নায়ক আলমগীরের মৃত্যুর গুজব, ক্ষুব্ধ পরিজনেরা

আলমগীর
প্রথম আলো

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বরেণ্য অভিনয়শিল্পী আলমগীরের শারীরিক অবস্থা যখন উন্নতির দিকে, ঠিক তখনই কে বা কারা আজ রোববার সন্ধ্যায় হঠাৎ করে তাঁর মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে দেন। এতে ভীষণ মর্মাহত হয়েছেন দেশবরেণ্য এই অভিনয়শিল্পী। আর শিল্পীর পরিবার ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে আলমগীর জানিয়েছেন, ‘আমি ভালো আছি, সুস্থ আছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফেসবুকে আজ রোববার সন্ধ্যায় আলমগীরের মৃত্যুর গুজব কে বা কারা ছড়ায়। ফেসবুক এবং কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টালে এ গুজবসংক্রান্ত সংবাদ দেখা যায়। এরপর থেকেই হাসপাতালে থাকা আলমগীরের কাছে তাঁর পরিবার, বন্ধু, স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের ফোন আসতেই থাকে। তখনই বিষয়টি তিনি বুঝতে পারেন। জানা গেছে, এমন ঘটনার পেছনে যাঁরা জড়িত, তাদের খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া চলছে। আর বিষয়টি পুলিশের সাইবার অপরাধ বিভাগকেও অবহিত করা হয়েছে।

চিত্রনায়ক আলমগীর ও রুনা লায়লা

হাসপাতালে অসুস্থ সংস্কৃতি অঙ্গনের বরেণ্য শিল্পীদের নিয়ে এমন গুজব নতুন কিছু নয়। এর আগেও রাজ্জাক, এ টি এম শামসুজ্জামান, প্রবীর মিত্র, এন্ড্রু কিশোর, আজম খান, আইয়ুব বাচ্চুদের মতো শিল্পীদেরও মারা যাওয়ার আগে একাধিকবার মেরে ফেলেছেন কে বা কারা। কিছুদিন আগে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চলচ্চিত্রের আরেক বরেণ্য অভিনয়শিল্পী ও সাংসদ আকবর হোসেন পাঠান ফারুককে নিয়েও মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এমন খবরে ভীষণভাবে মুষড়ে পড়েন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

একাধিক সূত্র জানায়, আলমগীরের মৃত্যু সংবাদ গুজব ছড়ানোয় কিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্মের প্রতিনিধি জড়িত। ফেসবুকে যাঁরা এই খবর ছড়িয়েছেন, তাঁদেরও একজন একটি অনলাইন পোর্টালের সঙ্গে যুক্ত আছেন বলে জানিয়েছেন কয়েকজন চলচ্চিত্র সমালোচক। শিগগিরই তাঁদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানালেন আলমগীরের শুভাকাঙ্ক্ষীরা।


হাসপাতালে কীভাবে সময় কাটে, জানতে চাইলে আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে এক কাপ চা হাতে নিয়ে পত্রিকা পড়ি। এরপর নার্সকে ডাকলে, তাঁরা এসে ওষুধ দেন। আমি নাশতাও সেরে নিই। নাশতা শেষে বাসার সবার সঙ্গে কথা হয়। রুনার (রুনা লায়লা) সঙ্গে দিনে তিনবার কথা হয়। সন্তানদের সঙ্গে কনফারেন্সে দুবার করে কথা হয়। বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে কথা হয়। ফেসবুকে অনেকে খবর নেন, তাঁদের রিপ্লাই দিই। হাসপাতালে বসেই অফিসের খবরাখবরও নিই।’

রুনা লায়লাকে কেক খাইয়ে দিচ্ছেন তাঁর জীবনসঙ্গী আলমগীর
ছবি : জাহিদুল করিম

কথায় কথায় আলমগীর বললেন, ‘দুপুরে খাওয়া শেষে দুই ঘণ্টা ঘুমাই। সন্ধ্যায় টেলিভিশন দেখি। হাসপাতালে আমি আইপিএলের ম্যাচগুলোই দেখি। রাতের খেলার কোনোটারই ফলাফল দেখতে পারি না। কারণ, রাত ১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ি। সকাল সাতটায় যে আবার উঠে যাই। বই পড়ি। ক্ল্যাসিক সিনেমাও দেখছি।’


আইপিএলে কোনো দল প্রিয় কি না, জানতে চাইলে আলমগীর বলেন, ‘আমার কাছে তো দুইটা দল প্রিয়, একটায় যেখানে মোস্তাফিজ খেলছে, অন্যটায় যেখানে সাকিব আল হাসান খেলে। সত্যি কথা বলতে, আমি কোনো দল নিয়ে নেই, দেশ নিয়েই আমি আছি। আমার দেশের দুজন খেলোয়াড় যেই দলে, সেই দুই দলই আমার প্রিয়। বাংলাদেশ যেখানে আছে, বরাবরই আমি সেখানে আছি।’


মুঠোফোনে অল্প ভলিউমে গানও শোনেন আলমগীর। করোনায় আক্রান্ত হলেও মানসিকভাবে শক্ত থাকতে বললেন বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পী। তিনি বললেন, ‘মানসিকভাবে ভেঙে গেলেই কিন্তু আমি শেষ। সব সময়ই মানসিকভাবে শক্ত থেকে যদি ভাবা হয়, আই উইল প্রুভ ইট, তাহলে অবশ্যই প্রুভ ইট করা সম্ভব।’


সব ধরনের স্বাভাবিক খাবার গ্রহণ করছেন আলমগীর। তিনি বললেন, ‘মাছ, মাংসসহ সব ধরনের খাবার খাচ্ছি। এককালে মাংস অনেক প্রিয় হলেও এখন মাছ বেশি প্রিয়।’