‘আগামীকাল’–এর যাত্রা আজ থেকে

নির্মাণের পেছনের গল্প বা ‘বিহাইন্ড দ্য সিন’ নিয়ে তৈরি সংকলিত ভিডিও অনেক সিনেমার শেষেই দেখানো হয়। যেখানে মূল সিনেমার আড়ালের কিছু গল্প দেখানো হয়। এই সিনেমা নিয়ে তেমন কোনো ভিডিও হলে সেটার শিরোনাম হতে পারে ‘নাটক থেকে সিনেমা’। কারণ, বছর তিনেক আগে নাটক নিয়ে আলাপ করতে গিয়েই এই সিনেমার শুরু। ২০১৯ সালের সেই আলাপের তিন পাত্র–পাত্রী ছিলেন প্রযোজক-অভিনেতা টুটুল চৌধুরী, অভিনেত্রী সূচনা আজাদ ও পরিচালক অঞ্জন আইচ। মূলত একটি টিভি নাটক নিয়ে কথা বলতে একসঙ্গে হয়েছিলেন তাঁরা। হুট করেই এক ফাঁকে নিজের সিনেমার পরিকল্পনা ফেঁদে বসেন অঞ্জন। ফল, হাতেনাতে। প্রায় কোনো পূর্ব প্রত্যাশা ছাড়া দেওয়া অঞ্জনের সেই প্রস্তাব লুফে নেন প্রযোজক টুটুল।

শোনামাত্রই গল্পটি থেকে সিনেমা করতে রাজি হয়ে যান। বছর তিনেক আগের সেই ঘটনার স্মৃতি এখনো টাটকা অঞ্জনের মনে, ‘নাটকের প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলার এক ফাঁকে গল্পটি শোনাই। বলেছিলাম, এটি আমার স্বপ্নের প্রজেক্ট। এটা দিয়েই বড় পর্দায় কাজ শুরু করতে চাই। গল্প শুনতে আগ্রহ দেখান প্রযোজক। শোনার পর নাটকের আলাপ বাদ দিয়ে সিনেমা নিয়ে আগ্রহী হন তিনি। তখনই পাকা কথা হয়। এরপর চিত্রনাট্য লিখে ফেললাম। এক মাসের মাথায় শুরু হলো শুটিং।’

নাটকের আলাপ থেকে সিনেমায় রূপ নেওয়া সেই চলচ্চিত্রই ‘আগামীকাল’। আজ ৩ জুন যা মুক্তি পাচ্ছে প্রেক্ষাগৃহে। ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্সের সব শাখা, ব্লকবাস্টার সিনেমাসসহ দেশের ৩০টি প্রেক্ষাগৃহে ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে। এই ছবি দিয়েই বড় পর্দার পরিচালক হিসেবে শুরু হচ্ছে অঞ্জন আইচের। যা নিয়ে বেশ রোমাঞ্চিত তিনি, ‘অনেক দিন থেকেই নাটক নির্মাণ করছি। তবে ভেতরে-ভেতরে ঠিকই লক্ষ্য ছিল সিনেমা। সেই স্বপ্ন আজ সত্যি হচ্ছে।’ অঞ্জন আরও খুশি বেশ সহজেই প্রথম সিনেমার চ্যালেঞ্জ উতরে যাওয়ায়। এ জন্য তিনি কৃতজ্ঞ ছবির পুরো টিমের কাছে।

অঞ্জন বলেন, ‘প্রথম সিনেমাতেই প্রযোজক থেকে শুরু করে এত সুন্দর একটা টিম পেয়েছি। শুটিংয়ে যখন যা দরকার হয়েছে, পেয়েছি। গল্পের প্রয়োজনে ঢাকা, কক্সবাজার, বান্দরবান, গাজীপুর, সাভার ও মানিকগঞ্জসহ অনেক লোকেশনে কাজ করতে হয়েছে। এতগুলো লোকেশনে কাজ সহজ নয়। বিশেষ করে বাজেটের একটা সীমাবদ্ধতা তো থাকেই। কিন্তু আমার সমস্যা হয়নি। প্রযোজক পুরো স্বাধীনতা দিয়েছিলেন।’

কোভিডের কারণে কয়েক বছর ধরে দেশে ছবি মুক্তি অনিয়মিত হয়ে পড়েছিল। মাঝে বেশ কয়েকটি মুক্তি পেলেও সেভাবে দর্শকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। তাই দর্শকদের হলে নিয়ে আসা যে কত বড় চ্যালেঞ্জ, সেটা ভালোই জানা আছে পরিচালকের। ছবিটি নিয়ে নিজের প্রত্যাশা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দর্শককে হলে আনতে পারলেই আমি খুশি। ছবিটিতে বড় বড় তারকা নেই। তাই দর্শকের হলে নিয়ে আসা কঠিন। তবে এটা বলতে পারি, হলে এলে কেউ হতাশ হবেন না। দর্শকের মুখে মুখে ভালো লাগাটা ছড়িয়ে পড়লে, পরে ছবিটি দেখতে আরও দর্শক আগ্রহী হবেন।’
মোটাদাগে আগামীকাল-এর গল্প দুই মেয়ের পারস্পরিক বিরোধ। এই বিরোধের মধ্যে ধীরে ধীরে অন্যান্য চরিত্র আসে। অঞ্জন বলেন, ‘আমাদের সিনেমা সাধারণত পুরুষপ্রধান হয়ে থাকে। এই ছবিতে কিছুটা ব্যতিক্রম ঘটিয়েছি। নারীবাদ নিয়ে বক্তব্য তুলে ধরেছি। গল্প সম্পর্কে এক কথায় বলতে পারি, দর্শকদের জন্য শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চ অপেক্ষা করছে।’

ছবিতে দুই চরিত্র—রুপা ও অবন্তীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন জাকিয়া বারী মম ও সূচনা আজাদ। সূচনা আগে ‘আব্বাস’ নামে একটি সিনেমায় অভিনয় করলেও এবারই পরিপূর্ণ নায়িকা হয়ে আসছেন। প্রধান অভিনেত্রীর চরিত্রে অভিনয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সব সময়ই চাইতাম সিনেমার নায়িকা হতে। সেই সুযোগ এই ছবিতে পেয়েছি। এখানে অভিনয়ের অনেক সুযোগ ছিল।’
আগামীকালে সূচনার দুই রূপ দেখা যাবে। একটা রূপে দেখা যাবে আবেগপ্রবণ সূচনাকে। আবার তাঁকে দেখা যাবে প্রতিশোধপরায়ণ নারীর রূপেও। তবে চরিত্রের দুই রূপ ফুটিয়ে তুলতে বেশ কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে সূচনাকে, ‘চরিত্রটি নিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে, পড়াশোনা করতে হয়েছে। পরিচালক ও সহশিল্পীরা সহযোগিতা করেছেন। শুটিংয়ে বলা যায় চরিত্রের মধ্যে ডুবে ছিলাম।’ সব মিলিয়ে প্রথম নায়িকা হিসেবে দর্শকের সামনে হাজির হতে তর সইছে না সূচনার, ‘এরই মধ্যে ছবির ট্রেলার, গান প্রকাশিত হয়েছে। যেগুলো দেখে সামাজিক মাধ্যমে দর্শকেরা ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন। যেগুলো ভালো লেগেছে। অনেক দর্শকই জানিয়েছেন তাঁরা প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে ছবিটি দেখার জন্য অপেক্ষা করছেন।’

ছবিতে মম ও সূচনা ছাড়াও আছেন মামনুন ইমন। সাফায়েত চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। ছবিতে নিজের চরিত্র সম্পর্কে ইমন বলেন, ‘এখানে আমাকে নায়ক বলা যাবে না। গল্পই এই ছবির হিরো। গল্পের জাদু শেষ পর্যন্ত দর্শককে টেনে নিয়ে যাবে।’
আগামীকাল ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন আশিষ খন্দকার, সাবেরী আলম, ফারুক আহমেদ, শতাব্দী ওয়াদুদ, টুটুল চৌধুরী, সুজাত শিমুল প্রমুখ।