‘হুঁশ আসার পর রাগে চিৎকার করে কেঁদেছিলাম’

বিদ্যা বালান

বিদ্যা বালান মানেই পর্দায় ‘শক্তিশালী’ কোনো নারীর মুখ। তিনিই ছবির নায়ক, তিনিই নায়িকা। এবার ওটিটিতে বিদ্যা আসছেন বলিউডের আরেক দাপুটে অভিনেত্রী শেফালি শাহর সঙ্গে। আমাজন প্রাইম ভিডিওর থ্রিলারধর্মী ‘জলসা’ ছবিতে বিদ্যা আর শেফালিকে একসঙ্গে দেখা যাবে।
মুম্বাইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে বলিউড অভিনেত্রী বিদ্যা বালানের সঙ্গে আলাপচারিতার শুরুতেই উঠে এল ‘জলসা’ ছবির কথা। এই ছবিতে তাঁকে দেখা যাবে এক সাংবাদিকের চরিত্রে। ‘জলসা’ ছবিতে তিনি নিজের চরিত্রের প্রস্তুতির প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ফিল্মি ভ্রমণে অসংখ্য সাংবাদিক আর সম্পাদকের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। তাই আমার আলাদা করে কোনো সাংবাদিকের সঙ্গে দেখা করা বা স্টুডিওতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়েনি। আর আমাকে প্রস্তুত করার জন্য পরিচালক সুরেশ ত্রিবেণী ছিলেন।’

বিদ্যা বালান

বিদ্যা এই আলাপচারিতায় জানান যে শুরুতে তিনি ‘জলসা’ ছবিটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

এর কারণ হিসেবে এই বলিউড অভিনেত্রী বলেন, ‘আসলে শুরুতে এই ছবি করার সাহস আমি পাইনি। কারণ, আমার অভিনীত চরিত্রটি ধূসর। তাই আমার মনে হয়েছিল, যে মানুষ আমাকে এই ধূসর চরিত্রে যথাযথভাবে গ্রহণ না করতে পারে। আর আমার সমালোচনা করতে পারে। সত্যিই আমি সাহস পাচ্ছিলাম না। তবে এই ছবির চিত্রনাট্য আমার দারুণ পছন্দ হয়েছিল। আসলে অতিমারি আমার চিন্তাভাবনা বদলে দেয়। আমার মনে হয়েছিল, প্রত্যেকে প্রত্যেকের ক্ষেত্রে সঠিক। তাই আমরা কারোর সমালোচনা করতে পারি না। আর যখন আমার মনে এই ধরনের অনুভূতির জন্ম নিল, তখন আমি মায়ার চরিত্রটি করতে রাজি হলাম।’

শুরুতে তিনি ‘জলসা’ ছবিটি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

‘দ্য ডার্টি পিকচার’, ‘তুমহারি সুলু’, ‘শকুন্তলা দেবী’, ‘শেরনি’সহ আরও অনেক ছবিতে নিজের অভিনয়ক্ষমতা দেখিয়েছেন বিদ্যা। বারবার নারীকেন্দ্রিক ছবিতে অভিনয় করার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনাদের যদি মনে হয় এটা “স্টেরিওটাইপ” চিন্তাভাবনা। তাহলে আমি বলব, এটা একটা দারুণ “স্টেরিওটাইপ”। আমরা এখন দারুণ দারুণ চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পাচ্ছি। মূল চরিত্রে অভিনয় করছি। আমি অবাক হই, মানুষ যখন বলে যে এই ছবির মূল চরিত্রে এক নারী অভিনয় করছেন। আপনি কখনোই তা পুরুষ অভিনেতার ক্ষেত্রে শুনতে পাবেন না। আমাদের এসব বলা বন্ধ করা উচিত।’ বিদ্যা আরও বলেন, ‘২০০৭-২০০৮ সাল থেকে আমি নিজেকে এ ব্যাপারে বদলেছি। তখন কিছু কিছু ছবিকে না বলতে শুরু করে দিয়েছি। এই সময়ে আমি “ইশকিয়া”, “পা”-এর মতো ছবি করা শুরু করেছি। আর একটা বিষয় মানুষ সব সময় বলে থাকে যে অভিনেত্রীদের অভিনয়জীবন খুবই কম। আমি এ কথায় মোটেও বিশ্বাস করি না।’

বিদ্যা বালান

বিদ্যাকে এখন বলিউডের শীর্ষস্থানীয় নায়কদের সঙ্গে সচরাচর দেখা যায় না। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আসলে আমি প্রথম সারির নায়কদের সঙ্গে ছবি করার প্রস্তাব এখন আর পাচ্ছি না। আমি এখন ব্যতিক্রমী ও দাপুটে চরিত্রে, দুর্দান্ত কনটেন্টে আর দারুণ গল্পে কাজের সুযোগ পাচ্ছি। তবে আমি দুর্দান্ত সব অভিনেতার সঙ্গেও কাজ করেছি। অক্ষয় কুমারের সঙ্গে ‘মিশন মঙ্গল’, ইমরানের (হাসমি) সঙ্গেও একটা ছবিতে অভিনয় করেছি।’

বিদ্যা বালান

বিদ্যা মনে করেন যে পুরুষশাসিত বলিউড সাম্রাজ্যে যে বদল এসেছে, তা রাতারাতি নয়, সময়ের সঙ্গে এখানে বদল এসেছে। আর এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘একটা সময় শ্রীদেবী, মাধুরী দীক্ষিতের যুগ ছিল। তাঁদের শক্তিশালী নারী চরিত্রে দেখা যেত। কিন্তু তারপর কিছুদিন আর সেই দাপট দেখা যায়নি। তবে গত ১২ বছরে আবার বদল এসেছে। আর এ সবকিছুর জন্য আমি মীনা কুমারী, হেমামালিনী, রেখা, জয়া বচ্চন, শাবানা আজমির মতো অভিনেত্রীদের ধন্যবাদ জানাতে চাই। তাঁদের অবদানের জন্যই আজ আমরা এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি। তাঁরাই এক বিশেষ ক্ষেত্রের জন্ম দিয়েছেন। আমার মনে আছে, অনেকে আমায় বলেছেন যে অভিনেত্রীরা সারা জীবনে দুটি কিংবা একটা শক্তিশালী চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। তবে এখন এ সবকিছু বদলেছে। এ প্রজন্মের অভিনেত্রীদের দিকে তাকিয়ে দেখুন শুধু। তাপসী পান্নু, আলিয়া ভাট, কঙ্গনা রনৌত, দীপিকার মতো অভিনেত্রীরা দারুণ কাজ করছে।’

বিদ্যা বালান

‘জলসা’ ছবির ট্রেলারে বিদ্যাকে বেশ কিছু দৃশ্যে রাগতে দেখা গেছে৷ ব্যক্তিগত জীবনে কোন কোন বিষয়ে তিনি রেগে যান, জবাবে এই বলিউড নায়িকা বলেন, ‘অনেক কারণে আমি রেগে যাই। তবে আমি নিজেকে রাগী মানুষ হিসেবে দেখতে মোটেও পছন্দ করি না। আমার সবচেয়ে বেশি রাগ হয়, যখন কেউ আমাকে বা আমার আশপাশের মানুষকে অসম্মান করে। এটা আমি কখনোই মেনে নিতে পারি না। আগে আমি রেগে গেলে তা প্রকাশ করতে পারতাম না। নিজে গুমরে মরতাম। তবে এখন আমি তা সঙ্গে সঙ্গে উগরে ফেলি।’ রেগে গিয়ে বিদ্যা একবার এক অদ্ভুত কাণ্ড ঘটিয়েছিলেন। চিত্রনির্মাতা কে বালাচন্দরের দুটি ছবি থেকে বাদ পড়েছিলেন তিনি। এই ঘটনার রেশ টেনে বিদ্যা বলেন, ‘আমি তখন এতটাই রেগে গিয়েছিলাম যে চড়া রোদের মধ্যে মেরিন ড্রাইভ থেকে বান্দ্রা হেঁটে এসেছিলাম। আমার হুঁশ ছিল না যে আমি কয়েক ঘণ্টা ধরে হেঁটে চলেছি। হুঁশ আসার পর রাগে চিৎকার করে কেঁদেছিলাম।’

বিদ্যা বালান

জীবনে অসংখ্যবার প্রত্যাখ্যানের শিকার হয়েছেন বিদ্যা। ১৩টি ছবি থেকে বাদ পড়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে এই বলিউড তারকা বলেন, ‘একবার এক প্রযোজক তাঁর ছবি থেকে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে আমাকে বাদ দিয়েছিলেন। আমার বদলে অন্য কারুকে তিনি নিয়েছিলেন। আর সেই প্রযোজক আমাকে এতটাই কুৎসিত প্রতিপন্ন করেছিলেন যে ছয় মাস আমি নিজেকে আয়নায় দেখার সাহস পাইনি।’