সৌমিত্রের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

উপমহাদেশের প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। মস্তিষ্কে কোভিড এবং এনকেফ্যালোপ্যাথি রোগের কারণে প্রখ্যাত এ অভিনেতার  স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা এখনো কাটছে না। গতকাল শনিবার দুর্গাপূজার মহা অষ্টমীর দিনে বরং তিনি অনেকটাই চেতনাহীন ছিলেন। সৌমিত্রের চিকিৎসক দলের প্রধান ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ অরিন্দম কর জানিয়েছেন, আরও অবনতি হয়েছে তাঁর। স্নায়বিক সংকট বেড়েছে। চেতনা তেমন নেই বললেই চলে। তবে মস্তিষ্কে করোনার প্রভাব বর্তমান। তবে শরীরের অন্য কোনো অস্বাভাবিকতা ধরা পড়েনি। বরং দিনে দিনে বাড়ছে তাঁর আচ্ছন্নতা।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

তিনি আরও বলেছেন, এবার তাঁর বিকল্প পদ্ধতিতে চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যোগাযোগ করা হয়েছে দেশ-বিদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে। সৌমিত্রের চিকিৎসার ১৯ দিন কেটে গেলেও তাঁর স্বাস্থ্যের উন্নতি না হয়ে বরং অবনতিই বেড়েছে।

কলকাতার বেলভিউ নার্সিংহোমে (হাসপাতাল) সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় চিকিৎসাধীন। এ মাসের ৬ তারিখ থেকে তিনি ওই হাসপাতালের একটি কেবিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। কিন্তু এত দিন চিকিৎসায় তিনি সাড়া দিলেও গত পাঁচ দিন ধরে তাঁর আচ্ছন্নতা বেড়েছে। অসংলগ্ন কথা বলছেন।

পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়
ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

মুখ দিয়ে খেতে পারছেন না। খাওয়ানো হচ্ছে রাইলস টিউবে।
সৌমিত্রের চিকিৎসায় নিয়োজিত স্নায়ু বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যে কথা বলেছেন দেশ–বিদেশের প্রখ্যাত স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। তাঁরা বলেছেন, কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পরও সর্বোচ্চ ৯০ দিন পর্যন্ত কোভিড এনকেফ্যালোপ্যাথি থাকতে পারে। যদিও গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে স্নায়ু–সমস্যা প্রকট হওয়ায় বেড়ে যায় তাঁর আচ্ছন্নতা। চিকিৎসকেরা এরপরই বাড়িয়ে দেন স্টেরয়েডের মাত্রা। বিশেষ করে তাঁর প্রোস্টেট ক্যানসার এখন ছড়িয়ে পড়েছে তাঁর মস্তিষ্কে। অন্যদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সৌমিত্রের গ্লাসগো কোমা স্কেল অনেকটাই নেমে যাওয়ায় চিন্তিত হয়ে পড়েন তাঁর মেডিকেল টিমের ১৬ চিকিৎসকই। এরপর বৈঠক করে সৌমিত্রের স্টেরয়েডের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। একজন সুস্থ শরীরের মানুষের সাধারণত গ্লাসগো স্কেলের মাত্রা ১৫ থাকে।

কিন্তু গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এই মাত্রা ৯–এ নেমে যায়। বেড়ে যায় তাঁর আচ্ছন্নতা। এই মাত্রা ৩–এ পৌঁছালে সাধারণ মানুষের ব্রেন ডেথ হয়। তাই এই মাত্রা কমে যাওয়ায় চিকিৎসকেরা চিন্তিত হয়ে পড়েন।

ত্রিপুরেশ্বর মন্দিরের সামনে `গণশত্রু` সৌমিত্র।

১ অক্টোবর থেকে বাড়িতে থাকাকালীন তাঁর শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। শরীরে জ্বর ওঠে। তবে করোনার কোনো উপসর্গ দেখা যায়নি। এরপরই চিকিৎসকের পরামর্শে তাঁর করোনার নমুনা পরীক্ষা করা হলে ৫ অক্টোবর তাঁর করোনার পজিটিভ রিপোর্ট আসে। ৬ অক্টোবর মঙ্গলবারই তাঁকে ভর্তি করানো হয় বেলভিউ নার্সিংহোমে। নার্সিংহোমে সর্বশেষ ১৪ অক্টোবর তাঁর করোনা নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ রিপোর্ট আসে। এরপরই সৌমিত্র সুস্থ হতে থাকেন। যদিও তাঁর করোনা ছাড়া অন্যান্য রোগ ছিল। এর মধ্যে রয়েছে প্রোস্টেট ক্যানসার, সিওপিডি, প্রেসার, সুগাারের মতো রোগ। তার ওপরে ছিল করোনা পজিটিভ।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বয়স এখন ৮৫ বছর। ১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি তিনি জন্মগ্রহণ করেন পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। অভিনয়, কবিতাচর্চা, রবীন্দ্রপাঠ, সম্পাদনা, মঞ্চনাটক—সব মিলিয়ে অনন্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

উত্তম কুমার ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, কলকাতায় নির্মিত দেবদাস (১৯৭৯)

সৌমিত্র অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘অশনিসংকেত’, ‘সোনার কেল্লা’, ‘দেবদাস’, ‘নৌকাডুবি’, ‘গণদেবতা’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘আতঙ্ক’, ‘গণশত্রু’, ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ’, ‘তিন কন্যা’, ‘আগুন’, ‘শাস্তি’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’ ইত্যাদি। অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন সৌমিত্র। ২০০৪ সালে তাঁকে পদ্মভূষণে সম্মানিত করা হয়। এ ছাড়া জাতীয় পুরস্কার, দাদাসাহেব ফালকেসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। অভিনয়ের পাশাপাশি আবৃত্তি, রবীন্দ্রপাঠ, সম্পাদনা, নাট্যসংগঠন করেছেন তিনি।

নাটকের মঞ্চে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে।
ছবি: প্রথম আলো