বাড়ি, অর্থ ও পড়াশোনার খরচ পাচ্ছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া সেই ফারজিনা

জেলা প্রশাসকের অফিসে খুশি ফারজিনা। ছবি: খলিল রহমান

সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার সেই শিশু ফারজিনা আক্তারের (৯) পরিবারকে একটি ঘর করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রয়োজনে জমিসহ তাদের এই ঘর করে দেবেন তিনি। এ ছাড়া আর্থিক সহায়তাও দিয়েছেন। শুধু তা–ই নয়, বিভিন্ন জায়গা থেকে নগদ অর্থ এবং পড়াশোনার জন্য সহায়তা পাচ্ছে ফারজিনা। সে ২০২২ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমায় অভিনয় করে শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার পেয়ে আলোচনায় আসে।

১৪ নভেম্বর প্রথম আলোতে ‘শিশুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের টাকায় বাড়ি করতে চায়’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কারপ্রাপ্ত ফারজিনা আক্তারের বাবা দরিদ্র মানুষ। তাঁদের থাকার একমাত্র বাড়িটি অভাবের কারণে বিক্রি করে দিতে হয়েছে। পুরস্কার ও পুরস্কারের অর্থ নিতে বাবার সঙ্গে ঢাকায় আসে ফারজিনা। পুরস্কারের টাকা দিয়ে গ্রামে বাড়ি করার স্বপ্ন ফারজিনার। শিশুটির এমন চাওয়া মুহূর্তেই ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নজর কাড়ে অনেকের।

আরও পড়ুন
জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ফারজিনা
ছবি: খলিল রহমান

পুরস্কার নেওয়ার পরদিন গত বুধবার দুপুরে রওনা দিয়ে রাতে নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে পৌঁছায় ফারজিনারা। টাঙ্গুয়ার হাওর এলাকায় তাদের গন্তব্য। সেই রাতে কোনো ট্রলার না পাওয়ায় রাতে সেখানেই একটি হোটেলে থাকতে হয়। পরদিন সকালে ফারজিনা তার নানাবাড়ি পৌঁছায়। যাওয়ার পরে জানতে পারে, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক তাকে দেখা করতে বলেছেন। তখন দেরি না করে বাবার সঙ্গে সুনামগঞ্জে যায় ফারজিনা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ফারজিনাকে নিয়ে দেখা করেন তার বাবা মোহম্মদ সায়েম মিয়া। সেখানে তাঁদের মিষ্টি খাওয়ান জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী। তিনি ফারজিনা ও তার বাবার সঙ্গে কথা বলেন। তাঁদের পরিবারের আর্থিক অবস্থার খোঁজখবর নেন। ফারজিনা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ছবিও তোলে। পরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে একটি ঘর করে দেওয়ার আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক। ফারজিনার লেখাপড়ার জন্য নগদ ২০ হাজার টাকার সহায়তা দেন তিনি। সেই সঙ্গে সব সময় তার পরিবারের খোঁজখবর রাখার জন্য তাহিরপুর উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।

পুরস্কার নিচ্ছেন ফারজিনা
ছবি: সংগৃহীত

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফারজিনার পরিবারের যে বসতভিটা ছিল, সেটি তারা বিক্রি করে দিয়েছে। এখন আর যদি জমি না থাকে, তাহলে জমির ব্যবস্থাসহ তাদের একটি ঘর করে দেওয়া হবে। একই সঙ্গে প্রশাসন সব সময় এই পরিবারের খোঁজখবর রাখবে এবং তাদের সহযোগিতা করবে।’ ফারজিনার বাবা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ তহবিল থেকে সহায়তা পাওয়ার একটি আবেদন করেছেন জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘আমরা এই সহায়তা পাওয়ার বিষয়েও তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করব।’
গতকাল দুপুরে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুপ্রভাত চাকমা নিজের গাড়ি দিয়ে ফারজিনাদের জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠান। ফারজিনার বাবা মোহম্মদ সায়েম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডিসি স্যার আমরার খোঁজ খবর নিছইন। খুব সমাদর করছইন। মিষ্টি, কমলা, খাওয়াইছইন। আমার মেয়েরে ২০ হাজার টেখা দিছইন। ঘরও দিবা কইছইন। আমরা খুব খুশি। এই পুরস্কারের মর্ম আমি বুঝতাছি। প্রধানমন্ত্রীর সামনে গেছিলাম। এখন স্যার আমরারে সাহায্য করতাছইন। বাড়ি পাইলে মাইয়া মাস্টারি করতে চায়, এইটা পূরণ অইব, মাইয়ারে পড়ালেখা করাইমু। ১২ মাস নিজের বাড়িত থাকতাম পারমু।’

আরও পড়ুন
প্রথম আলোর কার্ডটি ভাইরাল হয়
ছবি: প্রথম আলো

তাহিরপুর উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের টাঙ্গুয়ার হাওরপারের ছিলান তাহিরপুর গ্রামে ফারজিনাদের বসবাস। হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে ফারজিনা চার বছর বয়সেই ‘কুড়া পক্ষীর শূন্যে উড়া’ সিনেমায় অভিনয় করে। পরিচালক শুটিং লোকেশন দেখতে গিয়ে ফারজিনাকে অভিনয়ের জন্য নির্বাচন করেন।

১৪ নভেম্বর মঙ্গলবার দুপুরে প্রথম আলোর ফেসবুক পেজে একটি গ্রাফিক কার্ড পোস্ট করা হয়। সেখানে লেখা ছিল, ‘পুরস্কার নিতেই তো ঢাকাত আইছি। আমাদের টাকাও দেবে। সেই টাকা দিয়ে বাড়ি বানাব। আমাদের কোনো বাড়ি নেই।’ এমন লেখাসংবলিত কার্ড ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। ফারজিনার নিরবচ্ছিন্ন ভবিষ্যতের জন্য শিক্ষাসহায়তা হিসেবে ৫০ হাজার টাকার অনুদান দেন ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশীষ কুমার চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ফারজিনার বাবা সায়েম মিয়ার সঙ্গে কথা বলে টাকা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তাহিরপুরের ইউএনও সুপ্রভাত চাকমা ১০ হাজার টাকা সহায়তা করেছেন।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়৷ ফারিজনা ও তার পরিবারের সদস্যরা।
ছবি: প্রথম আলো

সায়েম মিয়া বলেন, তাঁকে আরও অনেকে ফোন দিয়ে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। গতকাল রাত ৯টার সময় ফারজিনার সঙ্গে কথা বলার জন্য আবার ফোন দেওয়া হয়। তখন ঘুমাচ্ছিল ফারজিনা। আজ শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে ফোন দিলে সায়েম মিয়া বলেন, ‘আমরা অখন ট্রলারও। পাশের বাজারও যাইতাছি। ফারজিনার অসুখ। সে খাইতে পারতাছে না। ডাক্তর দেখানির লাগি যাইতাছি।'