শুরু হয়েছে ঈদের ছবির হিসাব-নিকাশ

‘অন্তরাত্মা’ সিনেমার একটি দৃশ্য
ছবি: সংগৃহীত

আজ সোমবার জমা হওয়ার কথা সেন্সরে। তাতে কি, তার আগেই গত বৃহস্পতিবার আচমকা ফেসবুকে চিত্রনায়িকা বিদ্যা সিনহা মিম জানিয়ে দিলেন, ‘পরাণ আসছে এই ঈদে, আপনার পাশের প্রেক্ষাগৃহে।’ পরাণ ছবির পরিচালক রায়হান রাফিও জানালেন, ঈদেই আসছে তাঁর পরিচালিত এই ছবি। তবে ঈদে মুক্তির জন্য বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রযোজক পরিবেশক সমিতিতে নিবন্ধিত হওয়া একমাত্র ছবি ‘দিন: দ্য ডে’। দুই ছবির বাইরে আরও কয়েকটি ছবির নাম শোনা যাচ্ছে, যেগুলোর ঈদে মুক্তির সম্ভাবনা প্রবল। তার মধ্যে আছে ‘অন্তরাত্মা’, ‘গ্যাংস্টার’, ‘লাইভ’।

‘অন্তরাত্মা’ সিনেমার একটি দৃশ্য
ছবি: সংগৃহীত

জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে পবিত্র ঈদুল আজহা। প্রতিবছরই দুই ঈদের উৎসবে ছবি মুক্তি দেওয়ার একটা অলিখিত প্রতিযোগিতা থাকে। এবার এখনো সেটা দেখা না গেলেও সপ্তাহ দু–একের মধ্যে তা জমে উঠবে বলে জানালেন প্রযোজক পরিবেশক সমিতির অফিস সচিব সৌমেন্দ্র রায়। গতকাল রোববার তিনি বলেন, এবারের হিসাব–নিকাশ এখনো শুরু হয়নি। এই সপ্তাহে শুরু হতেও পারে, না হলে আগামী সপ্তাহে নিশ্চিতভাবেই প্রতিযোগিতা দৃশ্যমান হয়ে উঠবে।

‘দিন: দ্য ডে’ ছবির পোস্টার
ছবি: সংগৃহীত

২০১৯ সালে নির্মিত ‘পরাণ’ পরের বছরের ভালোবাসা দিবসে মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি। এরপর আরও কয়েক দফা পিছিয়ে যায় ছবিটির মুক্তির তারিখ। এখন শোনা যাচ্ছে, আগামী ঈদুল আজহায় মুক্তি পাবে ‘পরাণ’। ছবির পরিচালক রায়হান রাফি জানান, এবার মুক্তির তারিখ নিয়ে কোনো অনিশ্চয়তা নেই। তিনি বলেন, ‘ছবিটি নির্মাণের শেষে করোনার কবলে পড়ে। চলতি বছরের ঈদুল ফিতরে মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ঈদে আমার একসময়কার প্রধান সহকারী পরিচালক এম রাহিমের ‘শান’ মুক্তি পায়। এ কারণে মুক্তি স্থগিত করি। ‘শান’ আমার পরিবারেরও ছবি।’
পরিচালক জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া বহুল আলোচিত একটি সত্য ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই ছবির গল্প লেখা হয়েছে। কোন ঘটনা, সেটা অবশ্য খোলাসা করেননি তিনি। এই ছবির প্রধান চরিত্রের অভিনয়শিল্পী মিম। ঈদ উৎসবে সর্বশেষ তাঁর ‘পদ্মপাতার জল’ ছবি মুক্তি পায়, ২০১৫ সালে। সাত বছর পর বড় উৎসবে সিনেমা মুক্তির খবরে ভীষণ খুশি এই অভিনেত্রী। মিম বলেন, ‘মাঝে অনেক বছর ঈদে আমার ছবি মুক্তি পায়নি। তা ছাড়া বেশ কয়েকবার এ ছবির মুক্তির দিন পিছিয়েছে। উৎসবে মুক্তি পেতে যাচ্ছে। খুব ভালো লাগছে। অপেক্ষার ফল ভালোই হয়।’ ছবিতে মিমসহ আরও অভিনয় করেছেন শরীফুল রাজ, ইয়াশ রোহান প্রমুখ।

‘পরাণ’–এর একটি দৃশ্যে মিম ও ইয়াশ রোহান
ছবি: সংগৃহীত

শাকিব খান অভিনীত দুটি সিনেমার মুক্তির খবর শোনা গেলে গতকাল খবর নিয়ে জানা গেছে, দুটি নয়, এই ঈদে একটি সিনেমা মুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। সেই একটি ছবি ওয়াজেদ আলী সুমনের ‘অন্তরাত্মা’। তবে ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’ ছবির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আরটিভির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক রহমান বলেন, ‘বড় বাজেটে আমরা ছবিটি বানিয়েছি। দুটি গানের শুটিং ছাড়া পুরো সিনেমাই তৈরি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে দ্রুতই গানটির শুটিং করে দেওয়ার কথা শাকিব খানের। সেভাবেই এগোচ্ছি। কারণ, ঈদ উৎসব ছাড়া এত বড় বাজেটের ছবি মুক্তি দেওয়া ঠিক হবে না।’
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির তালিকায় মুক্তি নিয়ে কোনো তথ্য না থাকলেও পরিচালক শামীম আহমেদ রনি জানালেন, তাঁর পরিচালিত ‘লাইভ’ এবারের ঈদে আসছে। দুই মাস আগে সেন্সর ছাড়পত্রও পেয়েছে তাঁর পরিচালিত এই ছবি। এটির প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়া। এই প্রতিষ্ঠান থেকে ‘গ্যাংস্টার’ নামের আরেকটি ছবির ঈদে মুক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানালেন রনি, ‘সপ্তাহ দু–একের মধ্যে প্রচারণা শুরু করব। ঈদের জন্য আমরা প্রস্তুত।’ দুটি ছবির প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন চিত্রনায়ক সাইমন সাদিক। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, দুটি ছবি এক ঈদে না এসে একটি আসাই ভালো। কিন্তু প্রযোজকের চাওয়া হলে ভিন্ন কথা। দুটি ছবিতে সাইমন সাদিকের বিপরীতে অভিনয় করেছেন মাহিয়া মাহি।

‘গ্যাংস্টার’–এর দৃশ্যে সাইমন ও মাহি
ছবি: সংগৃহীত

ঈদের ছবি প্রসঙ্গে মধুমিতা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘অনেক দিন পর ঈদুল ফিতরের ছবি থেকে ভালো সাড়া পেয়েছি। ধারাবাহিকভাবে যদি ভালো সিনেমা মুক্তি পায়, তাহলে আরও দর্শক আসবেন। সিনেমা ঘুরে দাঁড়াবে।’
তবে নতুন ছবির পাশাপাশি হলসংখ্যাও বাড়াতে হবে বলে মনে করেন এই প্রদর্শক নেতা, ‘গত ঈদে হলসংখ্যা কম হওয়ার কারণে প্রযোজকদের খুব একটা টেবিল কালেকশন হয়নি। আগে মুক্তির সময় টেবিল কালেকশনই ৬০-৭০ লাখ থেকে কোটির ঘরে চলে যেত। বিনিয়োগের অর্ধেক টাকা মুক্তির আগেই উঠে আসত।’
সামনে ঈদুল আজহার সিনেমা নিয়ে আরও আলোচনা হবে বলে মনে করেন প্রযোজক ও পরিচালক মতিন রহমানও। তিনি বলেন, ‘একটা দীর্ঘ সময় পর গত ঈদে দর্শকেরা আনন্দ নিয়ে সিনেমা দেখেছেন। আগামী ঈদের ছবিগুলোর পরিচালক ও শিল্পীরাও দর্শকের কাছে প্রমাণিত। সুতরাং ছবিগুলো নিয়ে আগ্রহ, আলোচনা আরও বেশি হবে মনে হচ্ছে। তবে হলসংখ্যা বাড়ানো গেলে দর্শকদের অংশগ্রহণ আরও বাড়ত।’