‘হডসনের বন্দুক’ নিয়ে রহস্য
২০১০-১১ অর্থবছরে অনুদান পায় ‘হডসনের বন্দুক’। সিনেমাটি ২০১৩ সালে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন প্রশান্ত অধিকারী। কিন্তু অর্থনৈতিক সংকটের কারণে একাধিকবার বন্ধ হয়ে যায় শুটিং। বিলম্বের কারণে বদলে যেতে থাকে অভিনয়শিল্পী। সিনেমাটি নিয়ে খোদ শিল্পীরাই যখন হতাশা ব্যক্ত করতে থাকেন, তখন হঠাৎ গত বছর এপ্রিলে জানা গেল, সেন্সর সনদ পাচ্ছে হডসনের বন্দুক। তারপরও ছবিটি মুক্তি পেতে আরও এক বছরের বেশি সময় লেগে গেল। একের পর জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে আজ ঢাকা ও ঢাকার বাইরের ১০টি সিনেমা হলে মুক্তি পাচ্ছে ‘হডসনের বন্দুক’।
সৈয়দ শামসুল হকের কিশোর উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ছবিটির গল্প এমন, সিলেটের এক চা-বাগানে সিপাহি বিদ্রোহে ব্যবহার করা একটি বন্দুক আছে। বহু বছর আগে এক ব্রিটিশ কর্মকর্তা বন্দুকটি এখানে নিয়ে এসেছিল। তারই এক বংশধর এবার বন্দুকটি নিয়ে যেতে চায়।
লন্ডনের এক নিলাম প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এ ব্যাপারে তার আলোচনাও হয়েছে। বাংলাদেশের একটি মাফিয়া দলের সঙ্গে হাত মেলায় সে। কিন্তু কেউ একজন চায় বন্দুকটি বাংলাদেশের জাদুঘরে জমা দিতে। এর মধ্যেই নানা রহস্য।
থ্রিলার, সাসপেন্স, রহস্য অভিযান ধারার গল্প আমাদের দেশে তেমন একটা তৈরি হয় না। এ ধরনের গল্প হওয়ায় ‘হডসনের বন্দুক’ নিয়ে আশাবাদী ছিলেন সিনেমাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কিন্তু বারবার হোঁচট খাওয়া নিয়ে কথার শুরুতেই পরিচালক বললেন, ‘ওয়ান ম্যান আর্মি হয়ে কাজটি শেষ করেছি। অভিনয়শিল্পীদের কাছ থেকে এমন অসহযোগিতা পেয়েছি যে শুটিং বাতিল করতে হয়েছে। ঢালিউডের এক খল অভিনেতাকে নিয়ে শুটিং শুরুর পর পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দ্বিগুণের বেশি চাইল। সিলেটের শুটিং এফডিসিতে করতে বলল। শুটিং চলে ধানমন্ডি, সেই অভিনেতা পুরান ঢাকার চা খাবেন। পরে বাধ্য হয়ে সাত দিন শুটিং করার পর তাঁকে বাদ দিয়ে পুনরায় শুটিং করতে হলো। কাজ শেষ করতে করতে আমি নিজেই হতাশ হয়ে পড়েছি।’
‘হডসনের বন্দুক’-এর অভিনয়শিল্পী খুঁজতে বছর পার করতে হয়েছে। শুরুতে নাসিরউদ্দীন শাহকে চেয়েছিলেন পরিচালক। তাঁকে পাওয়া গেল না। পরে সব্যসাচী চক্রবর্তী, অঞ্জন দত্তরা আশা দিলেও ব্যস্ততার কারণে সময় দিতে পারেননি। সব বাধা পেরিয়ে ২০১৪ সালে শুরু হয় শুটিং। ৩৪ দিনের সেই শুটিং অর্থসংকট, শিল্পীদের অসহযোগিতা, শুটিং ফুটেজ হারিয়ে যাওয়াসহ নানা কারণে শেষ করতে লেগে যায় ৩ বছর। অনুদানের টাকায় সিনেমা শেষ করতে ব্যর্থ হন পরিচালক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার এই সাবেক শিক্ষার্থী সিনেমার শুটিংয়ের অর্থ সংগ্রহ করতে একসময় নিজেই চিত্রকর্ম এঁকে বিক্রি করেন। ধারদেনা করেন। কিন্তু কখনোই হাল ছাড়েননি।
এখন আর পেছনে ফিরে তাকাতে চান না প্রশান্ত অধিকারী।
যমুনা ব্লকবাস্টার, বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্স, শ্যামলী, লায়ন, নারায়ণগঞ্জের সিনেস্কোপ, বগুড়ার মধুবন সিনেপ্লেক্স, চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিনসহ ১০টি হলের বুকিং পেয়ে মুখে হাসি ফিরেছে। তিনি জানান, ‘আমিই একা সব কাজ করছি। আমাদের কোনো বাইরের প্রযোজক নেই। এ কারণে আপাতত খুব বেশি সিনেমা হলে মুক্তি দিতে পারছি না। আরও ৫টি হল সিনেমাটি চেয়েছিল। সিনেমাটি নিয়ে এই আগ্রহে আমি খুশি। এখন দর্শক যদি পছন্দ করেন, তাহলে সেটাই হবে বড় প্রাপ্তি।’
ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ছবি ‘হডসনের বন্দুক’ নিয়ে শুরুতে খুবই আশাবাদী ছিলেন মৌসুমী হামিদ, ‘তখন অনেক সিনেমার প্রস্তাবের মধ্যে এ সিনেমায় নাম লিখেছিলাম। কারণ, সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাসের গল্পটি আগেই জানা ছিল। গল্পে ফেলুদা–ফেলুদা একটা ব্যাপার আছে, থ্রিলারের অনেক কিছুই আছে।’ কিন্তু পরে ছবিটির কাজ বারবার পিছিয়ে পড়ায় হতাশ হয়ে পড়েন এই অভিনেত্রী, ‘বহু আগে শুটিং করেছিলাম। একসময় ভেবেছিলাম, সিনেমাটি মনে হয় আর আলোর মুখ দেখবে না। সিনেমাটি নিয়ে আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। এখন অবশ্যই অভিনেত্রী হিসেবে আমি খুশি, সিনেমাটি দর্শকদের কাছে যাচ্ছে।’
সিনেমার অন্যতম এই অভিনেত্রী শুটিংয়ের ব্যস্ততার কারণে সরাসরি প্রচারণায় থাকতে পারেননি। সম্প্রতি সিনেমা প্রেস শোতেও হাজির হননি। তিনি জানান, শুটিং থেকে ফিরেই প্রচারণায় যুক্ত হবেন। বর্তমানে ফেসবুকে প্রচার চালাচ্ছেন।
সিনেমাটি নিয়ে আরও প্রচারণা দরকার ছিল কি না, এমন প্রশ্নে প্রশান্ত বলেন, ‘আমার প্রথম সিনেমা হিসেবে প্রথম দিকে অনেককে বিশ্বাস করে ভুল পথে হেঁটেছিলাম। সেই বিশ্বাস করে এখনো ঠকছি। আমার সিনেমার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র লুৎফর রহমান জর্জ ও মৌসুমী হামিদ। এক মাস আগে প্রেস শোয়ের ব্যাপারে কথা বলেছিলাম, তাঁরা সময় দিয়েছিলেন। অথচ গতকাল অনুষ্ঠান শুরুর সময় জর্জ ভাই জানালেন, শুটিংয়ের কারণে আসতে পারবেন না। মৌসুমী আসি আসি করে শেষে বলল, শুটিংয়ে ঢাকার বাইরে। তারা অনুষ্ঠানে থাকলে আরেকটু প্রচারণা পেতাম। দর্শকদের বলব, আপনারা সিনেমাটি দেখুন।’