৩৪ বছর পর কক্সবাজারে, জাফর ইকবালকে কেন মনে পড়ছে রোজিনার

জাফর ইকবাল ও রোজিনাছবি: কোলাজ

১৯৯১ সালে শুটিং করতে শেষবার কক্সবাজারে গিয়েছিলেন চিত্রনায়িকা রোজিনা। এরপর কেটে গেছে ৩৪ বছর, সাগরপাড়ে আর যাননি। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কক্সবাজারে গেছেন তিনি। তবে সড়কপথে নয়, ট্রেনে চড়ে সাগরপারের শহরে পৌঁছান রোজিনা। অবকাশযাপনের সঙ্গে কয়েকটি ফটোশুটের কাজে শহরটিতে কয়েক দিন থাকবেন তিনি। সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে বিনোদনের কথা হয় হোয়াটসঅ্যাপে।

এত বছর পর কক্সবাজারে গিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত রোজিনা। তবে পুরোনো জায়গাগুলো না পেয়ে মন কিছুটা ভার। সব মিলিয়ে সাগরসৈকতে প্রথম বিকেলটা বেশ ভালোই কেটেছে তাঁর। প্রথম আলোকে বলেন, ‘কোনো জায়গা তো ঠিকমতো চিনছি না। এত হোটেল-রিসোর্ট, অবকাঠামো! পরিবর্তন হবে ধারণা ছিল, তাই বলে এতটা হবে, চিন্তায় ছিল না। তবে একটু কষ্টও পাচ্ছি, প্রিয় জায়গাগুলোতে এত স্মৃতি, কিছুই যেন নেই।’
আকাশপথে না গিয়ে ট্রেন জার্নি বেছে নিয়েছেন রোজিনা। এরও আছে একটা বিশেষ কারণ। তাঁর কথায়, ‘বাসার (উত্তরা) পাশে স্টেশন, কখনো আসা হয়নি তেমন। এবার চিন্তা করলাম ট্রেনে যাব। ভোরে এসে কিছু ছবিও তুলে নিলাম। এসি কামরা বেশ আরামদায়ক। আমাদের দেশে এত নদী-হাওর-খাল–বিল, জার্নিতে ট্রেনের জানালা দিয়ে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকেছি। কত মানুষ ছবি তুলেছেন, আমার পুরোনো ছবির প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণা করেছেন। সব মিলিয়ে বেশ ভালো একটা জার্নি হয়েছে। বিকেলে কক্সবাজার স্টেশনে নেমে ভ্রমণক্লান্তি একদম কেটে গেল। স্টেশনটা বেশ সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।’

বিমানবন্দরে রেলওয়ে স্টেশনে রোজিনা
ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে

নব্বইয়ের দশকে প্রতিবছরই কোনো না কোনো শুটিংয়ে কক্সবাজারে যেতে হয়েছে রোজিনাকে। ক্যারিয়ারের অনেক ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের শুটিংও হয়েছে সেখানে। তাই শহরটার প্রতি ভীষণ মায়া আছে এই চিত্রনায়িকার। রোজিনা বললেন, ‘তখন সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই কক্সবাজারে যাওয়া হতো কোনো না কোনো শুটিংয়ে। কত দিন–রাত কেটেছে শুটিংয়ে। কত আড্ডা-গল্প। সঙ্গে চলচ্চিত্রের সোনালি দিনগুলো মনে পড়ছে।’
অনেক মধুর স্মৃতির সঙ্গে কক্সবাজারের সঙ্গে জীবনের কষ্টের স্মৃতিও জড়িয়ে আছে রোজিনার। ১৯৯১ সালে সর্বশেষ কক্সবাজারে শুটিং করেছিলেন তিনি। যেখানে তাঁর বিপরীতে অভিনয় করেন জাফর ইকবাল। কক্সবাজারে চিত্রধারণ শেষে ঢাকায় আসার সপ্তাহ দু–এক পর মারা যান এই চিত্রনায়ক। কষ্টের সে স্মৃতি স্মরণ করে আপ্লুত রোজিনা বলেন, ‘সুস্থ মানুষটা ঢাকায় এসে মারা গেল! একসঙ্গে শুটিং করলাম, আমার সপ্তাহখানেক আগে ঢাকায় এলেন। এরপর শুনলাম অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি। শেষ কাজের কত স্মৃতি।’

কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনে রোজিনা
ছবি: শিল্পীর সৌজন্যে
আরও পড়ুন

১৯৯৬ সালে সব ছেড়ে দেশের বাইরে চলে গিয়েছিলেন রোজিনা। এরপর যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় চলচ্চিত্রের সঙ্গে। ১০ বছর পর ফেরদৌসের বিপরীতে ‘রাক্ষুসী’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি। ক্যারিয়ারের সুসময়ে কেন চলচ্চিত্র ছেড়েছিলেন, এ প্রশ্নে রোজিনা বলেন, ‘কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম। ’৯১–এ সবাইকে জানিয়ে দিই, নতুন কাজ আর করব না। যেগুলোর শুটিং বাকি, সেসব শেষ করব। এরপর লন্ডনে চলে যাই। সবার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।’
‘রাক্ষুসী’ সিনেমার ১৭ বছর পর ২০২৩ সালে আবার পর্দায় ফেরেন রোজিনা। প্রথমবারের মতো ‘ফিরে দেখা’ শিরোনামের চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন তিনি। পরিকল্পনা আছে নির্মাণ ও প্রযোজনায় আরও সময় দেওয়ার। তাঁর কথায়, ‘আমি তো চলচ্চিত্রের মানুষ। এখানেই থাকতে চাই। নির্মাণ ও প্রযোজনা নিয়ে অনেক পরিকল্পনা আছে। সবকিছু ঠিক থাকলে শিগগিরই সবাইকে জানাব।’
ঈদুল ফিতরে ঢাকাই চলচ্চিত্রের সফলতায় দারুণ খুশি রোজিনা। তবে তিনি মনে করেন, বছরে এক–দুটি ছবি দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি ঘুরবে না। রোজিনা বলেন, ‘বছরে পাঁচ থেকে সাতটি ব্যবসাসফল সিনেমা প্রয়োজন। এক–দুটি দিয়ে ইন্ডাস্ট্রি চলতে পারে না।’