একটা আফসোস ছিল তাঁর

এটিএম শামসুজ্জামান
প্রথম আলো

হতে চেয়েছিলেন সাহিত্যিক; কিন্তু অভিনয় তাঁকে অমর করে রাখল। ছাত্রজীবনে লেখক, সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সত্যেন সেন ও রণেশ দাশগুপ্তের অনুপ্রেরণায় তিনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এসেছিলেন। এই অঙ্গনেই মৃত্যুর আগপর্যন্ত কাজ করে গেছেন।

ফরীদিতে মুগ্ধ ছিলেন এ টি এম শামসুজ্জামান
ছবি: প্রথম আলো

জনপ্রিয় অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামানের মৃত্যুর পরে প্রথম জন্মদিন আজ।নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মেছিলেন এই অভিনেতা। ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর। গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার ভোলাকোটের বড়বাড়ি আর ঢাকায় থাকতেন দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে, পুরান ঢাকায়। পড়ালেখা করেছেন ঢাকার পোগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহীর লোকনাথ হাইস্কুলে। তাঁর বাবা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল। শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকের সঙ্গে তিনি রাজনীতি করতেন। মা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।

এ টি এম শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্রজীবনের শুরু ১৯৬১ সালে পরিচালক উদয়ন চৌধুরীর ‘বিষকন্যা’ চলচ্চিত্রে সহকারী পরিচালক হিসেবে। প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ চলচ্চিত্রের জন্য। ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা, এ ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয়। তিনি শতাধিক চিত্রনাট্য ও কাহিনি লিখেছেন।

এ টি এম শামসুজ্জামান
ছবি: সংগৃহীত

প্রথম দিকে কৌতুক অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রজীবন শুরু করেন তিনি। অভিনেতা হিসেবে চলচ্চিত্রের পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালের দিকে। ১৯৭৬ সালে চলচ্চিত্রকার আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খলনায়কের চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে আলোচনায় আসেন এ টি এম শামসুজ্জামান। ১৯৮৭ সালে কাজী হায়াৎ পরিচালিত ‘দায়ী কে?’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য পেয়েছেন আজীবন সম্মাননাও।

তিনি পাঁচবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০১৫ সালে পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সম্মাননা একুশে পদক। শতাধিক চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্যকার ও তিন শতাধিক চলচ্চিত্রের অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান। করেছেন ছোট পর্দায় অভিনয়। কিন্তু একটা আফসোস ছিল তাঁর। মৃত্যুর আগে জানিয়েছিলেন, আজও তাঁর শ্রেষ্ঠ অভিনয়টি করতে পারেননি। তিনি এমন অভিনয় করে যেতে চেয়েছিলেন, যার জন্য দর্শক তাঁকে মনে রাখবেন।

যে কোনো চরিত্র এ টি এম শামসুজ্জামান ছিলেন অদ্বিতীয় অভিনেতা।
ছবি: সংগৃহীত

তিনি এমনটি মনে করলেও দর্শকেরা ঠিকই তাঁর অভিনয়কে পছন্দ করেছেন। জায়গা করে দিয়েছেন তাঁদের হৃদয়ে। ছোট পর্দা ও বড় পর্দায় সমানতালে অভিনয় করেছেন তিনি। ‘ওরা ১১ জন’, ‘লালন ফকির’, ‘লাঠিয়াল’, ‘নয়নমণি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘রামের সুমতি’, ‘হাজার বছর ধরে’র মতো ছবি এবং ‘রঙের মানুষ’, ‘ভবের হাট’, ‘ঘর কুটুম’–এর মতো নাটকের অভিনয়ের মধ্য দিয়ে এ টি এম শামসুজ্জামানকে মানুষ মনে রাখবে আজীবন।