অনেক চেষ্টা করেও অভিনয়ে টিকে থাকতে পারেননি রায়হান

শোভনের স্বাধীনতা সিনেমার পোস্টার। ছবি: সংগৃহীত

সিনেমায় তাঁদের অভিষেক গর্ব করার মতো। তাঁরা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবির নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন। অভিনয় দিয়ে প্রশংসা পেয়েছিলেন। নামভূমিকায় অভিনয়, তাই মুক্তির পরে ভেবেছিলেন, ছবিগুলো তাঁদের ভাগ্য বদলে দেবে। কিন্তু সেই আশায় যেন গুঁড়ে বালি। বলছি ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ সিনেমার আফনান চৌধুরী, ‘শোভনের স্বাধীনতা’ সিনেমার রায়হান খান ফয়সাল ও ‘অনিল বাগচীর একদিন’ সিনেমার আরেফ সৈয়দের কথা। তাঁরা কেউ কেউ অনেক চেষ্টা করেও অভিনয় অঙ্গনে টিকে থাকতে পারেননি।

‘শোভনের স্বাধীনতা’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন রায়হান খান
ছবি: ফেসবুক

রায়হানের গল্প শোনা যাক। শৈশব থেকে মাদারীপুরে থিয়েটার করতেন শিশু রায়হান। পরে ঢাকায় এসে নটরডেম কলেজে ভর্তি হন। পড়াশোনার পাশাপাশি চলতে থাকে নাট্যচর্চা। এখান থেকেই ডাক পান অভিনয়ের। শিক্ষকের মাধ্যমে জানতে পারেন, একটি ছবিতে কিছু শিশুদের নেওয়া হবে। বাছাইপর্বে টিকে যান রায়হান। চরিত্র শুনে রীতিমতো অবাক হয়েছিলেন।

পরিচালক মানিক মানবিক তাঁকে জানান, ‘শোভনের স্বাধীনতা’ ছবির শোভন চরিত্রে অভিনয় করবেন তিনি। প্রথম ছবিতেই কেন্দ্রীয় চরিত্র? এত বড় দায়িত্ব কি কাঁধে নিতে পারবেন। পরিচালক ভরসা দেন। শুরু হয় ছয় মাসের গ্রুমিং। অবশেষে ২০১২ সালে ছবিটির শুটিং শুরু হয়। শুটিংয়ের সময়েই সহ–অভিনেতা থেকে শুরু করে সবার কাছ থেকে প্রশংসা পান।

অভিনেতা রায়হান খান। ছবি: সংগৃহীত

রায়হান বলেন, ‘আমার তো শৈশব থেকেই অভিনয়ের প্রতি টান ছিল। পরে সুযোগ পেয়ে খুবই ভালো লাগল। সিনেমাটি যখন মুক্তি পেল, তখন যাঁরা দেখেছেন, প্রশংসা করেছেন। তখন মনে হয়েছিল, অভিনয়টাই হয়তো করে যেতে পারব। পড়াশোনা আর অভিনয়। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও কাজ জোগাড় করতে পারিনি। পরে হাল ছেড়ে দিয়েছি।’

এখনো শুটিংয়ের সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়লে গা শিওরে ওঠে। পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতা ফুটিয়ে তোলার জন্য দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়েছেন। অসুস্থও হয়ে পড়েছিলেন। সেই দিন শুটিংয়ে সহ–অভিনেতা ফেরদৌস, নিপুণসহ আরও অনেকে তাঁর অভিনয়ের প্রশংসা করেন। রুদ্র ভালো ছাত্র শুনে সাবধান করে দেন অভিনয়কে পেশা হিসেবে নিতে। কারণ, এখানে অনিশ্চয়তা প্রতি পদে পদে।

রায়হান বলেন, ‘অনেকেই বলেছিলেন, অভিনয় করে যাওয়া ও অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়া কঠিন। এখানে সবাই সফল হয় না। মনটা ভেঙে গেলেও আত্মবিশ্বাস ছিল অটুট। ছবির শুটিং শেষ করে মাথায় ঘুরতে থাকে অভিনয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি আর বিভিন্ন নির্মাতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকি।’

আরও পড়ুন
শোভনের স্বাধীনতা সিনেমায় কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন রায়হান। ছবি: সংগৃহীত

একসময় এমন ছিল, ক্লাস করেই অনেক প্রোডাকশন হাউসে ঢুঁ মারতেন। কিন্তু সেই অর্থে আর কোথাও থেকে কাজের জন্য সাড়া পাননি। রুদ্র রায়হান বলেন, ‘প্রতিযোগিতা সব জায়গায়ই থাকে। আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, অভিনয়ে ভালো করব। কিছু নাটকে ছোট চরিত্রে অভিনয় করেছি। অনেকেই সহযোগিতা করেননি। কেউ কেউ টাকাও চেয়েছেন। সহকারী পরিচালকেরা বলেছেন, “টাকা দিলে সুযোগ করে দেব।”

একসময় আর কাজ করতে ভালো লাগেনি। মনে হয়েছে, চাকরি করে পরে অভিনয় করব। এখন বিসিএসের রিটেন দিয়েছি, কিছু ব্যাংকে ভাইভা আছে। যেখানেই চাকরি হোক, পরে অভিনয়টা করব। কয় বছর ধরে পড়াশোনায় মনোযোগ দিয়েছি।’

আরও পড়ুন