সেদিন বাড়ি ছিলেন না কবরী। ওই সময় তিনি ছিলেন ময়মনসিংহে। সুভাষ দত্ত ও সত্য সাহা মন খারাপ করে ফিরে এলেন ঢাকায়। চট্টগ্রামে আসার পর কবরীর বাবা সত্য সাহাকে খবর দেন।
এবারে আর সুভাষ চট্টগ্রামে গেলেন না। কবরীর কিছু ছবি তুলে নিয়ে আসার জন্য ড. কামালকে তাঁদের বাড়িতে পাঠালেন। কথামতো কাজ হলো। এরপর আর কোনো খোঁজ নেই। কবরী ধরে নিয়েছিলেন হয়তো পছন্দ হয়নি। এর মধ্যেই ঢাকা থেকে সুভাষ দত্ত খবর পাঠালেন যে কবরীর তোলা ছবিগুলো দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছেন। তাঁর হাসি নাকি সুভাষ কাছে অসম্ভব সুন্দর মনে হয়েছে। কবরীকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য বলা হলো।
কিন্তু মা তো আর রাজি না। তখন কবরীর বয়স সম্ভবত ১৩ বা ১৪। প্রথম আলোর কাছে বলা এক স্মৃতিচারণায় কবরী বলেন, ‘মা কান্নাকাটি করে বাবাকে বললেন, আমার দুধের শিশুকে আমি দেব না। আমারও মা-ভাই–বোনদের ছেড়ে ঢাকায় আসতে ভালো লাগছিল না। মায়ের কান্না দেখে আমিও কান্না শুরু করলাম। বাবা বুঝিয়ে বললেন, ওরা ডেকেছে। আগে মিনা যাক। যদি ভালো না লাগে, তাহলে চলে আসবে। এই বলে বাবা আমাকে নিয়ে বাড়ি থেকে রওনা হলেন।’
ট্রেনে করে চট্টগ্রাম থেকে রওনা হলেন কবরী। ঢাকায় এসে উঠলেন পুরান ঢাকার বিউটি বোর্ডিংয়ে। সেদিন সুভাষ দত্ত দাদার সামনে এসে দাঁড়ালেন কমলা রঙের একটা ফ্রক পরে। দাদা বললেন, ‘যাও তো শাড়ি পরে আসো।’ বলতেই চটপট করে শাড়ি পরে দাদার সামনে গেলেন তিনি। তারপর জানানো হলো ভয়েস টেস্ট করা হবে। স্টুডিওতে গেলেন। কথা শুনে দাদা বললেন, সবই ঠিক আছে, কিন্তু কথার মধ্যে তো চাটগাঁয়ের আঞ্চলিক টান আছে।
সে সময়ের স্মৃতিচারণায় কবরী বলেছিলেন, ‘দাদা আমাকে যেভাবে সংলাপ বলতে বললেন, আমি তাঁর চোখের দিকে তাকিয়ে সেভাবেই সংলাপ আওড়াতে থাকলাম। অবশেষে দাদা জানালেন, জরিনা চরিত্রের জন্য আমাকে তাঁর পছন্দ হয়েছে। তারপর শুরু হলো আমার নাম নিয়ে গবেষণা। দাদা সৈয়দ শামসুল হককে আমার একটা নাম ঠিক করে দেওয়ার জন্য বললেন। যে নামেরই প্রস্তাব আসে, দেখা যায় এই নামে কেউ না কেউ আছে। আবার কোনো কোনো নাম দাদার পছন্দ হয় না। একবার ঠিক হলো যে “করবী” দেওয়া হবে। কেউ আবার বলল না, “কবরী”।
দুটো নাম নিয়ে বেশ ভাবনাচিন্তা চলল। শেষতক “কবরী” নামটাই টিকে গেল। আর “মিনা পাল” থেকে আমি হয়ে গেলাম “কবরী”।’