লকডাউনে দেশ–বিদেশের ২৫০টির বেশি সিনেমা দেখেছি

নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীইনস্টাগ্রাম
পুরস্কারের প্রতি মোহ নেই। শুধু মন দিয়ে অভিনয়টাই করে যেতে চান। মানুষের ভালোবাসা তাঁর কাছে সেরা পুরস্কার। সেই ভালোবাসা পেয়েছেন নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী। বাড়তি পাওনা পুরস্কারটিও পেয়েছেন। বড় পর্দার পাশাপাশি ওটিটিতে তাঁর দাপট চলছেই। ‘ফিল্মফেয়ার’ পুরস্কারে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেলেন ‘রাত আকেলি হ্যায়’ ছবির জন্য। সেসব নিয়ে নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী কথা বললেন প্রথম আলোর মুম্বাই প্রতিনিধি দেবারতি ভট্টাচার্যের সঙ্গে।

প্রশ্ন :

আপনার জীবনে পুরস্কারের গুরুত্ব কতখানি?

পুরস্কারের কথা মাথায় রেখে কখনো অভিনয় করি না। পুরস্কারের বিষয়টি মাথায় রাখলে আপনি কাজের সঙ্গে ‘ন্যায়’ করতে পারবেন না। পুরস্কার পেলে ভালো, না পেলে দুঃখ নেই।

নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী
ইনস্টাগ্রাম

প্রশ্ন :

ছবিগুলো ওটিটির বদলে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেলে কি বেশি খুশি হতেন?

সত্যি কথা বলতে, ওটিটির ব্যাপ্তি অনেক বেশি। বিশ্বের সবাই ছবি দেখতে পারে। তবে সিনেমা হলের নিশ্চয়ই আলাদা মজা আছে। আমার মতে, ওটিটি ডেমোক্রেটিক প্ল্যাটফর্ম। সিনেমা হল কখনোই তা নয়। এখানে বড় তারকারা বেশি সিনেমা হল পান। অন্য অভিনেতাদের এই সুযোগ কম। অথচ অনেক সময় দর্শক অন্য অভিনেতাদেরও দেখতে বেশি পছন্দ করেন।

প্রশ্ন :

গত বছর ‘ইনসাইডার’ ও ‘আউটসাইডার’ ইস্যু নিয়ে বেশ আলোচনা ছিল। তারকাসন্তানদের ছবি বয়কটের হুমকি দিয়েছিলেন অনেকে। আপনি কি মনে করেন, এখন ‘আউটসাইডার’ তারকাদের ছবি দেখতে সিনেমা হলে দর্শক বেশি ভিড় করবেন?

অভিনেতা অভিনেতাই। অভিনেতা কখনো ‘আউটসাইডার’ বা ‘ইনসাইডার’ হতে পারেন না। অভিনেতা যেকোনো ক্ষেত্রের হতে পারেন। যোগ্যতাই শেষ কথা। আমি শুধু একটা কথা বলতে চাই, ইন্ডাস্ট্রি চার-পাঁচজন মানুষ চালান না। এখানে অভিনয়শিল্পীরাই সবকিছু নন। লাইট ডিজাইনার, স্পটবয়, সেট ডিজাইনার, ক্যামেরা অপারেটর, মেকআপ আর্টিস্ট—তাঁদের প্রত্যেককে নিয়েই এই ইন্ডাস্ট্রি চলে। এ ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ইন্ডাস্ট্রির এই মানুষগুলো হবেন। দেশের হাজার হাজার মানুষ অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এ রকম পরিস্থিতি চলতে থাকলে তাঁদের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে।

নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী
ইনস্টাগ্রাম

প্রশ্ন :

ওটিটি প্ল্যাটফর্মের ক্ষেত্রে সফলতার মাপকাঠি কী? কারণ, এখানে ১০০ কোটির ক্লাব বলে কিছু নেই।

আমি যে ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে চাই, সে সুযোগ আমাকে ওটিটি দেয়। আর এ ধরনের চরিত্রের মাধ্যমে আমি বিনোদন দেওয়ার সুযোগ পাই। এটাই আমার কাছে সফলতা। নম্বর আমার হাতে নেই। ‘অ্যাকশন’ এবং ‘কাট’-এর মধ্যে আমাকে কাজ করতে হয়। সততার সঙ্গে কাজ করে যাওয়াই আমার কাছে যথেষ্ট।

প্রশ্ন :

অনেকের মতে, ওটিটি বিনোদন দুনিয়ার ভবিষ্যৎ। এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কী?

সব জিনিসই নিজ নিজ ক্ষেত্রে সঠিক। এ ব্যাপারে আমি এখনই কোনো মন্তব্য করতে পারব না। করোনামুক্ত হওয়ার পরই আমরা স্পষ্ট ছবিটা পাব। তবে ওটিটির দাপট থাকবে, এটা নিশ্চিত।

প্রশ্ন :

ওটিটির ক্ষেত্রে সেন্সরশিপ থাকা উচিত বলে প্রায়ই আওয়াজ ওঠে। আপনি কি মনে করেন?

আমার মতে ওটিটিতে কখনোই সেন্সরশিপ থাকা উচিত নয়। ছবি বা সিরিজ শুরুর সময় কোন বয়সীদের জন্য, তা উল্লেখ করা থাকে। তাই নিজের বয়স অনুযায়ী ছবি বা সিরিজ নির্বাচন করতে পারবেন। সার্টিফিকেশন হতে পারে। তবে সেন্সরশিপ খুবই অদ্ভুত ব্যাপার।

নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকি
ইনস্টগ্রাম

প্রশ্ন :

লকডাউনে আপনি চাষবাসের কাজে বেশ ব্যস্ত ছিলেন...

হ্যাঁ, এই লকডাউনে আমি দুটি কাজ খুব মন দিয়ে করেছি। লকডাউনের শুরুতে আমার গ্রাম বুধনাতে গিয়ে চাষবাসের কাজে নিজেকে ব্যস্ত রেখেছিলাম। এরপর এখান থেকে দেরাদুনে চলে গিয়েছিলাম। দেরাদুনে থাকাকালে লকডাউনে আমি ওটিটিতে প্রচুর সিনেমা দেখেছি। সারা বিশ্বের ২৫০টির বেশি সিনেমা দেখেছি।

প্রশ্ন :

কোনগুলো আপনার ভালো লেগেছে?

প্রচুর। এই মুহূর্তে মনে পড়ছে কিছু নাম। ‘ক্যাপারনাম’, ‘শপলিফটারস’, ‘দ্য রিমেন্স অব দ্য ডে’, ‘সিক্রেট ইন দেয়ার আইজ’সহ আরও কিছু ছবি। আসলে আমি আমার পছন্দের অভিনয়শিল্পী নির্বাচন করে তাঁর ছবি দেখেছি। অ্যান্থনি হপকিন্স, বেঞ্জামিন ওয়াশিংটনসহ আরও কিছু অভিনেতার সিনেমা আমার পছন্দের তালিকায় প্রথমে ছিল।

কাজ শেষে খেত থেকে ফিরছেন নওয়াজুদ্দিন।
ইনস্টাগ্রাম

প্রশ্ন :

আর হিন্দি ছবি?

সত্যি বলতে হিন্দি সিনেমা বা সিরিজ দেখা হয়নি। আমি শুধু দেশের বাইরের চলচ্চিত্রের দিকে মনোযোগ দিয়েছিলাম।

প্রশ্ন :

আপনার ছবি ‘বোলে চুড়িয়া’ কি ওটিটিতে মুক্তি পাবে?

এখনো এই ছবির ১০ শতাংশ শুটিং বাকি। তাই ছবির কাজ সম্পূর্ণ হলেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।