নায়িকা পাওয়া যাচ্ছে না

শাকিব খানকে নিয়ে নতুন ছবির ঘোষণা দিয়েছেন পরাণ, দামালখ্যাত নির্মাতা রায়হান রাফি। শাকিবের বিপরীতে অভিনয়ের জন্য এখন নায়িকা খুঁজছেন তিনি। কিন্তু নায়িকা পাওয়া যাচ্ছে না। কেবল রাফিই নন, সংশ্লিষ্ট অনেকের সঙ্গেই কথা বলে জানা গেল, বাণিজ্যিক সিনেমায় নায়িকাসংকট তাঁদের ভোগাচ্ছে।
নায়িকাসংকট দেশের বাণিজ্যিক সিনেমায় নতুন কিছু নয়। তার মধ্যে বিশেষ একটা পরিস্থিতি এ সংকটকে আরও তীব্রতর করেছে। সেটা কেমন, রাফির বক্তব্যেই তা বোঝা যাবে, সম্প্রতি কয়েকজন নায়িকা মা হয়েছেন, কেউ মা হবেন। যেমন এখন মাতৃত্বকালীন বিরতিতে আছেন পরীমনি। মাহিয়া মাহি চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আপাতত তিনিও তাই কাজ করবেন না। অন্যদিকে নুসরাত ফারিয়া কলকাতার ছবিতেই বেশি সময় দিচ্ছেন। এর বাইরে যাঁরা আছেন, তাঁরা আগের প্রজন্মের মৌসুমী, শাবনূর, পূর্ণিমাদের মতো একই মাপের নন।

মৌসুমী ও শাবনূর

সব ধরনের চরিত্রের সঙ্গে তাঁরা মানানসইও নন। তাঁদের কেউ আবার নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত। মোটাদাগে ঢাকাই বাণিজ্যিক ছবিতেই এখন নায়িকাসংকট। এ কারণে সিনেমা তৈরিতে অনেক পরিচালকই দ্বিধায় আছেন।

নায়িকা–খরার মধ্যে সুখবর বলতে বিদ্যা সিনহা মিম। চলতি বছর পরাণ ও দামাল দিয়ে বলা যায় ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করেছেন তিনি। তবে রায়হান রাফির প্রশ্ন, এত বড় একটা ইন্ডাস্ট্রি দু-তিনজন নায়িকা দিয়ে কীভাবে চলবে। তাঁর মতে, নতুনদের নিয়ে এক-দুটি ছবি পরীক্ষামূলকভাবে করা যায়। তাই বলে সব সময় তো এটা সম্ভব নয়।

নায়িকা–খরার মধ্যে সুখবর বলতে বিদ্যা সিনহা মিম

এ নায়িকাসংকটের অন্য কিছু কারণও ব্যাখ্যা করলেন রাফি, টেলিভিশনে ভালো অভিনেত্রীরা আছেন, বাণিজ্যিক ছবিতে তাঁরা আসতে চাইছেন না। একসময় দেশে বিভিন্ন রিয়েলিটি শো হতো, সেখান থেকে গ্রুমিং করা ভালো ভালো মেয়ে বের হতেন। অতীতে তাঁদের অনেকেই নায়িকা হয়েছেন। সে ধরনের প্রতিযোগিতাও তেমন হচ্ছে না।
সেই সত্তর-আশির দশক থেকেই বাংলা সিনেমার দর্শকদের প্রবণতা পর্যবেক্ষণ করে আসছেন মধুমিতা হলের কর্ণধার ইফতেখার নওশাদ।

ঢাকাই ছবির নায়িকাসংকট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘অনেক বছর ধরে হল চালাচ্ছি। সর্বশেষ শাবনূর, মৌসুমীদের দেখতে দর্শকদের হলে আসতে দেখেছি। এরপর মাহি একটা জায়গা তৈরি করছিলেন কিন্তু ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারেননি। এ কারণে দীর্ঘদিন ধরেই নায়িকাসংকট। এখন যা অবস্থা, পাঁচজন পরিচালক একসঙ্গে বাণিজ্যিক ছবি নির্মাণ শুরু করতে চাইলে নায়িকাসংকটে পড়বেন।’ এ হলমালিকের কথা, সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও নানা গুঞ্জন, স্ক্যান্ডাল এখনকার নায়িকাদের কাউকে কাউকে পিছিয়ে দিয়েছে।

নাজিফা তুষি
ইনস্টাগ্রাম থেকে সংগৃহীত

এ ছাড়া এ সময়ের আলোচিত অভিনেত্রীদের মধ্যে আছেন সুনেরাহ্‌ বিনতে কামাল, নাজিফা তুষিরা। কিন্তু এফডিসিকেন্দ্রিক বাণিজ্যিক ছবিতে কাজ করেন না এ দুজন। আরেক অভিনেত্রী বর্ষাও নিয়মিত সিনেমা করেন না, যা–ও করেন, সেটি তাঁর স্বামীর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকেই।
নায়িকাসংকটের কথা স্বীকার করলেন পরিচালক অনন্য মামুনও, হাতে গোনা তিন–চারজন ছাড়া দর্শক গ্রহণযোগ্য নায়িকা নেই বললেই চলে। একটা ইন্ডাস্ট্রিতে বছরে ২০-৩০টা সিনেমা হলেও তো ৫-৭ জন নায়িকা থাকা দরকার। কিন্তু বর্তমানে সে অবস্থা নেই। মিম, বুবলী, নুসরাত ফারিয়াদের বাইরে পূজা চেরির একটা সম্ভাবনা আছে। তবে কোনো বিতর্কে না জড়িয়ে নিজেকে সংযত রেখে কাজ করতে থাকলে একটা জায়গায় পৌঁছে যেতে পারেন।
এ পরিচালক এখন স্পর্শ নামে যৌথ প্রযোজনার ছবি নির্মাণ করছেন। ছবিটিতে কলকাতা থেকে ঋতুপর্ণা সেনগুপ্তকে নিয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে প্রথম সারির যে দু-তিনজন নায়িকা আছেন, তাঁদের সিডিউল মেলেনি। তিনি জানান, ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ থেকে নতুন মুখ আরিয়ানা জামানকে নিয়েছেন।

এক যুগ পরে পরাণ দিয়ে ছন্দে ফিরেছেন মিম। নায়িকাসংকটের কথা স্বীকার করলেন তিনিও, ‘অনেক দিন থেকেই নায়িকার সংকট। আমাদের মতো কয়েকজনকে দিয়ে তো এত বড় ইন্ডাস্ট্রি চলবে না। বছরে যদি ৩০টা সিনেমাও তৈরি হয়, তা–ও তো দর্শক গ্রহণযোগ্য পাঁচ-ছয়জন নায়িকা লাগবে।’ তবে মিম মনে করেন, এ সংকটের জন্য প্রযোজক-পরিচালকদেরও দায় আছে। ‘মৌসুমী আপা, শাবনূর আপাদের পর থেকে সিনেমায় নায়িকাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ও নায়িকা তৈরির পথ রুদ্ধ করেছে,’ বলেন মিম।

দিলারা হানিফ পূর্ণিমা
প্রথম আলো

নায়িকা পূর্ণিমা মনে করেন, নায়িকাদের সঙ্গে নায়কেরও সংকট আছে। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা নিয়মিত কাজ করেছি, তখন নায়কের পাশাপাশি নায়িকার নামেও দর্শক হলে এসেছেন। এখন হয়তো সেই জিনিস নেই।’ এর কারণও ব্যাখ্যা করলেন তিনি, আগে হন্যে হয়ে খুঁজেও নায়িকাকে সামনাসামনি দেখার সুযোগ পেতেন না দর্শক। প্রিয় নায়িকাকে দেখার জন্য হলেই যেতে হতো। এখন নায়িকার দেখা পাওয়া সহজ হয়ে গেছে। এখনকার কোনো কোনো নায়িকা সিনেমার চেয়ে ফেসবুকে অনুসারী তৈরিতে বেশি আগ্রহী।
একসময়কার প্রযোজক ও পরিচালক মতিন রহমান মনে করেন, এখন কোনো কোনো নায়িকার নানা ধরনের স্ক্যান্ডাল ছড়িয়েছে। দর্শকেরা নায়িকার প্রতি আগ্রহী হয়ে হলে যাবেন, এমন নায়িকা এখন নেই বললেই চলে। যে দু-একজন তৈরি হচ্ছিলেন, স্ক্যান্ডালের কারণে তাঁদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন দর্শক।