বিশ্বের চলচ্চিত্রকারদের জন্য বার্লিন কো-প্রোডাকশন মার্কেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার
ছবি: সংগৃহীত

দেয়ালে বর্ণিল ফুলের ছাপ। আয়না ধরে আছে একটি হাত, দেখা যাচ্ছে মুখঢাকা এক নারীকে। গায়ে লাল-নীল পোশাক তার, গলায় হার। বাংলাদেশের সিনেমা দ্য ডিফিকাল্ট ব্রাইড-এর একটি ধারণামূলক ছবি এটি। বাংলাদেশ থেকে বার্লিন কো-প্রোডাকশন মার্কেটে পিচিংয়ের জন্য নির্বাচিত হয়েছে সিনেমাটি। সেখানকার প্রযোজকদের শোনানো হবে বাংলাদেশি এই সিনেমার গল্প। একজন নারীর সংগ্রামের সেই গল্প নিয়ে সিনেমাটি পরিচালনা করবেন রুবাইয়াত হোসেন।

বিশ্বের চলচ্চিত্রকারদের জন্য বার্লিন কো-প্রোডাকশন মার্কেট একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। এখানে একত্র হন চলচ্চিত্রের প্রযোজক ও নির্মাতারা। বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের এই আয়োজনে এ বছর ডাক পেয়েছে বিশ্বের ৩২টি দেশের ৩৪টি সিনেমা। ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ শুরু হচ্ছে ৭২তম বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব। তারই অংশ হিসেবে ১২ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে কো-প্রোডাকশন মার্কেটের কার্যক্রম। সেখানে নিজেদের সিনেমা উপস্থাপনের সুযোগ পাবেন ডাক পাওয়া ৩৪ জন নির্মাতা। এগুলোর মধ্যে ‘অফিশিয়াল সিলেকশন’ শাখার ১৯ সিনেমার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের সিনেমাটি। কো-প্রোডাকশন মার্কেটে জমা পড়া ২৯৫টি সিনেমার মধ্যে থেকে ডাক পাওয়া ৩৪টি সিনেমায় উঠে এসেছে বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক ও মানবিক নানা সমস্যা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রযোজকেরা এগুলো থেকে বাছাই করে নির্মাণের জন্য প্রতিটি সিনেমাকে দেবেন সাত লাখ থেকে শুরু করে এক মিলিয়ন ইউরো।

বার্লিন কো-প্রোডাকশন মার্কেট প্রভাবশালী প্রযোজক, ডিস্ট্রিবিউটর, টিভি ব্রডকাস্টার, ভিডিও স্ট্রিমিং ও অর্থ লগ্নিকারীদের নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম
ছবি: সংগৃহীত

ছবির গল্প উপস্থাপনের চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা করে নেওয়ার খবর গত শনিবার রাতে জেনেছেন রুবাইয়াত। প্রথমবারের মতো এ সুযোগ পেলেন তিনি। রুবাইয়াত হোসেন বলেন, ‘বিশ্বের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের জন্য বার্লিন অনেক বড় মার্কেট। এখানে নামীদামি প্রযোজকদের সামনে আমাদের সিনেমাটি তুলে ধরব। সমসাময়িক গল্পের আন্তর্জাতিক এ ছবি এখন বিনিয়োগের পর্যায়ে রয়েছে। আমাদের চেষ্টা থাকবে সহপ্রযোজক খোঁজা, পরিবেশকসহ সিনেমা-সংশ্লিষ্ট অন্যদের সঙ্গে কথা বলা। এটি একটি লং জার্নি। আমি আমার সেরাটুকু দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করব।’

ছবির গল্প উপস্থাপনের চূড়ান্ত তালিকায় জায়গা করে নেওয়ার খবর গত শনিবার রাতে জেনেছেন রুবাইয়াত
ছবি: সংগৃহীত

বার্লিন কো-প্রোডাকশন মার্কেট প্রভাবশালী প্রযোজক, ডিস্ট্রিবিউটর, টিভি ব্রডকাস্টার, ভিডিও স্ট্রিমিং ও অর্থ লগ্নিকারীদের নেটওয়ার্কিং প্ল্যাটফর্ম। এ আয়োজনে পরিচালক, সিনেমার সহপ্রযোজক নির্বাচিত সিনেমার বিষয়বস্তু উপযুক্ত পরিকল্পনাসহ তুলে ধরেন। পছন্দ হলে বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানও কোনো একটি সিনেমার সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়। সহপ্রযোজক হিসেবে যুক্ত হন বিভিন্ন দেশের স্বনামধন্য প্রযোজকেরাও। পরে তাঁরা নিজের দেশে ছবিটির জন্য তহবিল আহ্বান করেন।

কো-প্রোডাকশন মার্কেটের গুরুত্বপূর্ণ সিনেমাগুলো বিশ্বের বড় উৎসবগুলোতে পুরস্কৃত হয়। যেমন ২০২১ সালের ব্যাড লাক ব্যাঙ্গিং অর লুনি পর্ন বার্লিনে ‘গোল্ডেন বিয়ার’ জয় করে। এর আগে হোয়ার আর ইউ গোয়িং, আইডা? অস্কারে পায় মনোনয়ন। কম্পার্টমেন্ট নম্বর সিক্স কানে প্রতিযোগিতা করে স্বর্ণপামের জন্য, জয় করে গ্রান্দ প্রিঁ ও বিশেষ শাখার পুরস্কার।

কম্পার্টমেন্ট নম্বর সিক্স কানে প্রতিযোগিতা করে স্বর্ণপামের জন্য, জয় করে গ্রান্দ প্রিঁ ও বিশেষ শাখার পুরস্কার।
ছবি: সংগৃহীত

অনলাইনে পিচিংয়ে যুক্ত হবেন রুবাইয়াত। তারপর আগামী বছর শুরু করবেন সিনেমার শুটিং। সামাজিক সব চরিত্রের মাধ্যমে রহস্যজনক বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরা হবে সেখানে। গল্পের শুরুতেই দেখা যাবে, একটি মেয়ের বিয়ে, যার মন বিয়ের জন্য প্রস্তুত নয়। গল্পে রূপক অর্থে মনস্তাত্ত্বিক নানা বিষয় তুলে ধরা হবে। এর আগে গুপি বাঘা প্রোডাকশনের প্যারাডাইস সিনেমাটি কো-প্রোডাকশন মার্কেটে পিচিংয়ের সুযোগ পেয়েছিল। তারপর জার্মানির এক প্রযোজক ছবিটির সঙ্গে যুক্ত হন। রুবাইয়াত বলেন, তরুণ নির্মাতাদের জন্য কো-প্রোডাকশন মার্কেট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখান থেকেই বিশ্ব চলচ্চিত্রের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে যোগাযোগের সূত্রপাত হয়। ফলে এখানকার ছবিগুলোর দিকে উৎসবগুলোর থাকে আলাদা নজর।

১০ তারিখে শুরু হয়ে ৭২তম বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসব চলবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এবারের উৎসবের উদ্বোধনীয় সিনেমা ফ্রাঁসোয়া ওজোনের পিটার ভন্ট ক্যান্ট। করোনার কারণে উৎসবে থাকবে না লালগালিচার পর্ব। ছবি প্রদর্শিত হবে ৫০ শতাংশ দর্শক নিয়ে।