রোগশোকে কাটানো বলিউডের বড় তারকারা

রোগশোকে কাটানো বলিউডের বড় তারকারাকোলাজ

‘সে বছর আমি জীবনের কঠিন একটি বাস্তবতার মধ্যে ছিলাম। খুব অস্বস্তি লাগত, শারীরিকভাবেও বিপর্যস্ত ছিলাম। সে কী অসহনীয় যন্ত্রণা!’ ২০১৮ সালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে নিজের রোগশোকের ভয়াবহ সেসব দিনের অভিজ্ঞতার কথা বললেন বলিউড তারকা মনীষা কৈরালা। লোকারণ্য মিলনায়তনে সমুজ্জ্বল মনীষা সেদিন আরও বলেছিলেন, ‘অনেক মানুষের কাছে আমার অনেক আশা ছিল। ভেবেছিলাম, তারা এগিয়ে আসবে। কিন্তু বাস্তবে এমন কিছু হয়নি। আবার কিছু মানুষ আমার জীবনে এসেছে ত্রাণকর্তা হয়ে।’

শুধু মনীষাই নয়, বলিউডে এমন অনেক তারকা আছেন, যাঁদের জীবনে রোগশোকের নিদারুণ গল্প আছে। মানুষকে বিনোদন দেওয়ার মতো বড় দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন তাঁরা। দর্শকদের কখনো হাসান, কখনো কাঁদান। ক্যামেরার সামনে নিজেকে উজাড় করে নাচেন, নাচান। মারেন, মার খান। তাঁদের মারপিট, ছুটোছুটি, কান্নাকাটির একটাই কারণ, যে মানুষটি টিকিট কেটে সিনেমা হলে ঢোকেন কিংবা সময় নিয়ে টিভির সামনে বসেন, সেই মানুষটিকে বিনোদন দেওয়া। অন্যের মনের খোরাক জোগানো।

অথচ অন্য সবার মতো পর্দার এ মানুষগুলোর ব্যক্তিজীবন নানা রকমের সমস্যায় কাতর। তারকারা কত যন্ত্রণায় ভুগে দিন যাপন করেন, সে খবর হয়তো পর্দার সামনে দর্শক ভাবতেই পারবেন না। বলিউডের শীর্ষ তারকাদের এমন অনেকে আছেন, যাঁরা দিনের পর দিন নানা শারীরিক সমস্যায় দিন যাপন করছেন। কেউ কর্কট রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন, কেউ মারাত্মক বিষণ্নতায় ভুগছেন, কারও যকৃতের (লিভার) বেশির ভাগ অংশ নষ্ট হয়ে গেছে। আবার কেউ কেউ যন্ত্রণায় আত্মহত্যাও করতে গিয়েছিলেন। আজ প্রথম কিস্তিতে জানা যাবে এমন ছয় তারকার কথা।


লিভারের ৭৫ শতাংশ অকার্যকর অমিতাভ বচ্চনের
৭০ পেরিয়েও ‘শাহেনশাহ’ বলিউড শাসন করছেন। পর্দায় এখনো যিনি নিজের মতো নেচে মুগ্ধ করেন, একের পর একটা সিনেমায় অভিনয় করছেন, পণ্যের বিজ্ঞাপন করে যাচ্ছেন, সেই অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন বেঁচে আছেন মাত্র ২৫ শতাংশ সক্রিয় লিভার নিয়ে! বর্ষীয়ান এই অভিনেতার লিভারের ৭৫ শতাংশ অকার্যকর হয়ে গেছে হেপাটাইটিস বির মতো মারাত্মক ভাইরাসের আক্রমণে।

অমিতাভ বচ্চন
অমিতাভ বচ্চন
ফেসবুক থেকে

কয়েক বছর আগে অমিতাভ বচ্চন নিজেই জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন তিনি ২৫ শতাংশ লিভার নিয়েই বেঁচে আছেন। এই রোগ তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছিল ৩০ বছরেরও বেশি সময় আগে। ‘কুলি’ ছবির শুটিংয়ের সেটে তাঁর মারাত্মক একটি দুর্ঘটনা ঘটেছিল। তলপেটে মারাত্মক আঘাত পেয়ে প্লিহা ফুটো হয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। প্রাণের আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সেই সময় তিনি দীর্ঘদিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। রক্তদাতাদের কাছ থেকে রক্ত নিতে হয়েছিল তাঁকে। সেই সময় একজন দাতার রক্তে হেপাটাইটিস বির সংক্রমণ ছিল। তাঁর রক্ত নেওয়ার পর এই ভাইরাসের (রোগের) জীবাণু তাঁর শরীরে ঢুকে যায়, যদিও ওই সময় কিছুই বুঝতে পারেনি কেউ। পরে ২০০০ সালে অমিতাভকে চিকিৎসকেরা তা জানান। তিনি প্রথমবারের মতো বুঝতে পারেন যে তাঁর লিভারের অবস্থা খুব সুবিধার নয়। তাঁর লিভারের ৭৫ শতাংশই নষ্ট হয়ে গেছে।

মনীষা কৈরালা
মাসুম অপু


ক্যানসার জয় করেছেন মনীষা কৈরালা
ইতিমধ্যে এই লেখার শুরুতে মনীষা কৈরালার রোগের কথা জেনে গেছেন। মনীষার রোগটা ধরা পড়ে ২০১২ সালে। ‘এক লাড়কি কো দেখা তো অ্যায়সা লাগা’, ‘বাহো কি দারমিয়া’ অথবা ‘ও ইয়ারা দিল লাগানা’ গানের মিষ্টি হাসির মেয়ে মনীষা কৈরালার ক্যারিয়ার তখন তুঙ্গে। হঠাৎ তাঁর জীবনে ঝড় নেমে আসে। ক্যানসার ধরা পড়ে অভিনেত্রী মনীষার। দীর্ঘদিন কেমোথেরাপিসহ জটিল চিকিৎসা পদ্ধতির পর অস্ত্রোপচার হয়। ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি।

মাঝে অনেক কঠিন সময় গেছে তাঁর। এখন কিছুটা সেরে উঠতেই কাজে লেগে পড়েছেন। কিন্তু হিন্দি ছবিতে দর্শক তাঁকে এখনো আগের মতো করে পাচ্ছেন না। তিনি অংশ নিচ্ছেন বিভিন্ন সমাজ সচেতন কর্মকাণ্ডে। লিখেছেন আত্মজীবনী।

শাহরুখ খান
শাহরুখ খান
ফেসবুক থেকে


শাহরুখ খান অপারেশন থিয়েটারে গিয়েছেন একাধিকবার
শল্যচিকিৎসকের ছুরির নিচে বারবার নিজেকে সঁপে দিতে হয়েছে ‘বলিউড বাদশা’ শাহরুখ খানকে। নিজের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহুবার আহত হয়েছেন। প্রতিবার ফিরে এসেছেন শাহরুখ, তবে বিরতিতে যেতে হয়েছে। তারপরও শরীর নিয়ে মোটেও শান্তিতে নেই শাহরুখ। হাঁটুর ব্যথায় ভুগছেন দীর্ঘদিন। সেখানেও একবার সার্জারি হয়েছে। যে কারণে নি-ক্যাপ পরেই শুটিং করছিলেন। কয়েক বছর আগে ইমতিয়াজ আলীর ‘দ্য রিং’ ছবির শুটিং করার সময় ব্যথায় কাতর হয়ে পড়েন বলিউড বাদশা। তবে কাজ বন্ধ করেননি তিনি। ব্যথা কমানোর ওষুধ খেয়ে আর ইনজেকশন দিয়েই ব্যথা আয়ত্তে রাখেন শাহরুখ।

দীপিকা পাড়ুকোন
দীপিকা পাড়ুকোন
ফেসবুক থেকে


দীপিকা পাড়ুকোনের মনের অসুখ মারাত্মক
দীপিকা পাড়ুকোন জনপ্রিয়তার শুরু থেকেই সমসাময়িকদের তুলনায় বেশি। বেশ কয়েক বছর তিনি ছিলেন বলিউডের ১ নম্বর নায়িকা। সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক পেয়েছেন। যে ছবি করছেন, সেটাই বক্স অফিসে সুপারহিট। বিয়ে করেছেন বলিউডের আরেক তারকা রণবীর সিংকে। ‘টাইম’ সাময়িকী তাঁকে গত বছর বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তিত্বের তালিকায় রেখেছে।

সেই দীপিকাকে বাইরে থেকে যতই শক্তপোক্ত লাগুক না কেন, তিনি একসময় যে মানসিক রোগে ভুগছিলেন, তা হয়তো অনেকেই জানেন না। শুধু তা-ই নয়, নিজের অতীতের এসব কথা বলতে গিয়ে একাধিক অনুষ্ঠানে কেঁদে ফেলেছিলেন দীপিকা পাড়ুকোন। দর্শকদের জানিয়েছেন বিষণ্নতা জয়ের গল্পও।
মানসিক অবসাদ বিষয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে কথা বলতে গিয়ে দীপিকা বলে ওঠেন, ‘কয়েক বছর আগে আমার সঙ্গে দেখা করতে আমার বাড়ির লোকজন এসেছিল। তারা চলে যাওয়ার সময় আমি একা আমার ঘরে বসে ছিলাম। আমাকে মা বারবার জিজ্ঞেস করেছিল, কিছু হয়েছে? আমি মাকে বলতে পারিনি। শেষমেশ নিজেকে আটকাতে পারিনি। কেঁদে ফেলেছিলাম। জানিয়েছিলাম আমার মানসিক সমস্যার কথা!’
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ইয়ুথ এংজাইটি সেন্টার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দীপিকা পাড়ুকোন বলেছেন নিজের বিষণ্নতা জয়ের গল্প। দীপিকা জানান, তিনি এখন ভালো আছেন। এ সময় তিনি বিষণ্নতা থেকে মুক্তি পাওয়ার মূলমন্ত্র শিখিয়ে দেন। বলেছেন, ‘ধৈর্য ধরার বিকল্প নেই। ধৈর্য ধরে বিশ্বাস করতে হবে যে সব ঠিক হয়ে যাবে। দীপিকা এ সময় সুপারম্যানের উক্তি টানেন। বলেন, যখন তুমি সবকিছুর ভেতর থেকে আশাকে বেছে নেবে, তখন সবকিছুই সম্ভব।

সোনালি বেন্দ্রে
সোনালি বেন্দ্রে
ফেসবুক থেকে


সোনালি বেন্দ্রের যুদ্ধটা চলছে
‘যখনই তুমি খারাপ কিছু আশা করবে না, তখনই জীবন তোমাকে বাঁকা পথে নিয়ে যাবে। আমার চূড়ান্ত পর্যায়ের ক্যানসার ধরা পড়েছে এবং তা শরীরে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে। যেটা আমি কখনোই আশা করিনি। একটা ব্যথা হচ্ছিল। সেটা পরীক্ষা করতেই ক্যানসার ধরা পড়ে। আমার পরিবার ও বন্ধুরা আমার পাশে আছে। আমি প্রত্যেকের কাছে কৃতজ্ঞ।’ নিজের ক্যানসার আক্রান্তের খবর এভাবে ভক্তদের সঙ্গে শেয়ার করেছিলেন একসময়ের আলোচিত তারকা সোনালি বেন্দ্রে। মেটা স্ট্যাটিক ক্যানসার ধরা পড়ে ৪৩ বছর বয়সী এই অভিনেত্রীর।

কেমোথেরাপির জন্য কেটে ফেলতে হয়েছে মাথার চুল। সব সংকোচ দূরে সরিয়ে সেই ন্যাড়া মাথার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন বলিউডের নায়িকা সোনালি বেন্দ্রে। ধরা পড়ার পর এর আগে নিজের কেটে ফেলা ছোট চুলের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেন। এই প্রথম তিনি প্রকাশ করলেন সম্পূর্ণ ন্যাড়া মাথার ছবি। সঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘আজকাল আমার তৈরি হতে বেশি সময় লাগে না। কারণ চুল ঠিক করার জন্য আমাকে সময় দিতে হয় না।’
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে দীর্ঘদিন ক্যানসারের চিকিৎসা শেষে ফিরে এসেছেন মুম্বাই। এখন তিনি অনেকটাই সুস্থ।

হৃতিক রোশন
হৃতিক রোশন
ফেসবুক থেকে


হৃতিকের মাথায় নিদারুণ যন্ত্রণা
ছবিতে স্টান্টম্যান ব্যবহার করা মোটেই পছন্দ করেন না তিনি। চরিত্রের খাতিরে লাফঝাঁপগুলো নিজেই সারেন। থাইল্যান্ডের ফুকেটে ‘ব্যাং ব্যাং’ ছবির শুটিং করতে গিয়ে মাথায় আঘাত পেয়েছিলেন হৃতিক রোশন। ওই আঘাতের কারণেই তাঁর ব্রেন ও খুলির মাঝখানে রক্ত জমাট বেঁধেছিল। আর তার জেরেই ২০১৩ সালে মুম্বাইয়ের হিন্দুজা হাসপাতালে হৃতিক রোশনের অস্ত্রোপচার হয়েছে। অ্যানেসথেসিয়া ব্যবহার করে অজ্ঞান করার পর হৃতিকের মাথার খুলি ছিদ্র করে জমাট বাঁধা রক্ত বের করে আনা হয়।
তার আগে কয়েক মাস ধরে মাঝেমধ্যেই মাথার যন্ত্রণায় ভুগছেন তিনি। মাথাব্যথাকে প্রথমে গুরুত্ব দেননি ‘কৃষ’ তারকা। পরে ডাক্তার দেখাতেই সিটিস্ক্যান করতে বলা হয়। এতেই ধরা পড়ে খুলিতে জমাট বেঁধেছে রক্ত, মাথায় একাধিক আঘাত। শোনা যায় এখনো হৃতিকের মাথায় ব্যথার সমস্যাটা পুরোপুরি সারেনি।