পরী–রাজের সংসারে একসন্ধ্যা

আদরের কুকুর পটু, পরীমনি ও রাজ
ছবি: শফিক আল মামুন

বনানীর ওই বাড়িটার আশপাশ নিরিবিলি। নিত্যদিনের কোলাহলের বাইরে আলাদা কিছু নেই। কিন্তু পরীমনির ফ্ল্যাটটি ভাসছিল আনন্দের বন্যায়। দরজা খুলে সেদিন ভেতরে ঢুকতেই সেটা আঁচ করা গেল। বাসাজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে ফুল, ফুল আর ফুল। আরও রয়েছে মিষ্টির প্যাকেট। যাঁরা আসতে পারছেন না, তাঁরা ফোনে পাঠাচ্ছেন শুভেচ্ছাবার্তা।

বসার ঘরে ঢুকতেই অভ্যর্থনা জানাতে এগিয়ে এলেন শরিফুল রাজ। আশপাশে উপস্থিত সবার চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। রাজ বললেন, ‘বাবা হওয়ার খবর শুনে বাসায় ফিরেই নাচানাচি শুরু করেছি। উৎসবের মুডে আছি। এই ফিলিংস ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।’ ততক্ষণে পুরো দেশ জেনে গেছে, মা-বাবা হতে যাচ্ছেন পরীমনি-রাজ

ঘটনার মহানায়ক পরিচালক গিয়াসউদ্দিন সেলিম। ‘গুনিন’ ছবিতে দুজনকে তিনি কাস্টিং না করলে এই দিনটি কি আসত পরীমনি-রাজের জীবনে? তাই সবার আগে তাঁকে গিয়ে সুখবরটি দিয়েছেন ‘গুনিন’ ছবির নায়ক-নায়িকা। ব্যালকনির আধো অন্ধকারেও চোখে পড়ে, রাজের মুখে কৃতজ্ঞতার হাসি। সবাই খবরটা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছেন, ব্যাপারটা স্বস্তি দিয়েছে তাঁকে। মুঠোফোন আর মেসেঞ্জারে একের পর এক আসছে শুভেচ্ছাবার্তা, ফোন কল। কখনো কথা বলছেন, কখনো ফিরতি মেসেজে জানাচ্ছেন ধন্যবাদ। পরীমনি তখন শোবার ঘরে, ঘুমোচ্ছেন। দুপুরে ডাক্তারের কাছ থেকে ফিরেই বিশ্রাম নিতে চলে যান তিনি।

রাজ ও পরীমনির সংসার
ছবি: শফিক আল মামুন

‘আমি লুকোচুরি করতে চাইনি। এটি একটি পবিত্র ব্যাপার। ইচ্ছা করলেই তো গোপন রাখা যেত, করিনি। বাবা হওয়ার আনন্দ কি গোপন রাখা যায়?’, বললেন রাজ। অনেক ঢালিউড তারকা সন্তানের আগাম খবর তো দূরের কথা, প্রেম-বিয়ের খবরও গোপন রাখেন। পরীমনি-রাজের ক্ষেত্রে ঘটল ব্যতিক্রম। হাসতে হাসতে রাজ বলেন, ‘আমরা রীতি ভেঙে দিলাম। আমি ও পরী এখন একটা শক্ত জায়গায় দাঁড়িয়েছি। আমরা এখন একে অপরের অস্তিত্ব। এখন তো আর কোনো কিছু গোপন রাখব না। তা ছাড়া এটা কি সারা জীবন গোপন রাখা যেত? আমরা চেয়েছি, খবরটি সবাই জানুক। অতীতে দুজনের জীবনে যেসব ঘটনা ঘটেছে, এখন থেকে আর সেসব হবে না। আমরা একটা নিয়মের মধ্যে চলে যাব। নতুন জীবন শুরু হতে যাচ্ছে আমাদের।’

প্রেম বা বিয়ের খবর এত দিন প্রকাশ করেননি, প্রকাশ করলেন সন্তানের খবর। কেন? রাজ বললেন, ‘একটু সময় নিয়েছি। কারণ, আমাদের বিয়ের ব্যাপারে দুই পরিবারকে বোঝাতে একটু সময় লেগেছে। আর সম্পর্কের ব্যাপারটাও বেশি দিনের নয়। এরই মধ্যে একটি সুখবর চলে এল। একবারেই সব খবর জানিয়ে দিলাম, সমস্যা কী?’

পরীমনি
প্রথম আলো

ওদিকে পরীমনির ঘুম ভাঙে। ভেতর থেকে ডাক আসে রাজের। তিনি ছুটে যান পরীমনির ঘরে। কিছুক্ষণ পর সেই ঘর থেকে দ্রুত বেরিয়ে চলে যান খাওয়ার ঘরে, পরীমনির জন্য খাবার বানাতে হবে। দ্রুত হাতে মুড়ি, খেজুরের গুড় আর নারকেল নিয়ে আসেন। লাজুক হাসি হাসতে হাসতে বিছানায় বসে সেগুলো পরীমনির মুখে তুলে দিতে দিতে বলেন, ‘এখন ওর সেবা-যত্ন জরুরি। আমি তো কিছুদিন পর শুটিংয়ে চলে যাব। তখন পাশে থাকতে পারব না। এখন পুরো সময়টা ওকে দিচ্ছি।’

গুনিন ছবির একটি দৃশ্য

‘গুনিন’-এর শুটিং সেটে পরিচয়ের প্রথম দিন থেকে এখন পর্যন্ত পরস্পরকে ‘তুই’ সম্বোধন করেন পরীমনি ও রাজ। পরিচয় ও প্রেমে জড়িয়ে পড়ার সেই দিনগুলোর কথার ভাগ দিতে গিয়ে রাজ বলেন, ‘শুটিংয়ের প্রথম দিনই মজা করে আমি পরীকে বলেছিলাম, “তুই আমার”। পরীও আমাকে বলেছিল “তাইলে তুইও আমার।”’

একদিকে চলছিল ‘গুনিন’-এর শুটিং, অন্যদিকে দানা বাঁধছিল দুজনের প্রেম। এক সপ্তাহের মাথায় পরস্পরকে তাঁরা জানিয়ে দেন হৃদয়ের কথা। তার আগেই অবশ্য রাজের মায়ায় জড়িয়ে যান পরীমনি। ঘটনা কিছুদিন আগের। তখনো শুটিং শুরু হয়নি। পরিচালকের সঙ্গে পরীমনির বাসায় গিয়েছিলেন ‘গুনিন’-এর অভিনেতা শরিফুল রাজ। আলাপ-আলোচনার একপর্যায়ে এক টেবিলে খেতে বসেছিলেন সবাই। তারপর?

পরীও গেলেন বদলে। এখনকার পরীমনির চলাফেরা, কথাবার্তায় পাওয়া যাচ্ছিল না আগের পরীমনিকে। অনাগত সন্তানের জন্য একটু একটু করে মা হয়ে ওঠার আনন্দে দুলছিলেন পরীমনি।
গুনিন ছবিতে রাজ ও পরীমনি

এই অংশের গল্প বলেন পরীমনি। ‘দেখলাম রাজের ডান হাতে ব্যান্ডেজ। সে বাঁ হাতে খাচ্ছিল। দেখে মায়াই লাগল। আমি নিজের হাত ধুয়ে এসে মুখে তুলে তাঁকে খাইয়ে দিলাম। সে কোনো কথা না বলে খেতে লাগল। ঘটনাটা এখন খুব মনে পড়ে।’

এ তো গেল মায়ায় জড়ানোর গল্প। প্রেমে জড়ানোর আগে দুজনের জীবনে বয়ে গিয়েছিল কয়েক পশলা ঝড়। গ্রেপ্তার, কারাবাস, মামলা নিয়ে দিনরাত এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল পরীমনির। অন্যদিকে মারাত্মক এক গাড়ি দুর্ঘটনার পর হতাশায় ডুবে গিয়েছিলেন রাজ। পরিচয়ের পর থেকে দুজনই বুঝতে পারছিলেন, দুজনের সান্নিধ্য দুজনের হৃদয়ের ক্ষত জায়গায় যেন মলমের মতো কাজ করছিল। একদিন হঠাৎ মনে হলো, দুটি জীবন বদলে যাচ্ছে ক্রমশ। রাজ বললেন, ‘যখন বুঝতে পারলাম একে অপরের সঙ্গ ছাড়া আমরা থাকতে পারব না, তখনই বিয়ের সিদ্ধান্ত নিই। তা ছাড়া আমাদের দুজনকেই স্থির হতে হবে, সেটাও বিয়ের একটা বড় উদ্দেশ্য।’

পরীমনি ও রাজ

পরীও গেলেন বদলে। এখনকার পরীমনির চলাফেরা, কথাবার্তায় পাওয়া যাচ্ছিল না আগের পরীমনিকে। অনাগত সন্তানের জন্য একটু একটু করে মা হয়ে ওঠার আনন্দে দুলছিলেন পরীমনি। স্কেচ করা একটা শিশুর ছবি ইতিমধ্যে নিজের মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে ঠাঁই করে নিয়েছে, আগে যে রকম দেখা যেত সিনেমার সন্তানসম্ভবা মায়েদের ঘরে। কথার ফাঁকে ফাঁকে ছবিটিতে চোখ রাখছেন পরীমনি। ঠিক করেছেন, ছেলে হলে তাঁর নাম হবে রাজ্য, আর মেয়ে হলে রানি। পরীমনি বলেন, ‘দুটি নামই রাজের “র” থেকে নেওয়া। “রাজ্য” মানে আমার পৃথিবী। আর “প্রীতিলতা” ছবিতে আমার চরিত্রের নাম “রানি”।’