জুয়ার প্রচারে পরীমনি!

পরীমনিফেসবুক থেকে

জুয়ার প্রতিষ্ঠানের পণ্যদূত হিসেবে নাম লেখালেন ঢাকাই সিনেমার আলোচিত অভিনেত্রী পরীমনি। প্রতিষ্ঠানটির একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হিসেবেও দেখা গেছে তাঁকে।  

বাংলাদেশের আইনে যেকোনো ধরনের জুয়া ও বাজি ধরা নিষিদ্ধ। প্রচার-প্রচারণায়ও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই রোববার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি অনলাইন বেটিং (জুয়া) প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনচিত্র প্রকাশ করেছেন পরীমনি।
এতে ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালে বাজি ধরে অর্থ লাভের জন্য দর্শকদের প্রলুদ্ধ করতে দেখা গেছে তাঁকে। ফেসবুকে পরীমনির অনুসারীর সংখ্যা ১ কোটি ৬০ লাখের বেশি।

অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে রোববার রাতে প্রথম আলোর তরফ থেকে পরীমনির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর সাড়া পাওয়া যায়নি।

পরীমনি
ফেসবুক থেকে

বিজ্ঞাপনটি প্রথম আলোর তরফ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেনকে পাঠানো হয়েছিল।

বিজ্ঞাপনটি দেখে বি এম মইনুল হোসেন আজ রোববার রাতে প্রথম আলোকে জানান, এ জাতীয় বেশ কিছু বিজ্ঞাপন এখন বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত হয়। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এ ধরনের জুয়ার প্রচার করা আইনের পরিপন্থী। জুয়ার প্রচারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেটা মানা হচ্ছে না। সেভাবে ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে না। ফলে জুয়ার প্রচার ক্রমেই বাড়ছে।

শুধু পরীমনি নন, সম্প্রতি অপু বিশ্বাস, মাহিয়া মাহিসহ আরও কয়েকজন তারকাকে নিষিদ্ধ জুয়ার প্রচারে দেখা গেছে। তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্লেষকেরা বলছেন, মূলত সাধারণ মানুষের মাঝে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করতে তারকাদের বিজ্ঞাপনচিত্রে নেওয়া হয়। এতে সাধারণ মানুষ তারকাদের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে জুয়ার ফাঁদে পা দেন।

পরীমনি
ফেসবুক থেকে

বিষয়টি নিয়ে অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন বলছেন, ‘জুয়ার প্রতিষ্ঠানগুলো কোটি কোটি টাকার অবৈধ ব্যবসা করে। সেখান থেকে কিছু অংশ বিজ্ঞাপনে ব্যয় করে। তারকারাও নৈতিক ব্যাপারটা মাথায় রাখছেন না।’

তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাবের এক প্রতিবেদনে বরাতে গত ৪ এপ্রিল প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘ফেসবুকে বাংলাদেশিদের লক্ষ্য করে জুয়ার বিজ্ঞাপনে বছরে ব্যয় ১৫ কোটি টাকা’ শিরোনামে খবরে বলা হয়েছে, ফেসবুকসহ মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোতে বাংলাদেশিদের লক্ষ্য করে জুয়ার বিজ্ঞাপনে বছরে আনুমানিক ১৫ কোটি টাকা বেশি ব্যয় করা হয়। তবে প্রকৃত ব্যয় আরও বেশি হতে পারে বলে ডিসমিসল্যাব বলছে।

অনলাইনে জুয়ার বিস্তার নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশসহ (টিআইবি) বিভিন্ন সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার করা হচ্ছে বলেও দাবি করেছে টিআইবি।

গত ১২ মে প্রথম আলোতে প্রকাশিত ‘খেলায় চলছে জুয়ার বিজ্ঞাপন, দেখেও দেখছে না কেউ’ শিরোনামে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ২০২২ সালে সাকিব আল হাসান বেটিং–সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট ‘বেট উইনার নিউজের’ পণ্যদূত হয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন। দেশের আইনে জুয়া বা জুয়ার প্রচারণা নিষিদ্ধ বলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) তখন নিয়েছিল শক্ত অবস্থান। বিসিবির চাপে সাকিব বেট উইনারের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিলেন।

আরও পড়ুন