২৫ বছর পরও সালমান শাহর মায়ের একটিই আক্ষেপ
‘আমি, ইমন, ইমনের বউ, ইমনের বাবা সেবারই প্রথম একসঙ্গে বের হয়েছিলাম। গাড়ি চালাচ্ছিল ইমনের বাবা। আমি তার পাশে বসে। পেছনে ইমন আর ওর বউ। ঢাকার পাবলিক লাইব্রেরিতে সালমানের একটি পুরস্কার অনুষ্ঠানে যাচ্ছিলাম। ছেলেটার গায়ে ছিল কালো নেটের গেঞ্জি আর অফ হোয়াইট প্যান্ট। তখন ওর চুল বড় ছিল। সেদিন ছেলেটাকে কী সুন্দর যে লাগছিল! বারবার ওর দিকে তাকাচ্ছিলাম। আহা রে সেদিন যদি আমি...’ কথাটা আর শেষ করতে পারলেন না প্রয়াত নায়ক সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরী। ফোনের ওপাশে কণ্ঠ ভারী হয়ে এল। বোঝা যায়, তিনি ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। মায়ের কাছে ইমন হয়ে থাকা সন্তান সালমান শাহর জন্য এই কান্না। আজ এই প্রয়াত নায়কের ২৫তম মৃত্যুবার্ষিকী।
তরুণ বয়সের ছেলেকে হারাবেন, কখনোই কল্পনা করেননি এই মা। ছেলেকে বেশির ভাগ সময়ই দেখেছেন হাসিখুশি। তবে মন খারাপ থাকলে বুঝতে পারতেন। কিন্তু মাকে কিছুই বুঝতে দিতেন না সালমান শাহ। নিয়মিত শুটিং নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন। দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে নীলা চৌধুরী বলতে থাকেন, ‘কদিন ধরেই শরীর খারাপ। হাসপাতালে ছিলাম। এই দিনে আমি ভালো থাকি না। এভাবে আমার ইমনের চলে যাওয়ার কথা নয়। আমি কেন আগেই সব জানতে পারলাম না। ২৫ বছর ধরে আমার এই একটাই আক্ষেপ। আমি যদি ভুলেও সেদিন জানতে পারতাম, তাহলে ওকে আমার কাছে নিয়ে আসতাম। অথবা আমি ওর কাছে গিয়ে থাকতাম। আমি ওর পিছু ছাড়তাম না। আমার শুধুই মনে হয়, আমি তো এমনিতেও ওর বাসায় যেতাম, সেদিন তার বাসায় কেন গেলাম না। আমাদের সঙ্গে তাকে কেন রাখলাম না। এটাই আমাকে কষ্ট দেয়।’
মারা যাওয়ার দুই দিন আগে সালমান শাহ তাঁর মা–বাবার কাছে আবদার করছিলেন, তাঁদের পুরস্কার অনুষ্ঠানে যেতে হবে। সালমানের কোনো আবদার মা–বাবা রাখেননি, এমনটা কখনোই হয়নি। ‘সেদিন অনুষ্ঠানে যাওয়ার পথে পুরো সময় একদম শান্ত এক ছেলেকে দেখলাম। কত কথা হলো। তখন ইমনের চুল বড় ছিল। ও ব্যান্ড দিয়ে চুল বাঁধত। গাড়ি থেকে নামার পরে চুলের পেছনে ধরে বলল, মা এটা ধরো। আমি ওর চুল বাঁধার রবার ব্যান্ডটা ধরলাম। পরে মুঠি করে চুল সাজিয়ে আমার হাত থেকে ব্যান্ডটা নয়ে চুল বাঁধল। আমি হেসে বললাম, ইমন তোকে মেয়ের মতো লাগছে। কিন্তু ও কিছু বলল না, খালি হাসল। সে জানত, আমি চুল বড় রাখা পছন্দ করতাম। ছোট থেকেই আমার ছেলে স্টাইলিশ ছিল। তার মধ্যে কোনো অহংকার কোনো দিন দেখিনি। সবার সঙ্গে মিশত ছেলেটা,’ কথাগুলো বলেই আবারও নিশ্চুপ হয়ে যান নীলা চৌধুরী।
দীর্ঘদিন ধরে তিনি যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। সেখানেই আজ ছেলের জন্য বাসায় ও মসজিদে দোয়ার ব্যবস্থা করেছেন। নিজেই কোরআন খতম দিয়েছেন। দেশের সালমান শাহর কবর জিয়ারত ও প্রিয় নায়কের ভক্তরা তাঁকে নানাভাবে স্মরণ করছেন, সেই খবর তিনি জানেন। সবার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কিন্তু বারবার তাঁর কথায় ফিরে আসে পাবলিক লাইব্রেরি সেদিনের ঘটনা। তিনি বলেন, ‘কেন জানি না সেদিন ইমনকে দেখে বারবার ওর শৈশবের সঙ্গে মিলাচ্ছিলাম। তখনো ইমন ওই রকমই ছিল। চুল বড় রাখলে ওকে প্রায়ই মজা করে বলতাম, তোকে মেয়ের মতো লাগছে। কারণ, ওর নাক, মুখ, হাত অনেকটা আমার মতো ছিল। ও খুব একটা রাগত না। যখন রাগত, তখন ওর চোখ–মুখ লাল হয়ে যেত। সে জন্য ও রাগ করে বা অভিমান করে, এমন কিছু করতাম না। সেই ছেলে আমাদের ছেড়ে যাবে, বুঝতে পারলে লাইব্রেরি থেকেই যেতে দিতাম না। এই আফসোস আমাকে প্রতিটা মুহূর্তে কাঁদায়।’