চলচ্চিত্র অনুদানপ্রক্রিয়ায় আসছে পরিবর্তন

দেশের চলচ্চিত্রকে আরও সমৃদ্ধ করতে পরিবর্তন আসছে অনুদানের সিনেমা বাছাইপ্রক্রিয়ায়।
ছবি:কোলাজ

দেশের চলচ্চিত্রকে আরও সমৃদ্ধ করতে পরিবর্তন আসছে অনুদানের সিনেমা বাছাইপ্রক্রিয়ায়। একাধিক ধাপে নির্বাচিত হবে সিনেমার চূড়ান্ত চিত্রনাট্য। স্বচ্ছতা আনতে পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকবেন সিনেমা–বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি বাছাই কমিটির মিটিংয়ে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।

গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ছিল অনুদানের সিনেমার পুরো প্যাকেজ জমা দেওয়ার শেষ দিন। ১০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ১০টি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার জন্য সরকার প্রস্তাব আহ্বান করে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র শাখার সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার বিপরীতে মোট জমা পড়েছে ২৫৩টি চিত্রনাট্য। এর মধ্যে সিনেমার চিত্রনাট্য ১৯৫টি। বাকি ৫৮টি স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার চিত্রনাট্য।

‘১৯৭১ সেই সব দিন’ সিনেমার দৃশ্যে সানজিদা প্রীতি ও সজল
ছবি : পরিচালকের সৌজন্যে

পরবর্তী সময়ে সিনেমাগুলোর চিত্রনাট্য হস্তান্তর করা হয় প্রাথমিক বাছাই কমিটিতে। এই কমিটির সদস্য অভিনেত্রী আফসানা মিমি বলেন, ‘আমরা বাছাই কমিটি থেকে ১৯৫টি চিত্রনাট্য সবাই পড়ে জমা দিয়েছি। আমার কাছে যেগুলো মনে হয়েছে ঠিক, সেগুলো উল্লেখ করেছি। আপাতত আমাদের এ পর্যায়ের কাজ শেষ। তবে যেকোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরা সব সময় থাকব। পরবর্তী প্রক্রিয়া কী হবে, সেগুলো মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে।’ তিনি আরও জানান, চিত্রনাট্য চূড়ান্ত করতে মূলত বাছাই কমিটি ছাড়া অনুদান কমিটির নামে আরও একটি কমিটি কাজ করবে।

এর আগের বছরগুলোয় প্রাথমিক বাছাই শেষ হলেই সংক্ষিপ্ত তালিকা করা হতো। ২০৪টি সিনেমার সেই তালিকা নিয়ে আরেকটি কমিটি তাদের পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলতেন। এভাবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসত। এ প্রক্রিয়ায় এবার পরিবর্তন আসবে। উপসচিব মো. সাইফুল ইসলাম (চলচ্চিত্র) জানান, চিত্রনাট্যগুলোর মধ্য থেকে ৫০টি পূর্ণদৈর্ঘ্য ও ৩০টির মতো স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার চিত্রনাট্য প্রাথমিক বাছাইয়ে জায়গা পাবে। তবে সংখ্যা কম–বেশি হতে পারে।

সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সিনেমাগুলো আমরা বাছাই কমিটি থেকে পেয়েছি। সুপারিশ করা সিনেমার মধ্য থেকেই নিয়ম অনুযায়ী শর্টলিস্ট করার কাজ চলছে। পরে অনুদান কমিটির কাছে শর্টলিস্ট পাঠানো হবে। তার আগে এ বছর আমাদের মন্ত্রী মহোদয় নতুন কিছু প্রক্রিয়া যোগ করেছেন। সেই প্রক্রিয়ার পরই চূড়ান্ত প্রক্রিয়ার বাছাই হবে।’

অনুদানের ‘একটি না বলা গল্প’ সিনেমার দৃশ্যে রওনক হাসান ও রুনা খান
ছবি: সংগৃহীত

৪ মার্চ সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সরকারি অনুদান দেওয়ার লক্ষ্যে গঠিত ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদানের স্ক্রিপ্ট বাছাই কমিটি’ ও ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি’র সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সেই সভায় তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত জানান, চলচ্চিত্র নির্মাণে সরকারি অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা ও পেশাদারত্ব নিশ্চিত করা হবে।

এ সময় প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত আরও বলেন, সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা অনুদানপ্রত্যাশীরা বাছাই কমিটির সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ সদস্যদের সামনে উপস্থাপনা প্রদান করবেন। উপস্থাপনার ভিত্তিতে বাছাই কমিটির সদস্যরা নির্ধারিত ক্ষেত্রে নম্বর প্রদানপূর্বক আরও সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরির জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করবেন। এ সময় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র অনুদান কমিটির সদস্যরা পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

অমিতাভ রেজা চৌধুরী
প্রথম আলো

অনুদানপ্রত্যাশীরা কী উপস্থাপন করবেন, জানতে চাইলে তথ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, বিভিন্ন সময় অনুদানের স্বচ্ছতা নিয়ে কথা হয়। দেখা যায়, যাঁরা পেশাগতভাবে সিনেমার সঙ্গে যুক্ত নন, তাঁরাও অনুদানের প্রযোজক হয়ে যান। এতে কোনো বাধা নেই। যে কেউ প্রযোজক ও পরিচালক হিসেবে আবেদন করতেই পারেন। সে ক্ষেত্রে প্রস্তাবক কেন সিনেমা বানাতে চান, পূর্ব অভিজ্ঞতা—সব মিলিয়ে তাঁকে সাক্ষাৎকারের মুখোমুখি হতে হবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এ প্রক্রিয়া এবার নতুন। এর মধ্য দিয়ে যাঁরা সিনেমাই করতে চান, তাঁদের বের করা যাবে। এখানে অনেকগুলো বিষয়ের মুখোমুখি হতে পারেন অনুদানপ্রত্যাশীরা। সেগুলো নিয়ে মার্কিং করা হবে। এভাবেই চূড়ান্ত প্রক্রিয়ার দিকে হাঁটবে অনুদান কমিটি।’

পরিচালক অমিতাভ রেজা চৌধুরী নতুন এই প্রক্রিয়া সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি নিজেও অনুদানের এমন প্রক্রিয়া নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করছেন। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়ায় প্রস্তাবকদের সবার সামনে পিচিং করতে হবে। সেখানে অনুদান কমিটির সদস্য, মন্ত্রণালয়ের লোকজন থাকবেন, এমনকি সাংবাদিকেরাও থাকবেন। একজন প্রযোজক বা পরিচালক কেন সিনেমা বানাতে চান, কীভাবে কাজ করবেন, সিনেমাটি নিয়ে তাঁর লক্ষ্য কী ইত্যাদি সবাই জানাবেন। এর মধ্য থেকে সেরা প্রকল্প বাছাই করা হবে। এই প্রক্রিয়ার দিকে এগোনোর জন্য কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ। এটা নিশ্চিত হলে অনুদানের সিনেমা নিয়ে আর প্রশ্ন থাকবে না।