৫ কারণে আলোচনায় নিশোর ‘দাগি’

ঈদে মুক্তি পাওয়া সিনেমাগুলো সাড়া ফেলছে, সব কটি বাংলা সিনেমাই কমবেশি আলোচনায় রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম শিহাব শাহীনের ‘দাগি’। চলতি সপ্তাহে একটি মাল্টিপ্লেক্সে বেড়েছে সিনেমাটির প্রদর্শনীর সংখ্যা। কিন্তু কেন সিনেমাটি দর্শকের প্রশংসা পাচ্ছে? জেনে নেওয়া যাক সম্ভাব্য পাঁচ কারণ।

‘দাগি’তে ফিরেছে ‘সুড়ঙ্গ’ জুটি নিশো– তমাকোলাজ

দেশীয় গল্পের আমেজ
‘দাগি’র গল্প চেনা, চলতি শতকের শুরুর দিকে উত্তরবঙ্গের এক মফল্‌সল শহরের প্রেক্ষাপটে তৈরি হয়েছে সিনেমাটি। খুনের দায়ে ১৪ বছর সাজা খাটার পর ছাড়া পেয়ে একজন ‘দাগি’র সঙ্গে যা হয়, তা–ই দেখানো হয়েছে সিনেমাটিতে। গল্প ও চিত্রনাট্যে এই দেশীয় আমেজের কারণে দর্শক সহজেই একাত্ম হতে পরেছেন সিনেমাটির সঙ্গে। ছবিতে উঠে এসেছে সীমান্তবর্তী শহরে বেকার তরুণদের চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ার টোপ; এসেছে প্রেমিক যুগলের সম্পর্কের দ্বিধা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব। সিনেমার পাত্র–পাত্রীদের যেভাবে দেখানো হয়েছে, সেটাও যথেষ্ট বাস্তবসম্মত; অনেক দর্শক তাই মন্তব্য করেছেন, দেখার সময় ‘দাগি’কে সিনেমা মনে হয়নি। বরং মনে হয়েছে, নিজেদের চেনা গণ্ডি থেকে তুলে আনা কোনো ঘটনা, যেন চোখের সামনেই সব ঘটে চলেছে। চরিত্রগুলো এতটা চেনা যে তাদের আবেগে মনের অজান্তেই আবেগাপ্লুত হয়েছেন অনেক দর্শক।

জমাটি চিত্রনাট্য আর মনে রাখার মতো সংলাপ
‘দাগি’র চিত্রনাট্য বহুমাত্রিক। প্রায়শ্চিত্তের গল্পের সঙ্গে শিশুদের জন্য ‘গুড টাচ, ব্যাড টাচ’ বোঝার প্রয়োজনীয়তা, পারিবারিক যৌন হয়রানি, জেন-জি, জেন আলফার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর নির্ভরতা তুলে এনেছেন নির্মাতা। এ জন্যও অনেক দর্শক সিনেমাটি দেখার সময় নিজেদের একাত্ম করতে পেরেছেন।

‘দাগি’ সিনেমার দৃশ্যে আফরান নিশো ও তমা মির্জা
চরকির সৌজন্যে

আলাদাভাবে শুনলে হয়তো বিশেষ কিছু মনে হবে না কিন্তু পর্দায় দেখার সময় ‘দাগি’র সংলাপও ছুঁয়ে যায়। দাগি আসাসি মনের রাগকে বশ মানাতে বারবার যখন বলতে থাকে, ‘আল্লার দুনিয়ায় সব সুন্দর, ফুল সুন্দর, পাখি সুন্দর...’ তখন চোখ ফেরানো যায় না। তেমনি জেরিনের সঙ্গে খুনসুটি, বড় এক দুঃসংবাদ পেয়ে রাগে ফুঁসতে থাকা তরুণের চরিত্রও ভালো লাগে।

নিশোর উপস্থিতি
‘দাগি’ পুরোপুরি ‘নিশোময়’ সিনেমা। প্রায় প্রতিটি ফ্রেমেই তিনি আছেন। সিনেমায় নিজের উপস্থিতির এক শক্তিশালী ছাপ রেখে যেতে পেরেছেন তিনি। ‘সুড়ঙ্গ’র পর দ্বিতীয় সিনেমায়ও মনে রাখার মতো অভিনয় করেছেন নিশো। ‘নিশান’ চরিত্রের জন্য ওজন বাড়িয়েছেন, ১৪ বছর জেল খেটে অনিশ্চয়তা আর স্বপ্ন নিয়ে বাড়িতে ফেরা যুবকের চরিত্রে তিনি অসাধারণ। শেষ দিকের অ্যাকশন আর শুরুর রোমান্টিক দৃশ্য—দুটোতেই নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। সবচেয়ে নজর কাড়ে তাঁর অভিব্যক্তি। চোখের পলকে তিনি যেভাবে অভিব্যক্তি বদলেছেন, সেটা ছিল দেখার মতো।

অভিনয়ের টান
কেবল নিশো নন, তাঁকে যোগ্য সংগত দিয়েছেন সিনেমার অভিনয়শিল্পীরা। ‘জেরিন’ চরিত্রে অভিনেত্রী হিসেবে আরও পরিণত অভিনয় উপহার দিয়েছেন তমা মির্জা। সিনেমার প্রথম অংশে বেকার প্রেমিককে নিয়ে ত্যক্তবিরক্ত জেরিন থেকে দ্বিতীয়ার্ধের সংসারী জেরিন হিসেবে তাঁকে মনে রাখতেই হবে। তবে সিনেমার সবচেয়ে বড় চমক সুনেরাহ বিনতে কামাল। কথা বলতে না পারা তরুণী লিখনের চরিত্রে তিনি ভালো কাজ করেছেন। শুধু অভিব্যক্তি দিয়ে কিছু না বলেও অনেক কথা বলেছে তাঁর চোখ।

‘দাগি’ সিনেমায় আফরান নিশো। প্রযোজনা সংস্থার সৌজন্যে

কলকাতার অবাঙালি ব্যবসায়ী ‘রণজিৎ’ চরিত্রে শহীদুজ্জামান সেলিমও ভালো করেছেন। ভারতীয় চোরাকারবারির চরিত্র, হিন্দি-বাংলা মেশানো সংলাপ মিলিয়ে খল চরিত্রে তিনি বেশ মানিয়ে গেছেন। একই কথা রাশেদ মামুন অপুর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাঁর ক্রূর হাসি আর চোরা চাহনি ভয় ধরিয়ে দেয়। নিশানের বন্ধু ‘বাবু’র চরিত্রে রাজীব সালেহীন, নিশানের বাবার চরিত্রে গাজী রাকায়েত ছিলেন যথাযথ। সন্তানহারা মায়ের চরিত্রে মনিরা আক্তার মিঠুও ভালো করেছেন।

নির্মাণে মুনশিয়ানা
পর্দায় চেনা গল্পকে যেভাবে হাজির করতে চেয়েছেন, সেটা ভালোভাবেই পেরেছেন শিহাব শাহীন। দীর্ঘ বিরতির পর নিজের দ্বিতীয় সিনেমা নির্মাণ করতে গিয়ে দক্ষতার প্রমাণ দিয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন

সিনেমাজুড়েই একটা পরিমিতবোধ ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন তিনি। নির্মাণ, আবহ সংগীতের ব্যবহার, গান মিলিয়ে পুরো সিনেমাতেই ছিল যত্নের ছাপ। সে কারণেই হয়তো দর্শকের প্রশংসা পেয়েছে সিনেমাটি। এটি সেরা নির্মাণ কি না জানতে চাইলে নির্মাতা শিহাব শাহীনও বলেন, তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা কাজ এটি।