‘সালমান শাহর মতো অত টাকা কেউ তোকে দেবে না’
জন্মদিনে মন খারাপ চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পী নিরবের। জন্মদিনে প্রতিবছর উপহার হিসেবে তিনি পান লাল গোলাপ ও রজনীগন্ধা। এবার ফুল দেওয়ার সুযোগ নেই কারও। জন্মদিনের নানা স্মৃতি ও ক্যারিয়ার প্রসঙ্গে কথা বললেন অভিনয়শিল্পী নিরব।
প্রশ্ন :
জন্মদিনের শুভেচ্ছা। কেমন আছেন?
ধন্যবাদ। ভালো আছি। কিন্তু মনটা খারাপ।
প্রশ্ন :
কেন?
মা–বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। তাঁরাই আমাকে পৃথিবীতে আনলেন, আজ তাঁরা নেই। তাঁদের ছাড়া এটাই আমার প্রথম জন্মদিন। গত বছরও মা বেঁচে ছিলেন। বুঝতে শেখার পর থেকে মা আমার জন্মদিনে লাল গোলাপ আর রজনীগন্ধা কিনে দিতেন। সেটাই আমার জন্মদিনে পাওয়া সেরা উপহার। তাঁরা নেই, একটা হাহাকার আর শূন্যতা মনটাকে ভার করে রেখেছে।
প্রশ্ন :
জন্মদিনে ভালো সময় কেটেছিল কখন?
শাহিন কলেজের বন্ধুদের সঙ্গে। আমরা একসঙ্গে অনেক বন্ধু ক্লাস থ্রি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পড়েছি। তাঁদের সঙ্গে ভালো সময় কেটেছে। এখন পরিবারে সময় দেওয়ার চেষ্টা করি।
প্রশ্ন :
লকডাউনে শুটিং নেই, সময় কীভাবে কাটছে?
আজও প্রথম আলোয় দেখলাম, করোনা শনাক্ত ও মৃত্যু বাড়ছে। আমরা কোন দিকে যাচ্ছি, বুঝতে পারছি না। করোনা এখন সারা দেশে ছড়িয়ে যাচ্ছে। এগুলো বেশ ভাবাচ্ছে। আর জন্মদিন নিয়ে আলাদা কোনো আয়োজন চিন্তাই করতে পারি না।
প্রশ্ন :
চলচ্চিত্র নিয়ে কী ভাবছেন?
চলচ্চিত্রের কথা ভেবেই তো করোনাসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়ে চিন্তিত। এভাবে চললে আমরা কোথায় গিয়ে দাঁড়াব, জানি না। সিনেমা মুক্তি দেওয়ার কোনো পথ নেই। প্রযোজক নতুন সিনেমা বানিয়ে কী করবেন? বিনিয়োগের ঝুঁকি এখন কেউ নিতে চাইছেন না। আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি দিন দিন বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে পড়ছে। কিছু সিনেমা অনলাইনে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেখান থেকে বিনিয়োগ উঠে আসা কঠিন। আমাকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে প্রযোজকদের মুখের দিকে। তাঁরা যদি লাভবান হন, তাহলে আমরা কাজ পাব। নইলে চলচ্চিত্রের সঙ্গে জড়িত সবাইকে একেবারে বেকার বসে থাকতে হবে।
প্রশ্ন :
বর্তমান কাজগুলো নিয়ে আপনি কতটা খুশি?
কাজগুলো করে আমি যে শত ভাগ তৃপ্তি পাচ্ছি, সেটা বলব না। কিন্তু পরিস্থিতি ভালো থাকলে ছবিগুলো আমার ক্যারিয়ারের মোড় হয়তো ঘুরিয়ে দিতে পারত। ‘ক্যাসিনো’, ‘ছায়াবৃক্ষ’, ‘চোখ’, রোজিনা আপার ছবিটাসহ অনেকগুলো সিনেমা নিয়ে আমি ভীষণ আশাবাদী। তবে এগুলো যথাযথভাবে মুক্তি পাবে কি না, সেটা নিয়েই দুশ্চিন্তায় আছি।
প্রশ্ন :
আপনার ক্যারিয়ার শুরু ছোট পর্দায়। বড় পর্দায় গিয়ে কখনো কি ‘ছোট পর্দার অভিনেতা’—এমন কিছু শুনতে হয়েছে?
ছোট পর্দার অভিনেতা, প্রথম দিকে এ কথা আমাকে অনেক শুনতে হয়েছে। তখন চলচ্চিত্রের অনেকেই ভয় দেখাতেন। আমাকে নিরুৎসাহিত করতে তাঁরা বলতেন, আফজাল হোসেন, রাইসুল ইসলাম আসাদ, জাহিদ হাসান, মাহফুজ আহমেদসহ অনেকেই চলচ্চিত্রে এসে ফিরে গেছেন। আমি তাঁদের বলতাম, কষ্ট করলে কেষ্ট মেলে। আমি কোথা থেকে এলাম, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ, দর্শক ভালো ছবি ও ভালো অভিনয় দেখতে চায়। নেগেটিভ ধারণা নিয়ে কেউ সিনেমা হলে যায় না।
প্রশ্ন :
প্রথম দিকে আপনি বেশ কিছু সিনেমায় শাকিব খানের সহশিল্পী হয়ে পর্দায় এসেছিলেন। একে কি কখনো ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে হয়েছে?
না। বরং শাকিব খানের সঙ্গে অভিনয় করা আমার সেরা সিদ্ধান্ত ছিল। কারণ, সে সময় আমার আলাদা কোনো দর্শক ছিল না। চলচ্চিত্রের দর্শক আমাকে চিনতেন না। বলতে গেলে শাকিব খানই চলচ্চিত্রে আমার জায়গা করে দিয়েছেন। নতুনদের নিয়ে কাজ করতে গেলে ভালো একটি ব্র্যান্ডিং করতে হয়, প্রচারণা করতে হয়। হুট করে তো কেউ নতুন নায়কের সিনেমা দেখতে যাবে না। নতুন কাউকে নিয়ে মার্কেটিং আমাদের দেশে বলতে গেলে হয়ই না। শাকিব খানের সঙ্গে অভিনয় করার কারণেই দর্শক আমাকে চিনতে পেরেছে। এখন আমি বেছে বেছে কাজ করতে পারছি। নিজের আলাদা একটি জায়গা হচ্ছে।
প্রশ্ন :
১৭ বছরের ক্যারিয়ারে আপনার অর্জন কী কী?
অমিতাভ রেজাসহ অনেক গুণী নির্মাতা এবং অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেয়েছি। বড় প্রতিষ্ঠানের মডেল হয়েছি। একসময় শখে মডেলিং শুরু করেছিলাম। এখন সেই কাজ ভালোবাসতে শিখেছি। অভিনয়শিল্পী হওয়ার চেষ্টা করছি। কিছু দর্শক আমাকে ভালোবাসেন, তাঁদের কাছে একজন নিরব হয়ে উঠতে পেরেছি, পরিবারের ভালোবাসা...এসবই আমার বড় পাওয়া।
প্রশ্ন :
২০০৯ সালে চলচ্চিত্রে নিয়মিত হওয়ার সময় ইন্ডাস্ট্রির আভ্যন্তরীণ রাজনীতির শিকার হয়েছিলেন কি না, মনে পড়ে?
হয়েছি, কিন্তু একসময় মানিয়ে নিয়েছি। হাল না ছেড়ে পরিশ্রম করেছি। আমি মনে করি, ইন্ডাস্ট্রিতে পলিটিকসের চেয়ে নিজেদের মধ্য কাজের সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকা দরকার। কারও পেছনে না লেগে, ভালো–মন্দ বলাটা জরুরি। তাহলে ভালো কাজ করা সম্ভব হয়।
প্রশ্ন :
সিনেমায় কেন এলেন?
সিনেমা করব, এ রকম কোনো ইচ্ছা ছিল না। শখ করে মডেলিং শুরু করলাম। কিছু নাটক করেছিলাম। তখন কাছের অনেকেই বুক চাপড়ে বলতেন, ‘সিনেমা কর, ভালো করবি।’ এভাবেই সিনেমায় আসা। এখন অনেক পরিকল্পনা করে এগোতে হচ্ছে। তবে শৈশবে আমি সালমান শাহর ভক্ত ছিলাম। তখনই জেনেছিলাম, সালমান শাহ সিনেমাপ্রতি চার লাখ টাকা পারিশ্রমিক নেন। আমি মাকে বলতাম, আমিও অভিনয় করলে সালমান শাহর মতো পারিশ্রমিক নেব। মা বলতেন, ‘সালমান শাহর মতো অত টাকা কেউ তোকে দেবে না। সে সুপারস্টার।’
প্রশ্ন :
সম্প্রতি ‘ছায়াবৃক্ষ’ ও ‘অমানুষ টু’র শুটিং শুরু হয়েছিল, সেগুলোর খবব কী?
দুটি সিনেমারই শুটিং শেষ। শ্রীমঙ্গল থেকে ঢাকায় ফেরার পর লকডাউন শুরু হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে কিছু সিনেমার ডাবিং ও অভিনয় শুরু করব।