আমার কোনো গডফাদার ছিলেন না: রোজিনা
ঢালিউড চলচ্চিত্র তাঁকে বানিয়েছে আজকের অভিনেত্রী রোজিনা, যিনি নিজের চেষ্টায় ধীরে ধীরে এগিয়েছেন। কবরী, ববিতা, শাবানাদের পাশে একটু একটু করে জায়গা করে নিয়েছেন। আজ এই অভিনেত্রী রোজিনার জন্মদিন। সম্প্রতি তিনি সেন্সর বোর্ডের সদস্য হয়েছেন, ক্যারিয়ারে সংগ্রাম, সিনেমা মুক্তিসহ নানা প্রসঙ্গে কথা বললেন এই অভিনেত্রী।
প্রশ্ন :
শুভ জন্মদিন!
ও-ও তোমরা মনে রেখেছ! আমি তো মনে করেছিলাম, এবার রোজার মধ্যে তেমন কেউ খোঁজখবর নেবে না। অনেক ধন্যবাদ।
প্রশ্ন :
কেমন কাটছে দিনটা?
ভেবেছিলাম রোজার মধ্যে কে আর তেমন খবর নেবে! রাত বারোটার দিকে দেখি, আমার দরজায় নক হচ্ছে। উঠে দেখি, ওমা কেক, এটা-সেটা নিয়ে ভাই, বোন, তাঁদের সন্তানেরা সবাই হাজির। একদম সারপ্রাইজড হয়ে গেছি। আমি তো জন্মদিন পালন করি না। সবাই ভালোবাসে, এটাই বড় পাওয়া। এখন সবার ইফতার ও খাবার তৈরি করছি।
প্রশ্ন :
দিনটিতে অতীতে ফিরে যান কখনো?
হ্যাঁ, মা–বাবার কথা খুব মনে পড়ে। মা তো এক দিন আগে থেকে আমার পছন্দের খাবার তৈরি করতেন। নারকেল দিয়ে জর্দা সেমাই, মোরগ–পোলাও কত কী যে রান্না করতেন! নানিবাড়ি থেকে খাবার আসত। সবার ভালোবাসার সেসব দিনই স্মৃতিকাতর করে দেয়।
প্রশ্ন :
অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো অভিমান আছে?
ক্যারিয়ার নিয়ে আমার কখনোই কোনো অভিমান ছিল না, নেই। স্বপ্ন দেখেছিলাম নায়িকা হব, হয়েছি। তবে চরিত্রের দিকে আরও কিছু সাহিত্যনির্ভর সিনেমায় অভিনয়ের ইচ্ছা ছিল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলামসহ অনেক লেখকের সাহিত্য নিয়ে প্রচুর কাজ হতে পারত, তাহলে ইন্ডাস্ট্রি আরও সমৃদ্ধ হতো। মানুষ হিসেবে এমন কিছু অপ্রাপ্তি থাকবেই। নায়িকা হিসেবে আমি সফল।
প্রশ্ন :
ক্যারিয়ারে কখনো কি কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন?
আমি চলচ্চিত্রে এত দূর এসেছি নিজের চেষ্টায়। আমার কোনো গডফাদার ছিলেন না, যিনি আমাকে হাতে ধরে শিখিয়েছেন বা সহযোগিতা করেছেন। প্রযোজক, পরিচালক, সহকর্মীরা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। তাঁরা চেষ্টা করেছেন, আমার ওপর যেন খারাপ কোনো ছায়া না পড়ে, সে জন্য তাঁরা আমাকে সাহায্য করেছেন, এখনো তা–ই। তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। তবে নিজে পথ চলতে গিয়ে আহামরি বা ক্ষতিকর ভুল আমি করিনি।
প্রশ্ন :
একা পথ চলতে গিয়ে কতটা বাধা পেয়েছেন?
তখন এত অভিনয়শিল্পী, মডেল, চ্যানেল ছিল না। মাধ্যম বলতে ছিল বিটিভি আর সিনেমা। ওই সময় কাজ করতেন কবরী ম্যাডাম, শাবানা, ববিতা। মাত্র সুচন্দা ম্যাডাম কাজ করছিলেন, অঞ্জনা কাজ করছিলেন। তাঁদের পেয়ে আমি ভাগ্যবতী। তেমন কোনো বাধা পেতে হয়নি। কিন্তু এমনও হয়েছে, চিত্রনায়িকা হিসেবে আমার নাম দিয়ে প্রেস কনফারেন্স করেছে। পরে দেখা গেল আমাকে বাদ দিয়ে অন্য নায়িকা নিয়েছে। তিন–চারটা সিনেমা থেকে বাদ পড়েছি। সেসব সময় ছিল কষ্টদায়ক। পরে ‘রাজ মহল’ সিনেমার প্রস্তাব আসে। তড়িঘড়ি সিনেমাটির কাজ শেষ হয়। সিনেমাটির মুক্তির পর আমাকে আর বেগ পেতে হয়নি, পেছনে তাকাতে হয়নি।
প্রশ্ন :
আপনি সফল হয়ে উঠলেন, তখন কি কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতেন?
আমি যাঁদের ছবি দেখে দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছি, পরে তাঁদের সঙ্গে এসে কাজ করেছি। আমার প্রতিদ্বন্দ্বী কাদের মনে করব? ম্যাডাম কবরী, শাবানা, ববিতাদের সামনে সেই দুঃসাহস কখনোই ছিল না। তাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি, সম্মান করেছি। তাঁরা অনেক সাহায্য করেছেন। পরে যাঁরা এসেছেন অঞ্জু, দিতি, অরুণা সবাই মিলেই কাজ করেছি। প্রতিদ্বন্দ্বী বলে কিছু ছিল না। ভালো করার চেষ্টা ছিল।
প্রশ্ন :
আপনি ১৯৯৩-৯৪ সালে অভিনয় থেকে দূরে সরে গেলেন, কেন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন?
একটা সময় চার–পাঁচ বছর আমার সিনেমা সবচেয়ে বেশি মুক্তি পেয়েছে। দিনে তিন–চারটা সিনেমায় অভিনয় করেছি। সকাল ছয়টা থেকে রাত দুইটা–তিনটা পর্যন্ত শুটিং করতাম। দেশ–বিদেশে কাজে ব্যস্ত থেকেছি। অনেক সময় গাড়িতেও ঘুমিয়েছি। পরে মনে হলো, এখন একটু অবসর নেওয়া দরকার। জীবনকে একটু স্বাধীনতা দেওয়া দরকার। আর নতুন সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছি।
প্রশ্ন :
সিনেমা ছেড়ে চলে গেলেন লন্ডনে, পরে ফিরে কলকাতার সিনেমায় কাজ শুরু করলেন, ঢালিউডের প্রতি কোনো অভিমান ছিল?
না না, অভিমান কার সঙ্গে করব আমি? আমরাই একটা পরিবার ছিলাম। নিজের ইচ্ছায় একটু দূরে ছিলাম। তবে সিদ্ধান্তটা নেওয়ার সময় পরিচালক, প্রযোজক, কিছু সহকর্মী মন খারাপ করেছিলেন। তাঁদের সব খুলে বললাম। হাতে থাকা কাজগুলো ১৯৯৫ সালে শেষ করে লন্ডনে চলে গেলাম। পরে দেশে ফিরে কলকাতার সিনেমায় অভিনয় করি। পরে কিন্তু দেশের ‘রাক্ষুসী’ সিনেমায় অভিনয় করেছি।
প্রশ্ন :
আপনার পরিচালিত ‘ফিরে দেখা’ সিনেমা খবর কী?
সিনেমাটির সব কাজ শেষ। এটি সম্প্রতি সেন্সরে জমা দিয়েছি। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরই মুক্তি দেব।
প্রশ্ন :
পুনরায় সেন্সর বোর্ডের সদস্য হলেন, অভিনন্দন!
ধন্যবাদ। এটা অনেক বড় দায়িত্ব। নিজের ছবি নিজেকেই দেখতে হবে। আমার ওপর যাঁরা আস্থা রেখেছেন, তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞতা।
প্রশ্ন :
বর্তমান ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রির দিকে তাকালে কী মনে হয়?
ও–ও–ও! এটা আর বোলো না ভাই, কষ্ট লাগে। এই চলচ্চিত্রের কারণেই আমি রোজিনা। আমার জন্ম এখানে। আজকের এই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি চাইনি। এখন দেখে খুব কষ্ট হয়। একটা সময় ফ্লোরে ফ্লোরে, বাগানে বাগানে সিনেমার শুটিং হতো। সব চেনা মুখ। এখন খুঁজেও চেনা মুখ দেখা যায় না। রাস্তাঘাট নোংরা, ফ্লোরগুলোয় তালা দেওয়া, এসব দেখে কষ্ট হয়। আজ আমাদের ইন্ডাস্ট্রি আরও ভালো জায়গায় থাকার কথা ছিল। তবে আমি এখনো আশাবাদী।