‘কথা বলার সময় তোতলাতাম’

সামিরা রেড্ডি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে টিনএজ বয়সের এক ছবি শেয়ার করেছেন সামিরা রেড্ডি। এ ছবিতে তাঁকে একটু মোটা দেখাচ্ছে। ছবিটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সামিরার এক যন্ত্রণা। মোটা ও কালো হওয়ার জন্য এই বলিউড অভিনেত্রীকে ছোটবেলা থেকে অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে। এ ছাড়া তোতলানোর জন্যও তাঁকে নিয়ে নানা ঠাট্টা–তামাশা করা হতো।

সেই বেদনাদায়ক সময় আজও তাড়া করে সামিরা রেড্ডিকে। তাই ৪২ বছর বয়সে এসে তিনি সেই যন্ত্রণার কথা ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেছেন। কিশোরীকালের সেই ছবির সঙ্গে ক্যাপশনে সামিরা লিখেছেন, ‘সেই সময়টা আমার জন্য খুবই কঠিন ছিল। কারণ, তখন আমি মোটা ছিলাম। কথা বলার সময় তোতলাতাম। এ জন্য আমাকে অনেক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। আমি আমার দুই সন্তানকে দয়ালু এবং সহনশীল হওয়ার শিক্ষা দিই। আমি তাদের শেখাই, একেক জন মানুষ একেক রকম দেখতে, কিন্তু সবাই সুন্দর। সব সৌন্দর্যকে স্বাগত জানাতে বলি। বলি, সৌন্দর্যের কোনো গণ্ডি হয় না। মোটা আর কালো, সমান ভালো।’

সামিরার কিশোরীকালের সেই ছবি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ওই ভিডিওতে সামিরা জানিয়েছেন, রোজ ৪৫ মিনিট যোগব্যায়াম করেন তিনি। এ ছাড়া নিয়মিত ব্যাডমিন্টন খেলেন, সপ্তাহে চার দিন সাইকেল চালান। সকালে ঘুম থেকে উঠে তিনি হারবাল চা, নয়তো কালো কফি পান করেন। সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে রাতের খাওয়া শেষ করেন। সামিরার খাদ্যতালিকায় বেশি থাকে তরলজাতীয় খাবার। ভিডিওতে সামিরা বলেন, তাঁর ওজন ৯১ কেজি। সুস্থ থাকাই তাঁর কাছে সুন্দর থাকা। ২০১৪ সালের ২১ জানুয়ারি ব্যবসায়ী আকাশ ওয়ার্ধেকে বিয়ে করেন সামিরা। তিনি এখন দুই সন্তানের মা। ছেলের নাম হংস, মেয়ের নাম নায়রা। ছোটবেলার সেই দিনগুলোর কথা জানিয়ে সামিরা লিখেছেন, ‘মন খারাপ করা সেই মন্তব্যগুলো সহ্য করা ছিল খুবই কঠিন। আমাকে ভুল শেখানো হয়েছিল। আর আমি এখন সত্যিটা জানি। আমার সঙ্গে যা ঘটেছে, আমার সন্তানদের সঙ্গে যেন তা না হয়। তাদের আমি শিখিয়েছি, যাতে তারা এসব ভুল, মিথ্যা শুনে মন খারাপ না করে। আমি বলেছি, গায়ের রং, উচ্চতা, ওজন, কোমর, এসবের সঙ্গে সৌন্দর্যের কোনো সম্পর্ক নেই। কেউ যদি বলে, কোমর ২৬ হলে সুন্দর, বলবে তুমি ভুল জানো, সবাই সুন্দর।’

আকাশ ওয়ার্ধে ও সামিরা রেড্ডি। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

২০১৯ সালে একবার একটি ছবি শেয়ার করে সামিরা বলেছিলেন, ‘আমার ওপর চাপ ছিল, আমাকে যেন সুন্দর দেখায়। ফরসা আর চিকন দেখায়। নিজের শরীর নিয়ে প্রচুর আপত্তিকর মন্তব্য শুনেছি। তাই মা হওয়ার পর আমি গায়েব হয়ে যাই। যাতে আমার স্ফীত শরীর নিয়ে কেউ বাজে কথা বলতে না পারে। আজ পেছনে ফিরে তাকালে মনে হয়, সবাই মিলে “সুন্দর” এর ভুল আর মিথ্যা পরিভাষা তৈরি করেছে। আমি এখন জানি, আমি সুন্দর। আমরা সবাই নিজেদের মতো করে সুন্দর। আর আমাদের সবার উচিত, সেই সৌন্দর্যকে উদ্‌যাপন করা।’

সামিরা রেড্ডি ২০০২ সালে সোহেল খানের সঙ্গে ‘ম্যায়নে দিল তুঝকো দিয়া’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রেখেছিলেন। তাঁকে শেষবার পর্দায় দেখা গেছে ২০১২ সালে ‘তেজ’ আর ‘চক্রব্যূহ’ ছবিতে। সামিরা হিন্দি ছাড়াও তামিল, তেলেগু, মালয়ালাম আর বাংলা ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাঁর জন্ম ভারতের মুম্বাইয়ে। বাবা তেলেগু, মা মঙ্গোলিয়ান। অভিনয়ে আসার আগে তিনি মডেলিং করতেন।