মৃত্যুর গুজবে মর্মাহত আলমগীর, ক্ষুব্ধ রুনা লায়লা

আলমগীর ও রুনা লায়লা
সংগৃহীত

হাসপাতালের চিকিৎসায় যখন শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল, তখন অভিনেতা আলমগীরের মৃত্যুর মিথ্যা খবর ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এক কান আরেক কান হয়ে তা পৌঁছে যায় চিকিৎসাধীন অভিনেতার কানেও। এতে ভীষণ মর্মাহত হন তিনি, তাঁর স্ত্রী কণ্ঠশিল্পী রুনা লায়লা হন ক্ষুব্ধ। এসব যারা করছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৯ দিন ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন অভিনেতা আলমগীর। তাঁর শারীরিক অবস্থা ক্রমেই উন্নতির পথে। এর মধ্যে হঠাৎ গতকাল সন্ধ্যায় কে বা কারা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় তাঁর মৃত্যুর মিথ্যা খবর। মুহূর্তেই সেটি ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষী ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে একের পর এক আসতে থাকে ফোনকল। এতে চিকিৎসাধীন আলমগীর মানসিকভাবে কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েন।

জানা যায়, আলমগীরের মৃত্যুর মিথ্যা খবর ছড়িয়েছে নামসর্বস্ব কিছু অনলাইন পোর্টাল। আর যারা ফেসবুকে ছড়িয়েছে, সেসবের স্ক্রিনশট সংগ্রহ করা হচ্ছে।

আলমগীর, আশা ভোঁসলে ও রুনা লায়লা
সংগৃহীত

আলমগীর বলেন, ‘আমি ভালো আছি। সবার বোঝা উচিত, একজন মানুষ যখন হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন তিনি ও তাঁর পরিবারের ওপর দিয়ে যে মানসিক ঝড় বয়ে যায়, তা শুধু ভুক্তভোগীরাই উপলব্ধি করতে পারেন। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব, অথচ তারা হাসপাতালে থাকা সুস্থ মানুষকে নিয়ে যে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে, তা কোনো অবস্থায় সভ্য মানুষের কাজ হতে পারে না। এমন ঘটনার নিন্দা জানানোর ভাষাও নেই আমার।’

আলমগীরের স্ত্রী শিল্পী রুনা লায়লা বলেন, ‘এ কেমন মানসিকতা। এটা তো অনেক বড় ধরনের অপরাধ। যারা এ গুজব ছড়িয়েছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এদের খুঁজে বের করবেন এবং শাস্তির ব্যবস্থা করবেন আশা করি। কারণ, গুণীজনদের নিয়ে এমন ঘটনা আগেও একাধিকবার ঘটেছে।’ রুনা লায়লা আরও বলেন, ‘একটি কুচক্রীমহল যেভাবে কিছু ভিত্তিহীন ও মিথ্যা সংবাদ প্রচার করছে, তাতে আলমগীর সাহেব এবং আমাদের পরিবার হতবাক হয়ে গেছে। ফেসবুক ও ইউটিউবে নিজেদের দিকে নজর ফেরাতে ভিউ বাড়ানোর উদ্দেশ্যে এ রকম দূষিত খবর ছড়িয়ে দিতে হবে কেন, তা আমাদের মাথায় আসে না। অসুস্থ ও বিকৃত মনের ব্যক্তিরাই নিজের ক্ষুদ্র স্বার্থে এত নিচে নেমে আসবে? আমরা ফেসবুক এবং ইউটিউব চ্যানেলগুলোতে সব আপডেটের একটি নোট তৈরি করেছি এবং শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেব।’

আলমগীর ও ফারুক, রুনা লায়লা ও ফারুকের স্ত্রী ফারহানা পাঠান
সংগৃহীত

হাসপাতালে অসুস্থ সংস্কৃতি অঙ্গনের বরেণ্য শিল্পীদের নিয়ে এমন গুজব নতুন নয়। এর আগেও রাজ্জাক, এ টি এম শামসুজ্জামান, প্রবীর মিত্র, এন্ড্রু কিশোর, আজম খান, আইয়ুব বাচ্চুদের মতো শিল্পীদেরও ক্ষেত্রেও এ রকম হয়েছে। তাঁদের মৃত্যুর আগে একাধিকবার তাঁদের মৃত্যুর মিথ্যা খবর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছুদিন আগে সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন চলচ্চিত্রের আরেক বরেণ্য অভিনয়শিল্পী ও সাংসদ আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এমন খবরে ভীষণভাবে মুষড়ে পড়ে তাঁর পরিবার।

এদিকে হাসপাতালে ভালোই আছেন আলমগীর। কীভাবে সময় কাটে, জানতে চাইলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে এক কাপ চা হাতে নিয়ে পত্রিকা পড়ি। এরপর নার্সকে ডাকলে, তাঁরা এসে ওষুধ দেন। আমি নাশতাও সেরে নিই। নাশতা শেষে বাসার সবার সঙ্গে কথা হয়। রুনার সঙ্গে দিনে তিনবার কথা হয়। সন্তানদের সঙ্গে কনফারেন্সে দুবার করে কথা হয়। বন্ধু, শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে কথা হয়। ফেসবুকে অনেকে খবর নেন, তাঁদের রিপ্লাই দিই। হাসপাতালে বসেই অফিসের খবরাখবরও নিই। দুপুরে খাওয়া শেষে দুই ঘণ্টা ঘুমাই। সন্ধ্যায় টেলিভিশন দেখি। হাসপাতালে বসে আইপিএলের ম্যাচগুলো দেখি। রাতের খেলার কোনোটারই ফলাফল দেখতে পারি না। কারণ, রাত ১১টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ি। ক্ল্যাসিক সিনেমাও দেখছি।’

আইপিএলে প্রিয় দল কোনটি, জানতে চাইলে আলমগীর বলেন, ‘আমার কাছে তো দুটি দল প্রিয়। একটায় যেখানে মোস্তাফিজ খেলছে, অন্যটায় যেখানে সাকিব আল হাসান খেলে। সত্যি কথা বলতে, আমি কোনো দল নিয়ে নেই, দেশ নিয়েই আছি। আমার দেশের দুজন খেলোয়াড় যেই দলে, সেই দুই দলই আমার প্রিয়। বাংলাদেশ যেখানে আছে, বরাবরই আমি সেখানে আছি।’

আলমগীর ও রুনা লায়লা
সংগৃহীত

২০ এপ্রিল করোনা পজিটিভ হওয়ার পর তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। এর আগে ১৭ এপ্রিল রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে সপরিবারে করোনার দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণ করেন তিনি।