নিশো গাইলেন ‘বুক চিন চিন করছে হায়...’

মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের ২০১৯ সালের আয়োজনটি করোনার কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি। তাই আয়োজক কর্তৃপক্ষ নিয়েছে এক অভিনব উদ্যোগ। প্রতিবার অনুষ্ঠানস্থল থেকে বিজয়ীরা পুরস্কার বাসায় নিয়ে যান। এবার পুরস্কারগুলো নিয়ে তারকাদেরই বাসায় হাজির আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

বিজরী বরকতউল্লাহ ও ইন্তেখাব দিনার

দুই তারকা এক বাসায়

সকাল তখনো ফুরিয়ে যায়নি। আয়োজক দল পৌঁছে যায় ইন্তেখাব দিনারের বাসায়। মেধাবী এই অভিনেতা এবারই প্রথম পেলেন মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার। সমালোচক বিভাগে বিসুখ নাটকের জন্য সেরা অভিনেতা হয়েছেন তিনি। পুরস্কার তুলে দিতেই ভেতর থেকে উঁকি দেন তাঁর স্ত্রী অভিনেত্রী বিজরী বরকতউল্লাহ। সঙ্গে সঙ্গে আনিসুল হক মজা করে বলেন, ‘বাহ্, দুই তারকাকে একসঙ্গেই পেয়ে গেলাম।’ প্রথমবার সমালোচক পুরস্কার পেয়ে কেমন লাগছে ইন্তেখাব দিনারের? প্রশ্ন করেন আনিসুল হক। তিনি উত্তরে বলেন, ‘অসম্ভব ভালো লাগছে। মেরিল–প্রথম আলোর লম্বা পথচলার সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। ধন্যবাদ, জুরি মেম্বারদের। বিশেষ করে সমালোচক পুরস্কারটা সত্যিই একটি বাড়তি পাওনা।’

নিশোর হাতে মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কারের স্মারকগুচ্ছ

অভিনেতা নিশোর কণ্ঠে গান

পরের গন্তব্য আফরান নিশোর বাসা। ততক্ষণে রোদ একটু জেঁকে বসেছে। বাসায় গিয়ে দেখা গেল, আরও দুটি পুরস্কার নিশোর ঘরে। তার মানে এবার তৃতীয়বার তিনি পেলেন এই পুরস্কার। শেষটা সুন্দর নাটকের জন্য দর্শক ভোটে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেলেন তিনি। সাতসকালে মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার আয়োজক দল তাঁর বাসায়। অবাক নিশো। তিনি বলেন, ‘আমি স্পিচলেস। এটা একটা বড় ধরনের সারপ্রাইজ। আয়োজকেরা নিজেরা এসে আমার হাতে তুলে দিলেন। এটা আমার জন্য অনেক বড় পাওনা।’

অভিনয়, পুরস্কার ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আলাপ হয়। এরই মধ্যে আনিসুল হক কবির বকুলকে নিশোর পাশে দাঁড়ানোর জন্য বলেন। অনেক বছর আগে কঠিন বাস্তব চলচ্চিত্রের একটি গান লিখেছিলেন তিনি, ‘বুক চিন চিন করছে হায়’। সেই গান নিশো অভিনীত শিল্পী নাটকে আবার করা হয় এবং ভীষণ জনপ্রিয় হয়। সেই গান নিশোর সঙ্গে গাওয়ার অনুরোধ করেন আনিসুল হক। কবির বকুল বলেন, ‘গানটি গাওয়ার উপলক্ষটা একটু বলে নিই। এই গান ১৮ বছর আগের। মান্না-পূর্ণিমার বাস্তব ছবিতে ছিল। সেই গান একটু হারিয়েই ছিল মোটামুটি। হঠাৎ করে একজন ফোন করে বললেন, “ভাই, আপনার গান তো ভাইরাল হয়ে গেছে।” কোনটা? “বুক চিন চিন।” মনে করতে একটু সময় লাগল। পরে দেখলাম যে শিল্পী নাটকের “বুক চিন চিন”। আফরান নিশো আর মেহ্‌জাবীনের নাটক। তো আমার মনে হয়, ও যদি গানটা গায়, বেশি ভালো হবে।’

গীতিকার উপস্থিত, আছেন অভিনেতাও। গাওয়া হলো গানটি সমস্বরে।

বছরের শেষ দিনের সকালটা মেরিল-প্রথম আলোর পুরস্কার নিয়ে আয়োজকেরা রাঙিয়ে দিলেন বিদ্যা সিনহা মিমকে

মিমের সকালটা সুন্দর হয়ে গেল

‘আজকের সকালটা অনেক সুন্দর। সব সময় তো অ্যাওয়ার্ড নেওয়া হয় বড় প্রোগ্রামে। রেড কার্পেটে হাঁটি। কিন্তু এটা এ কারণেই ভিন্ন যে এসব মানুষের তো আমার বাসায় সাধারণত আসা হয় না। অ্যাওয়ার্ডের জন্য তাঁরা এসেছেন। এটা সবচেয়ে বড় পাওয়া।’ মিমের বক্তব্য। বছরের শেষ দিনের সকালটা মেরিল-প্রথম আলোর পুরস্কার নিয়ে আয়োজকেরা রাঙিয়ে দিলেন বিদ্যা সিনহা মিমকে। সুন্দর হবেই না বা কেন? জীবনের প্রথম ছবি আমার আছে জল দিয়ে সমালোচক পুরস্কার পেয়েছিলেন। এরপর অপেক্ষা করতে হয়েছে ১১টি বছর। দর্শকের ভোটে সাপলুডু সিনেমা দিয়ে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতলেন তিনি।

মেহ্‌জাবীন ও তাঁর বাবা

মেয়ের পাশে মেহ্‌জাবীনের বাবা

পরের গন্তব্যে ছুট। দরজা খুলে স্বাগত জানান এই সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী মেহ্‌জাবীন চৌধুরী। তাঁর জন্য এবারের আসর নিঃসন্দেহে অন্য রকম। একই মানুষ সমালোচক ও তারকা জরিপ দুই বিভাগেই সেরা অভিনেত্রী হয়েছেন। তাই মেহ্‌জাবীনের হাতে তুলে দেওয়া হলো দুটি পুরস্কার। অভিনেত্রীর বাসার তাকে সাজানো দেখা গেল আরও দুটি পুরস্কার। জানা গেল, আগের দুটিসহ এবারে তৃতীয়বারের মতো ভক্তদের ভোটে পুরস্কৃত তিনি। আর এবারই প্রথম মনোনয়ন পেয়েছিলেন সমালোচক পুরস্কারে, প্রথমবারেই পুরস্কার ঘরে তুললেন। গুণী মেয়ের পাশে ছিলেন তাঁর বাবা। বাবার হাত ধরে মেহ্‌জাবীন জানান, নিজের এই পথচলায় কতটা পাশে ছিলেন তিনি। তিনি বলেন, ‘মেয়েদের জন্য আমাদের দেশে এত ইনডিপেনডেন্টলি কাজ করা অনেক ডিফিকাল্ট। সেদিক থেকে যখন বাবা–মায়েরা অনেক সাপোর্টিভ থাকেন, তখন মেয়েরা এগিয়ে যেতে পারে।’ বলে রাখা ভালো ‘বুক চিন চিন’ গান যে নাটকে ছিল, সেই নাটকে নিশোর সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন মেহ্‌জাবীনও। সুতরাং গানটা আরেকবার মেহ্‌জাবীনের ঘরেও গাওয়া হলো।

বাসায় এসে পুরস্কার দিয়ে যাওয়ায় আরও বেশি অভিভূত নিপুণ

উৎসাহ বাড়িয়ে দিয়েছে নিপুণের

আয়োজক দল ছুটে চলে নির্মাতা আশফাক নিপুণের বাসায়। এই শহরে নাটকের জন্য সেরা চিত্রনাট্যকারের পুরস্কার জিতেছেন তিনি। এত গুণী মানুষ পেয়ে আপ্লুত নিপুণ। এটি তাঁর দ্বিতীয় সমালোচক পুরস্কার। বাসায় এসে পুরস্কার দিয়ে যাওয়ায় আরও বেশি অভিভূত। নিপুণ বলেন, ‘ধন্যবাদ জানাই প্রথম আলোকে। বিশেষ করে বাসায় এসে পুরস্কার দিয়ে যাওয়া একটা দারুণ ব্যাপার। জুরিবোর্ডের সদস্যদের ধন্যবাদ। এই পুরস্কার আমার আরও উৎসাহ বাড়িয়ে দিল।’