ভালোবাসা নিয়েই চিরঘুমে দিলীপ কুমার

সায়রা বানুর পোশাকের এমব্রয়ডারি করতেন আনসারি জরিওয়ালা। তিনি ছিলেন দিলীপ কুমারের ভক্ত। নায়কের দাফনে এসেছিলেন তিনি। শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসে জানালেন, ১৯৮৯ সালে একাধিকবার নায়কের বাড়ির ভেতরে গেছেন। আনসারি বলেন, ‘তিনি দেশকে খুব ভালোবাসতেন। একবার রোজার শেষ দিন তাঁদের বাড়িতে গিয়েছি। দেখলাম, ঈদের চাঁদ উঠেছে বলে তিনি শিশুর মতো খুশি। আমাদের সবাইকে ডেকে ছাদে নিয়ে গেলেন ঈদের চাঁদ দেখাতে। দোয়া চাইতেন কেবল নিজের জন্য নয়, পুরো ভারতের জন্য। নিজের স্ত্রী সায়রা বানুকে খুব ভালোবাসতেন তিনি আর সব সময় তাঁর পরামর্শ মেনে চলতেন।’ তিনি জানিয়েছেন, পরে ১৯৯২ সালে একজন অভাবী মানুষকে নিয়ে দিলীপ কুমারের বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। তাঁকে অর্থ, খাবার ও কাপড় দিয়ে সহায়তা করেছিলেন তিনি। এভাবে ভালোবাসায় আপ্লুত হয়েই চিরঘুমে গেলেন উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতা দিলীপ কুমার।

গতকাল বুধবার বিকেলে কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমারের দাফন হয় মুম্বাইয়ের জুহুর শান্তাক্রুজ কবরস্থানে। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়। এই করোনার মধ্যেও দুই শতাধিক মানুষের সমাগম লক্ষ করা যায়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। শেষ বিদায়ে অভিনেতার মরদেহে জড়িয়ে দেওয়া হয় ভারতের জাতীয় পতাকা।

সেখানে উপস্থিত মাসুদ খান নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘দিলীপ কুমারের সঙ্গে কয়েক বছর আগে দেখা করার সুযোগ পেয়েছিলাম। তাঁর বাড়িতে খাবার দিতে যেতাম। তিনি খেতে ভালোবাসতেন। কাবাব আর রান বিরিয়ানি ছিল তাঁর পছন্দের খাবার। তিনি ভীষণ ধার্মিক আর খুব ভালো মানুষ ছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছবি তোলারও সুযোগ আমার হয়েছিল।’

‘শক্তি’ ছবিতে অমিতাভ বচ্চন ও দিলীপ কুমার। ছবি: সংগৃহীত

প্রিয় অভিনেতাকে শেষ বিদায় জানাতে এসেছিলেন বান্দ্রার বাসিন্দা রেহানা খান। আবেগপ্রবণ হয়ে বলেন, ‘আমাদের চোখের আলো ছিলেন তিনি। তাঁর অভিব্যক্তিগুলো আমার ভীষণ পছন্দ। কোনো তারকার শেষ বিদায়ে আসিনি। কিন্তু ১৫ বছর বয়স থেকে যাঁর সিনেমা দেখেছি, তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে না এসে পারলাম না। আমার শ্বশুর তাঁকে চিনতেন, সেই সুবাদে একবার দেখাও হয়েছিল। আমার জানামতে, তিনি কখনো কারও মনে কষ্ট দেননি।’

গতকাল বুধবার সকালে মারা যান বর্ষীয়ান অভিনেতা দিলীপ কুমার। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। বলিউডের ট্রাজেডি কিং হিসেবে পরিচিতি ও খ্যাতি পেয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন জীবন্ত কিংবদন্তি। দিলীপ কুমারের আসল নাম ছিল ইউসুফ খান। বলা হয়ে থাকে, তিনিই বলিউডের প্রথম খান। ১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর বর্তমান পাকিস্তানের পেশোয়ারে তাঁর জন্ম। ‘জোয়ার ভাটা’, ‘আন’, ‘আজাদ’, ‘দেবদাস’, ‘আন্দাজ’, ‘মুঘল-ই-আজম’, ‘গঙ্গা যমুনা’, ‘ক্রান্তি’, ‘কর্মা’, ‘শক্তি’, ‘সওদাগর’, ‘মশাল’সহ ৬০-এর বেশি ছবিতে তিনি কাজ করেছেন।

‘গঙ্গা–যমুনা’ ছবিতে বৈজয়ন্তীমালা ও দিলীপ কুমার
সংগৃহীত

তপন সিনহা পরিচালিত বাংলা ছবি ‘সাগিনা মাহাতো’তে দিলীপ কুমার অভিনয় করেছিলেন। কালজয়ী এ ছবিতে তাঁর নায়িকা ছিলেন সায়রা বানু। সেরা অভিনেতা হিসেবে আটবার তিনি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জয় করেছেন। হিন্দি সিনেমাজগতের সবচেয়ে বড় সম্মান ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কারেও তাঁকে সম্মানিত করা হয়।