৭০-এ রজনীকান্ত, জনপ্রিয় যেসব সংলাপ

রজনীকান্তের পরবর্তী ছবি ‘দরবার’। নির্মাতা তাঁর ৭০তম জন্মদিনে প্রকাশ করলেন ছবির একটি বিশেষ পোস্টার। ছবি: টুইটার
রজনীকান্তের পরবর্তী ছবি ‘দরবার’। নির্মাতা তাঁর ৭০তম জন্মদিনে প্রকাশ করলেন ছবির একটি বিশেষ পোস্টার। ছবি: টুইটার

রজনীকান্ত ভারতীয় সিনেমার জনপ্রিয় এক নাম। জন্ম ১২ ডিসেম্বর ১৯৫০–এ। ৭০-এ পা দিলেন এই সুপারস্টার। কিন্তু থালাইভার (গুরু বা ওস্তাদ) যে বয়স বাড়ে না। তিনি চিরযুবা। চার দশকের বেশি সময় ধরে ভারতীয় ছবির দুনিয়ায় রাজ করছেন রজনীকান্ত। তাঁর নিজস্ব কায়দায় বলা প্রতিটি সংলাপ মুহূর্তে মাতিয়ে দেয় দর্শককে।

পর্দায় অভিষেক ১৯৭৫ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত তামিল সিনেমা ‘অপূর্ব রাগাঙ্গাল’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সিনেমায় অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্রসহ অন্যান্য দেশের সিনেমাতেও অভিনয় করেছেন। ভারত সরকার রজনীকান্তকে ‘পদ্মভূষণ’ ও ‘পদ্মবিভূষণ’ দিয়ে সম্মানিত করেছে।

রজনীকান্তের ছবি মুক্তি মানে শুধু ছবি মুক্তি নয়। একটা উৎসবের ব্যাপার। কারণ থালাইভার ছবি মুক্তি মানেই তামিলে সব বন্ধ। অফিস আর কাজ ফেলে বা ছুটি নিয়ে সবাই হলে ছোটেন বলে অনেক অফিস ছবি মুক্তির দিনে বন্ধ রাখা হয়।

নাম শিবাজি রাও গায়কোয়াড, বিশ্ববাসী চেনে রজনীকান্ত
রজনীকান্তের আসল নাম শিবাজি রাও গায়কোয়াড। বিশ্ববাসী চেনে রজনীকান্ত হিসেবে। এক মারাঠি পরিবারে জন্ম। ১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বরে। মা রমাবাই ছিলেন গৃহবধূ ও বাবা রামোজি রাও গায়কোয়াড ছিলেন পুলিশের কনস্টেবল। স্ত্রী লতা রঙ্গচারির সঙ্গে আলাপ হয় যখন তিনি রজনীকান্তের সাক্ষাৎকার নিতে এসেছিলেন। রজনীকান্তের বড় মেয়ে ঐশ্বরিয়া বিয়ে করেছেন দক্ষিণী তারকা ধানুশকে। রজনীকান্তের দ্বিতীয় ও ছোট মেয়ে সৌন্দর্যা বিয়ে করেছেন শিল্পপতি অশ্বিন রামকুমারকে।

হিন্দি ‘আন্ধা কানুন’ ছবির সেটে রজনীকান্ত ও বলিউড় শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চন। ছবি: সংগৃহীত
হিন্দি ‘আন্ধা কানুন’ ছবির সেটে রজনীকান্ত ও বলিউড় শাহেনশাহ অমিতাভ বচ্চন। ছবি: সংগৃহীত

২০০৭ সালে, ‘শিবাজি’ ছবিতে অভিনয় করে ২৬ কোটি টাকা উপার্জন করেন রজনী। সেই সময়ে, জ্যাকি চ্যানের পর, তিনিই ছিলেন এশিয়ার সর্বোচ্চ ‘পেইড অ্যাক্টর’। ২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কোচাদাইয়া’ অ্যানিমেটেড ছবিতে রজনী অভিনয় করেন তিনটি চরিত্রে। তামিল, হিন্দি, মারাঠি, এমনকি মার্কিন ছবি নিয়ে রজনীকান্ত অভিনয় করেছেন ১৭৫-এরও বেশি ছবিতে।

থালাইভা এক পৌরাণিক কিংবদন্তি, আক্ষরিক অর্থেই সুপারস্টার। বাসচালকের সহযোগী থেকে দক্ষিণের আধিপত্য, আধুনিক ভারতে ইন্টারনেট মেমে, রজনীকান্ত ইতিহাস তৈরির প্রতি পদক্ষেপে আসীন। আক্ষিরকই থালাইভা তিনি। ‘নম্বর এক আর দো কেয়া ম্যায় একশো হু’—এই উক্তি দম্ভোক্তি মনে হলেও বলার সময় অদ্ভুত আত্মবিশ্বাস ছিল তাঁর গলায়। শঙ্করের পরিচালনায় ‘টু জিরো’ ছবির সংলাপ ছিল এটা। দক্ষিণী সুপারস্টার এমন এক অভিনেতা যিনি ২০১৯ সালে ‘কালা’ ও ‘টু জিরোর মতো ব্লকবাস্টার ছবি উপহার দিতে পারেন এই বয়সেও।

যেভাবে শুরু
১৯৭৫ সাল অপূর্ব রাগানগাল ছবিতে কমল হাসান মুখ্য চরিত্রে। বিপরীতে এক নতুন মুখ শিবাজি রাও গায়কোয়াড, তিনি আজকের রজনীকান্ত। সীমিত স্ক্রিন টাইম থাকায় দর্শক খেয়াল না করলেও সেদিন পরিচালকদের চোখে পড়েছিলেন এই তরুণ। সেই বছরই বিভিন্ন ছবিতে ভিলেনের চরিত্রে দেখা যায় তাঁকে। এর পরের বছরে (১৯৭৬) কে বালাচান্দ তাঁকে কাস্ট করলেন ত্রিকোণ প্রেমের ছবিতে। শ্রীদেবী, কমল হাসান ও রজনীকান্ত একসঙ্গে। ছবির নাম মন্দরু মুদিচ্ছু। ছবিতে নিজের মুনশিয়ানা প্রমাণ করে দেন এই কিংবদন্তি।

আশির দশকের শেষের দিকে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে থালাইভার। এরপরে টার্নিং পয়েন্ট অমিতাভ বচ্চনের সঙ্গে বিজয় ছবিতে দেখা যায় তামিল সুপারস্টারকে। তামিলের ‘ব্যাড বয়’ পরিণত হলো নায়কে। বলিউডে পরে রজনীকান্ত অভিনীত ‘আন্ধা কানুন’, ‘চালবাজ’ এবং ‘হাম’-এর মতো ছবিতে সাফল্য পেলেন। প্রায় চার দশকের বেশি সময়ের অভিনয় জীবনে এক শরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন রজনীকান্ত।

চার দশকের বেশি সময় ধরে হিন্দি ও তামিল ছবির দুনিয়ায় রাজ করছেন রজনীকান্ত। পর্দায় তাঁর নিজস্ব কায়দা, তাঁর বলা প্রতিটি সংলাপে মেতে ওঠে দর্শকেরা। জন্মদিনে তাঁর ট্রেডমার্ক সংলাপের থেকে বেছে নেওয়া হলো কয়েকটি জনপ্রিয় সংলাপ।

পরিবারের সঙ্গে রজনীকান্ত। ছবি: টুইটার
পরিবারের সঙ্গে রজনীকান্ত। ছবি: টুইটার

ভায়াথিনাইল
ছবির নেতিবাচক চরিত্রে দেখা গিয়েছিল রজনীকান্তকে। ছিলেন কমল হাসান এবং শ্রীদেবীও। এই ছবির বিখ্যাত সংলাপ ‘ইধু ইপ্পাদি ইরুক্কু’ (এটা কেমন) আজও তাঁর ভক্তদের মনে গেঁথে রয়েছে।

মুরাত্তু কালাই
ছবিতে এক গ্রাম্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন থালাইভা। তাঁর মুখে ‘সেভিদুভেন’ (তোমার মাথা আমি কেটে ফেলব) যেন অন্য মাত্রা পেয়েছিল।

ভাসা
যত দিন তামিলনাড়ুর রাস্তায় অটোরিকশা চলবে তত দিন রজনীকান্তের এই সংলাপ জনপ্রিয় থাকবে... ‘নান ওরু থাডাভা সোন্না, নোরু থাডাভা সোন্না মাদিরি’। অর্থাত্‍ আমি একবার যখন কিছু বলে দিই সেটা এক শ বার বলারই সমান। বক্স অফিসে সাড়া ফেলা এই ছবিতে রজনীকান্তকে দেখা গিয়েছিল ট্যাক্সিচালকের ভূমিকায়।

এ বয়সেও ‘কালা’র মতো ছবি দর্শককে উপহার দিয়েছেন। ছবি: টুইটার
এ বয়সেও ‘কালা’র মতো ছবি দর্শককে উপহার দিয়েছেন। ছবি: টুইটার

অরুণাচালাম
এই ছবিতে তাঁর বিখ্যাত সংলাপ ‘আন্দাভান সোলরান, অরুণাচলম সেইরান’ (ঈশ্বার যা বলেন, অরুণাচলম তাই করে)।

পাদায়াপ্পা
রজনীকান্তের জীবনের আরও এক সফল ছবি। আর এতে তাঁর বিখ্যাত সংলাপ ‘এঁ ভাজি, থানি ভাজি’ অর্থাত্‍ আমার রাস্তা আমার নিজের। আজও সমান জনপ্রিয় । এই সংলাপকে ট্রিবিউট জানাতে তাঁর আগামী ছবি ‘দরবার’-এ থানি ভাজি নামে একটি গানও রয়েছে।

মুথু
এই ছবিটি জাপানেও দারুণ ব্যবসা করেছিল। থালাইভার মুখে নান এপ্পো ভারুভেন, এপদি ভারুভেন্নু ইয়ারকুম থেরিয়াথু...আনা ভারা ভেনদিয়া নেরাথিলে ভানদিদভেন কেউ জানে না আমি কীভাবে বা কখন আসব। আমি আসব যখন সঠিক সময় আসবে তখন। সংলাপটি আজও সমান জনপ্রিয়।

তামিল ছবিতে রজনীর উপস্থিতি মানেই বাড়তি কিছু। ছবি: সংগৃহীত
তামিল ছবিতে রজনীর উপস্থিতি মানেই বাড়তি কিছু। ছবি: সংগৃহীত

শিবাজি
এই ছবির একটি নয়, দুটি সংলাপ দারুণ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। সুম্মা পেরে কেট্টা আথরুদুলা (আমার নাম ডাকলে এই পৃথিবী টুকরো টুকরো হয়ে যায়) এবং কান্না পান্নি থান কুটামা ভারুম আনা সিংঘাম সিঙ্গল থান ভারুম (শুয়োররা সব সময়ে দল বেঁধে আসে কিন্তু বাঘ সব সময়ে একাই হাঁটে)।

‘দরবার’–এর পোস্টার টুইটারে
রজনীকান্তের পরবর্তী ছবি ‘দরবার’। ছবির নির্মাতা তাঁর ৭০তম জন্মদিনে প্রকাশ করলেন ছবির একটি বিশেষ পোস্টার। পোস্টারে রজনীকান্ত তাঁর সেই রাজকীয় ঢঙে হেঁটে আসছেন। প্রকাশ্যে আসার কিছু সময়ের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায় এই পোস্টারের ছবিটি।

এ আর মুরুগুদাস পরিচালিত ‘দারবার’ ছবি আগামী বছর মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। এ ছবির দিয়ে প্রথমবার একসঙ্গে কাজ করতে যাচ্ছেন রজনীকান্ত এবং পরিচালক এ আর মুরুগুদাস। অডিও লঞ্চের সময়ে পরিচালকের সঙ্গে প্রথমবার কাজ করা নিয়ে রজনীকান্ত বলেছিলেন, ছবি পরিচালনার জন্যে এ আর মুরুগুদাস ছাড়া আর কারও কথা ভাবতেই পারিনি আমরা। বহুদিন ধরেই ওঁর সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা ছিল আমার।