সৌমিত্রের কিডনি জটিলতা বাড়ছে

অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন।
ছবি:সংগৃহীত

অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে তাঁকে। তবে আগের তুলনায় শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে বলে মঙ্গলবার দুপুরে জানিয়েছেন বরেণ্য এ অভিনেতার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান চিকিৎসক অরিন্দম কর। সৌমিত্র ২২ দিন ধরে মিন্টো পার্কের বেলভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কলকাতা থেকে প্রকাশিত সেখানকার স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর অনলাইন সংস্করণগুলো সূত্রে জানা গেছে, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ বন্ধ হয়েছে। নতুন করে আর রক্তক্ষরণ হচ্ছে না। প্রস্রাবও কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে।

অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
ছবি:সংগৃহীত

অরিন্দম কর জানিয়েছেন, আজ দুপুরের পরে সৌমিত্রের শরীরে ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। মানবশরীরে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার অর্থ হলো কিডনি ঠিকমতো কাজ না করা।

এমন পরিস্থিতিতে তাঁকে রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি দেওয়া হবে কি না, তা দেখছেন হাসপাতালের নেফ্রলজিস্টরা। এখনো তিনি ভেন্টিলেশনে রয়েছেন। স্যাচুরেশন ৯৫ শতাংশের বেশি আছে। নিউমোনিয়ার যে প্যাচ পাওয়া গিয়েছিল, সেটা আর বাড়েনি।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

কেন নিউমোনিয়া হয়েছিল, সে কারণ খুঁজে পেয়েছেন তাঁরা। তাঁর চিকিৎসা চলছে।
তিনি আরও জানান, বেলভিউ হাসপাতালের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞসহ সব চিকিৎসক সৌমিত্রের চেতনা ফেরাতে ইনটিউবেশন মানে ভেন্টিলেশনের ওপরই নির্ভর করছেন। বর্ষীয়ান অভিনেতার স্নায়ুর চিকিৎসা চলছে। এখন প্ল্যাটিলেটের সংখ্যা স্বাভাবিক আছে। নতুন করে পরিমাণ কমেনি। প্ল্যাটিলেট কাউন্ট বাড়ানোর জন্য তাঁকে কিছু ওষুধ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাঁকে রক্ত দেওয়ার আয়োজন করা হয়েছে।
সৌমিত্রের চিকিৎসায় নিয়োজিত স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে কথা বলেছেন দেশ-বিদেশের বিখ্যাত সব স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। তাঁরা জানিয়েছেন, কোভিড–১৯ নেগেটিভ হওয়ার পরও সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত কোভিড এনকেফালোপ্যাথি থাকতে পারে।

আগের দিন সোমবার রাতেও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছিল। তাঁর রক্তে ইউরিয়ার পরিমাণ অনেকটাই বেশি ছিল। কিডনির অবস্থাও ভালো ছিল না। ফুসফুসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল।

পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
ছবি:ভাস্কর মুখার্জি

অন্ত্রে রক্তক্ষরণেরও আশঙ্কা থেকে যায়। ফলে উদ্বেগ বাড়ছিল চিকিৎসকদের। অভিনেতার বয়স ও কো-মর্বিডিটি তাঁর চিকিৎসার ক্ষেত্রে অন্যতম অন্তরায় বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। তবে ওষুধের মাধ্যমে তাঁকে সুস্থ করে তোলার কাজ চলছিল বলে জানিয়েছিলেন চিকিৎসক।
অক্টোবরের শুরু থেকে বাড়িতে থাকাকালে সৌমিত্রের শরীর ভালো যাচ্ছিল না। জ্বর এলেও করোনার কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। চিকিৎসকের পরামর্শে নমুনা পরীক্ষা করা হলে ৫ অক্টোবর তাঁর কোভিড-১৯ পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায়। ৬ অক্টোবর তাঁকে বেলভিউ নার্সিং হোমে ভর্তি করা হয়। সর্বশেষ ১৪ অক্টোবর নমুনা পরীক্ষায় তাঁর কোভিড-১৯ নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। এরপরই সৌমিত্র সুস্থ হতে থাকেন। যদিও কোভিড-১৯ ছাড়াও তাঁর শারীরিক নানা সমস্যা ছিল। সেসবের মধ্যে আছে প্রোস্টেট ক্যানসার, সিওপিডি, প্রেশার ও সুগার। গত মঙ্গলবার থেকে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে।
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বয়স এখন ৮৫ বছর। ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। অভিনয়, কবিতাচর্চা, রবীন্দ্রপাঠ, সম্পাদনা, মঞ্চনাটক—সব মিলিয়ে অনন্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।