তার আগেই হেনা আমার হয়ে গেছে...
‘চাচা, হেনা কোথায়?’ সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংলাপটি ব্যাপক আলোচিত হচ্ছে। ১৯৯৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘প্রেমের সমাধি’ সিনেমায় সংলাপটি ছিল। পর্দায় ছিলেন আনোয়ার হোসেন ও বাপ্পারাজ। আর ছবিতে হেনা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন শাবনাজ। এই ছবির আরেকজন নায়ক ছিলেন অমিত হাসান। এদিকে ফেসবুকে কেউ শাবনাজের জীবনসঙ্গী নাঈমসহ এমন একটি ফটোকার্ডও ছড়িয়েছেন, যেখানে লেখা রয়েছে, ‘বিশ্বাস করুন, হেনা আমার কাছে।’
ভিডিও ক্লিপের পাশাপাশি এই ফটোকার্ড নজরে এসেছে একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক নাঈমের। প্রথম আলোর সঙ্গে আজ সোমবার দুপুরে কথা হয় তাঁর। মজাচ্ছ্বলে তিনি বললেন, ‘আসলেই তো। হেনা তো আমার কাছেই।’
হাসতে হাসতে এই নায়ক বললেন, ‘এই সিনেমা যখন হয়েছে, তার আগেই হেনা আমার হয়ে গেছে।’ কথা প্রসঙ্গে নাঈম বললেন, ‘১৯৯৬ সালের ছবি “প্রেমের সমাধি”, তার আগেই আমার ও শাবনাজের বিয়ে হয়ে গেছে। সিনেমা মুক্তির এত বছর পরও কয়েক প্রজন্মের মানুষ তাদের অভিনয় নিয়ে কথা বলছেন। অভিনয়শিল্পীকে নিয়ে কথা বলছেন। সেই দৃশ্যের সঙ্গে একাত্ম হচ্ছেন। বিনোদিত হচ্ছেন। তাঁদের সময়কে রাঙিয়ে তুলছেন, তা–ও এত বছর পর। শিল্পীর জন্য এটাই তো অনেক বড় বিষয়। আমাদের বাচ্চারাও ভীষণ মজা পাচ্ছে। সবাই মিলে আমরা ভীষণ উপভোগ করছি।’
৩১ বছরের দাম্পত্য জীবন নাঈম–শাবনাজের। তাঁদের সংসারে আছে দুই কন্যাসন্তান। একজন দেশের বাইরে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়েছেন। আরেকজন দেশে পড়াশোনা করছেন। হেনা চরিত্রের প্রসঙ্গ উঠতেই নাঈম বললেন, ‘এই ভিডিও ক্লিপ হঠাৎ কোথা থেকে সামনে এসেছে, কিছুই জানি না। তবে এই ছবি যে মানুষ মনে রেখেছে। সংলাপ থেকে সংলাপ, গান—সবই উপভোগ করছে, এটা ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য পড়ে বুঝতে পারছি। আমি ফেসবুকে অনেক ধরনের মন্তব্য পড়লাম। কেউ বলছেন, অনেকবার ছবিটি তাঁরা দেখেছেন। কেউ বলছেন, “আমার প্রেমের সাথে মিলে গেছে।” এসব দেখে এটাই উপলব্ধি, শিল্পীর এটাই সবচেয়ে বড় অর্জন। কতগুলো প্রজন্ম এসবের সঙ্গে নিজেদের কানেক্ট করছে, বিনোদিত হচ্ছে—কম কিসে।’
নাঈম তাঁর কথায় আলাদা করে উল্লেখ করলেন বাপ্পারাজের কথা। জানালেন, বাপ্পারাজের অভিনয়ে নিয়মিত হওয়া উচিত। তাঁকে নিয়ে পরিচালকেরা গল্প ভাবতে পারেন। কারণ, তিনি দুর্দান্ত একজন অভিনয়শিল্পী। নাঈম বললেন, ‘অভিনয় দিয়ে কেউ অ্যাকশন হিরো, কেউ রোমান্টিক হিরো কিংবা কেউ ট্যাজেডি কিং হয়ে ওঠেন। বাপ্পা ভাই তাঁর অভিনয় দিয়ে ট্র্যাজিক হিরো হয়ে উঠেছেন। তিনি খুব ভালো একজন অভিনয়শিল্পী। তাঁর অভিনয়ক্ষমতা অবিশ্বাস্য রকমের ভালো। তাঁর অভিনয়ক্ষমতা দর্শকহৃদয় স্পর্শ করেছে বলে এত বছর পরও মানুষের মনে জায়গা করেছেন। আমরা একসঙ্গে কাজও করছি “ঘরে ঘরে যুদ্ধ” নামের একটা ছবিতে।’
২৯ বছর আগে মুক্তি পাওয়া ‘প্রেমের সমাধি’ ছবির পরিচালক ইফতেখার জাহান। আর ছবির কাহিনি, সংলাপ ও চিত্রনাট্য করেছেন দেলোয়ার জাহান ঝন্টু। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া ‘প্রেমের সমাধি’ ছবির সেই ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, সিনেমার একপর্যায়ে নায়ক বকুল (বাপ্পারাজ) দীর্ঘদিন পর বাড়ি ফিরে তার প্রেমিকা হেনার (শাবনাজ) বাড়ি সাজানো দেখতে পায়। সে হেনার বাবাকে জিজ্ঞেস করে, ‘চাচা, বাড়িঘর এত সাজানো কেন? আর হেনা কোথায়? চাচা, কথা বলছেন না যে। চুপ করে আছেন কেন?’ জবাবে চাচা বলে, ‘হেনাকে তুমি ভুলে যাও, হেনার বিয়ে হয়ে গেছে।’ বকুল তখন আবেগাপ্লুত হয়ে বলে, ‘না না, হেনার বিয়ে হতে পারে না। আমি বিশ্বাস করি না, আমি বিশ্বাস করি না।’ এরপর ‘প্রেমের সমাধি ভেঙে, মনের শিকল ছিঁড়ে, পাখি যায় উড়ে যায়’ গানটি পর্দায় বাজতে থাকে।