অভিনেতা থেকে প্রযোজক শরীফ

ঈদে মুক্তি পাওয়া এশা মার্ডার: কর্মফল সিনেমা দিয়ে আলোচনায় শরীফ সিরাজ। আগামী মাসে উড়াল সিনেমা দিয়ে প্রযোজক হিসেবে নতুন যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছেন, মুক্তির অপেক্ষায় আছে তাঁর অভিনীত পিনিক। তাঁর ক্যারিয়ারের পথচলার গল্প শোনাচ্ছেন মনজুরুল আলম
শরীফ সিরাজ। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

দেড় যুগের বেশি সময় মঞ্চে অভিনয় করে বড় পর্দায় নাম লেখান শরীফ সিরাজ। চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার শুরুর পর বুঝতে পারেন, এফডিসি ঘরানার সিনেমা নিয়ে অনেকেরই নাক সিঁটকানো ভাব, কেউ কেউ ছোট করেও দেখেন, এমনকি এফডিসির সিনেমা নিয়ে নেতিবাচক কথাও শুনতে হয়েছে। কেউ কেউ সরাসরি এফডিসির সিনেমায় না জড়িয়ে নাটক থেকে আসা নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দেন।

এফডিসির কাজে অভিজ্ঞতা
এফডিসি ঘরানা বলে কাজটাকে কেন আলাদা করা হয়, দীর্ঘ সময় এটাই বুঝে উঠতে পারতেন না শরীফ। ‘পরে কাজ করে যতটুকু বুঝেছি, এফডিসি ঘরানার কাজগুলোর বেশির ভাগ কলাকুশলী এফডিসির থাকেন। আবার নাটক থেকে উঠে আসা নির্মাতাদের সঙ্গে বেশির ভাগ কাজ করেন নাট্যাঙ্গনের শিল্পী–কলাকুশলীরা। ওটিটিতে আবার দুই ঘরানার মিশ্রণ। সব ধরনের টিমের সঙ্গেই কাজ করেছি। সবাই ভালো। বিশেষ করে বলব, এফডিসির আলাদা একটা জায়গা রয়েছে। এখানে পেশাগত জায়গাটা যেমন আলাদা, তেমনি পেশাদারিটাও বেশি। কীভাবে শিল্পীদের সম্মান করতে হয়, তারা সেটা বেশি জানে। এফডিসি নিয়ে আমার মধ্যে নেতিবাচক কিছু নেই। সবার সঙ্গে কাজ করেই আমি স্বাচ্ছন্দ্য,’ বলেন শরীফ।

শরীফ সিরাজ। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

নতুন যাত্রায় ‘উড়াল’
বিদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে হরহামেশাই শুনি, জর্জ ক্লুনি, ব্র্যাড পিট, উইল স্মিথ, আমির খান, শাহরুখ খানদের মতো অভিনয়শিল্পী প্রযোজক হিসেবে নাম লেখাচ্ছেন। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এ চিত্র একেবারেই উল্টো। অভিনয় করে রেস্তোরাঁ ব্যবসায় নাম লেখালেও কেউ প্রযোজনা করতে চান না। অভিনয় শুরুর পর থেকেই এটা ভাবায় তরুণ অভিনেতা শরীফকে। তিনি বলেন, ২১ বছর ধরে থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত। পরে সিনেমায় নাম লিখিয়ে প্রযোজনার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। হঠাৎ মঞ্চের একদল পরিচিত মুখ এবং বন্ধুস্থানীয় সবাই তাঁকে জানান, সিনেমা করতে যাচ্ছেন তাঁরা, প্রযোজক হিসেবে তাঁকে চান। শরীফ বলেন, ‘তরুণদের সবাই আমার পরিচিত। তাঁদের সৃজনশীলতার ওপর আমার বিশ্বাস ছিল দৃঢ়। তাঁরা যখন জানান ছবিতে স্টার কাস্ট নেই, কিন্তু ভালো একটা গল্প আছে, তখন তাঁদের উদ্যোগের সঙ্গে সানন্দে যুক্ত হই।’

শরীফ সিরাজ প্রযোজিত ‘উড়াল’ সিনেমার পোস্টার

তাহলে পরিচয় কী
নামের আগে এখন প্রযোজক যুক্ত হলেও সব সময় অভিনেতা পরিচয়ই দিতে চান শরীফ সিরাজ। তিনি মনে করেন, অভিনয়ের মধ্য দিয়ে সৃজনশীল কাজে নিজেকে খুঁজে পান। এটাই তাঁর ধ্যানজ্ঞান। তিনি বলেন, ‘আমার অভিনয় ক্যারিয়ারের কোনো ক্ষতি চাই না, অভিনয়ই আমার প্রধান প্রায়োরিটি। ২১ বছর ধরে অভিনয়কে মনের খোরাক হিসেবেই ভেবেছি। পাশাপাশি সহকর্মীদের উৎসাহিত করতে ইন্টারেস্টিং প্রজেক্টে প্রযোজক হিসেবে কাজ করব।’

শরীফ সিরাজ। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

শিক্ষকতা থেকে অভিনয়
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন শরীফ সিরাজ। বর্তমানে পিএইচডি করছেন। শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করাটাও তাঁর কাছে অভিনয়ের অংশ। জানান, শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাও তিনি অভিনয় ক্যারিয়ারে কাজে লাগাচ্ছেন। শরীফ বলেন, ‘আমার মঞ্চে পথচলা, আমার টেলিভিশন নাটক, ওয়েব সিরিজে অভিনয়, বড় পর্দায় অভিনয়, ক্লাসে লেকচার—সবকিছুকেই আমি পারফরম্যান্স হিসেবে দেখি। এসব চর্চার মধ্য দিয়েই নিজেকে পরিপূর্ণ অভিনয়শিল্পী হিসেবে গড়ে তুলেছি। যেমন শিক্ষকতা করার জন্য আমাকে প্রচুর পড়াশোনা করতে হয়, তেমনি অভিনয়ে ভালো করার জন্য পড়াশোনার বিকল্প নেই। দুই মাধ্যম থেকে পাওয়া অভিজ্ঞতাই আমি অভিনয়ে ব্যবহার করি। এর মধ্য দিয়েই হয়তো নিজেকে আলাদা করতে পারি।’

শরীফ সিরাজ। ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

অনুপ্রেরণা
পছন্দের মানুষের কাছ থেকে অভিনয়ের প্রশংসা পেলে ভালো লাগে, জানান এই অভিনেতা। কিন্তু মন খারাপ হয় এই ভেবে যে বাংলাদেশে বিদেশের মতো, এমনকি ভারতের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজের সুযোগও তিনি পাচ্ছেন না। ফলে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগও কম। ‘ক্যামেরার সামনে স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় করেই নিজেকে প্রমাণ করতে চাই। এ জন্য আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা জ্যাক নিকলসন। হয়তো রবার্ট ডি নিরো, ডে লুইস বা ডিক্যাপ্রিওদের কথাও বলা যায়। কিন্তু ক্যামেরার সামনে নিকলসনের অভিনয় আমার কাছে সবচেয়ে বেশি স্বতঃস্ফূর্ত, বাস্তব ও জীবনঘনিষ্ঠ লাগে। অভিনয়ের সময়ও হয়তো কখনো কখনো প্রিয় তারকাকে সামনে রাখি।’

‘এশা মার্ডার’ থেকে প্রাপ্তি
সিনেমায় ইভ টিজার চরিত্রে অভিনয় করেছেন শরীফ। ঈদের পর থেকেই সিনেমাটি নিয়ে দর্শকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন। তবে অভিনয়শিল্পী হিসেবে তিনি মনে করেন, চরিত্রের গভীরতা আরও বেশি হওয়ার দরকার ছিল। ‘নেগেটিভ চরিত্রটি দর্শক পছন্দ করেছেন। যেকোনো চরিত্রই দর্শক পছন্দ করলে অবশ্যই ভালো লাগে। তবে আমি নিজের সমালোচনা বেশি করি। বারবার নিজের চরিত্র নিয়ে ভাবি, কোথায় দোষত্রুটি রয়েছে। কারণ, এক ভুল বারবার করতে চাই না। ভুল থেকে শিক্ষা নিয়েই এগিয়ে যেতে চাই,’ বলেন শরীফ সিরাজ।

‘এশা মার্ডার’ সিনেমায় নজর কেড়েছেন শরীফ সিরাজ। ছবি: ফেসবুক থেকে