সিয়ামের মণিকাঞ্চন যোগ

সিয়ামের বাড়িতে মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কার পৌঁছে দিতে যান আয়োজকেরাছবি: তানভীর আহমেদ

‘হ্যালো ভাইয়া, আপনারা এখন যেখানে আছেন, ওখানেই থাকেন। আমি আসছি।’
কিছুক্ষণ পর...
‘হ্যালো কনা, আপনি কি নেমেছেন?’
‘হ্যাঁ ভাইয়া, আমি আপনাদের দেখতে পেয়েছি। ভাইয়া, আমি কনা নই, লিসা, কনার বড় বোন।’
‘ও আচ্ছা। কণ্ঠ একই রকম, তাই ভেবেছি কনা।’
‘ভাইয়া, শুধু কণ্ঠ নয়, গানও একই রকম।’
‘ও। তাই নাকি!’
‘হ্যাঁ। ওর থেকেও ভালো গাই। ও তো ছোটবেলায় আমার পা ধরে বসে থাকত। বলত, আমি যেন গান না গাই। আমি গান ছেড়ে দেওয়াতে ও শিল্পী হয়ে গেল।’
কনার পরিচয় নতুন করে দেওয়ার দরকার নেই। তিনি বাংলাদেশের এই সময়ের অন্যতম প্লেব্যাক শিল্পী। আর তাঁর বোন লিসা যে গান গাইতে পারেন, তা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। এ যাত্রায় সেটি জানা হলো। দরজা খুলে আমন্ত্রণ জানান কনা। সবাই ভেতরে ঢুকি। কেন কনার বাসায়? এই প্রশ্ন অনেকেরই মনে ইতিউতি করছে। মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের ২০১৯ সালের আয়োজনটি করোনার কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি। তাই আয়োজক কর্তৃপক্ষ নিয়েছে এক অভিনব উদ্যোগ। প্রতিবার অনুষ্ঠানস্থল থেকে বিজয়ীরা পুরস্কার বাসায় নিয়ে যান। এবার পুরস্কারগুলো নিয়ে তারকাদেরই বাসায় হাজির আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

যাত্রা শুরু
ব্যস্ত ভোর। কারওয়ান বাজারের ট্রাক থেকে তখনো সবজি নামছে। রোদ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মিলিয়ে যাবে এই ব্যস্ততা। সবজি চলে যাবে রাজধানীর ছোট বাজারগুলোতে। এমন ব্যস্ত শীতের ভোরে একটি গাড়ি ছুটে চলল ২০১৯ সালের মেরিল-প্রথম আলো ‍পুরস্কার বিজয়ী শিল্পীদের বাসায়। তখন ঘড়ির কাঁটা সকাল ৭টা ১০–এ।

অন্য রকম সম্মানের
২০১৯ সালে বিশ্বসুন্দরী ছবির ‘তুই কি আমার হবি রে’ গানের জন্য সেরা গায়িকার (তারকা জরিপ) পুরস্কার পেয়েছেন সংগীতশিল্পী কনা। বাসায় এসে পুরস্কার দেওয়ার এই আয়োজন যেমন অভিনব, তেমন দারুণ লেগেছে তাঁর কাছে। কনার ভাষায়, প্রতিবার তাঁরা অনুষ্ঠানে যানই। কিন্তু বাসায় এসে পুরস্কার দিয়ে যাওয়া অন্য রকম সম্মানের। পুরস্কারের ভেতরে ছিল ট্রফি, পুরস্কার হাতে একটি বাঁধাই করা ছবি, গানের কারভান, একটি গাছ ও প্রসাধনী উপহার। পুরস্কার হাতে বাঁধাই করা কনার ছবিটি দেখে দারুণ লাগে তাঁর। মুখ থেকে বেরিয়ে আসে, ‘ওয়াও। এটা তো অনেক সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ, বকুল ভাই।’ ঝটপট আনুষ্ঠানিকতা সেরে যাত্রা পরবর্তী বাসার দিকে। এবারের যাত্রা উত্তরা, অভিনেতা সিয়াম আহমেদের কাছে।

সিয়ামের বাড়িতে উপহার নিয়ে মেরিল ও প্রথম আলোর কর্মকর্তারা

সঙ্গী কারা
একটু জানিয়ে রাখি, এই যাত্রায় সঙ্গে আছেন প্রথম আলোর হেড অব কালচারাল প্রোগ্রামস কবির বকুল, আলোকচিত্রী তানভীর আহমেদ ও লেখক। কিছুক্ষণ পরই সঙ্গী হন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। গাড়ি ছুটতে ছুটতে চলে শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে আলাপ। উঠে আসে মৃধা বনাম মৃধা, ব্যালাড অব সোলজার, লাভ ইন সিঙ্গাপুর, আলমগীর–কবরী অভিনীত লাভ ইন সিমলা ছবির কথা। লাভ ইন সিমলা সত্তরের দশকের দারুণ রোমান্টিক ছবি। আনিসুল হক ও কবির বকুল এই ছবির গান ‘ওগো তুমি যে আমার কত প্রিয়’ এই সময়েও গাইলেন দারুণভাবে। ঠাওর করা যায়, একসময় বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালি যুগের প্রভাব কতটা ছিল। যেতে যেতে দলটির সঙ্গে যুক্ত হয় আরও দুটি গাড়ি। তাতে আছেন স্কয়ারের পরিচালক মালিক মোহাম্মদ সাঈদ, হেড অব মার্কেটিং জেসমিন জামান ও কর্মকর্তা ফয়সাল মাহমুদ, প্রথম আলোর হেড অব ডিজিটাল বিজনেস এ বি এম জাবেদ সুলতান।

অবন্তীর হাতে সিয়ামের পুরস্কারের স্মারক

সিয়ামের মণিকাঞ্চন যোগ
সিয়াম আহমেদ নিচে নেমে এলেন স্বাগত জানাতে। মেরিল-প্রথম আলো দল উঠে যায় বাসায়। বলে রাখি, সেদিন সিয়াম ছিলেন শ্বশুরবাড়িতে, তাই সেখানেই পুরস্কার দেওয়া হলো তাঁকে। ঘরের বিভিন্ন সোফায় পোষ্য বিড়াল, এখনো সেগুলোর ঘুম ভাঙেনি। আটটি বিড়াল আছে এ বাড়িতে।

২০১৮ সালের পরে ২০১৯ সালেও মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার সিয়ামের ঘরে। এবারও তারকা জরিপ। পাঠকের ভোটে দ্বিতীয়বার। কী অনুভূতি এই সাতসকালে? ‘প্রত্যেকেই চায় একটা রিকগনিশন। আমাদের ক্যারিয়ার যখন শুরু হয়েছে, তখন থেকে আমাদের প্রথম টার্গেট থাকত, কবে মেরিল–প্রথম আলো পুরস্কারে নমিনেশন পাব। আরে নমিনেশন বাদ দিই, কবে ইনভাইট পাব, এটা হচ্ছে কথা। আলটিমেটলি সেখান থেকে নমিনেশন এবং পুরো টিমের পরিশ্রমের জন্য অ্যাওয়ার্ড পাওয়া। এটা একটা বিউটিফুল জার্নি,’ বললেন সিয়াম। এরই মধ্যে চলে আসেন সিয়ামের স্ত্রী অবন্তী। কথায় কথায় জানতে চাওয়া হয়, সিয়ামের পছন্দের খাবার কী? উত্তর, ‘ভুনা খিচুড়ি।’