছেন। নাহলে গল্পটা অন্য রকমও হতে পারত!

বেঙ্গালুরু ডেজ সিনেমায় স্বামী–স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করতে করতেই প্রণয় ফাহাদ ফাসিল আর নাজরিয়া নাজিমের। দুজনে থাকতে চেয়েছেন একসঙ্গে।
ইনস্টাগ্রাম

বিয়ে-বিরতি-ফিরে আসা
২০১৪ সালের এপ্রিলে ভারতে তখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা জেতার উন্মাদনা। এমন একটি আমেজে ঘর বাঁধা শুরু নাজরিয়া-ফাহাদের। এবার ভক্তরা যখন তাঁদের জুটি বাঁধা সিনেমা দেখার অপেক্ষায়, তখনই ক্যারিয়ারে বিরতি দেন নাজরিয়া নাজিম।

শুরু হয় নানান মুনির নানান মত। কেউ বলেন, বিয়ের পরে অভিনয় ছেড়ে দেওয়াটাই স্বাভাবিক। ২০১৭ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ায়, এই জুটি মা–বাবা হতে যাচ্ছেন।

২০১৮–তে অঞ্জলি মেননের ‘কোদে’ সিনেমা দিয়ে মলিউডে ফেরেন নাজরিয়া। জবাব দেন সমালোচনারও। স্ক্রল ডট ইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, বিয়ের পর ফাহাদও সিনেমা থেকে বিরতি নিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে নিয়ে কোনো কথা হয়নি। যত কথা শুধু মেয়েদের নিয়ে।

নাজরিয়ার এই কথা যেন বড় আগুন লাগার আগে ওঠা ধোঁয়ার মতো। আর এই বড় আগুন হলো, ফাহাদ-নাজরিয়ার যৌথ সিনেমা ‘ট্রান্স’। ২০২০ সালের করোনাকালে মুক্তি পাওয়া সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার সিনেমাটি বক্স অফিসেও বেশ ব্যবসা সফল। সিনেমা হল বন্ধের আগপর্যন্ত আয় করে নেয় ২০ কোটি রুপির বেশি অর্থ। পৃথিবী পুরোপুরি করোনামুক্ত হলে বাস্তবের এই জুটির রুপালি পর্দার সফলতা আরও দেখা যাবে।
এর আগে দেখে নিতে পারেন ফাহাদ ও নাজরিয়া অভিনীত জনপ্রিয় কিছু সিনেমা। ‘কুম্বুলাঞ্জি নাইটস’, ‘মাহেশিন্তে প্রাথিকারাম’, ‘সি ইউ সুন’, ‘সুপার ডিলাক্স’, ‘এনজান প্রকাশান’, ‘সামসারাম আরজ্ঞাথিনু হানিকারাম’, ‘মানিয়ারৈলে আশোকান’, ‘ভারাথান ও রাজা-রানি’।