একবার জেল থেকে পালিয়েছি…

সোনাই, আয়না, জাপান ডাক্তার থেকে গহর—চলচ্চিত্র ও নাটকে নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের কাছে বারবার প্রশংসিত হয়েছেন চঞ্চল চৌধুরী। বিভিন্ন বৈচিত্র্যময় চরিত্রে নিজেকে ভেঙেচুরে পর্দায় হাজির করা যেন তাঁর নেশা হয়ে উঠছে। সব মিলিয়ে দর্শকদের অভিনেতার গ্রহণযোগ্যতা বেড়েই চলছে। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, অমিতাভ রেজা, গিয়াসউদ্দিন সেলিম থেকে মেজবাউর রহমান সুমনসহ শৈল্পিক ঘরানার চলচ্চিত্র নির্মাতাদের প্রথম পছন্দ হয়ে উঠেছেন চঞ্চল চৌধুরী। যার অন্যতম বড় কারণ, অভিনেতা যেকোনো চরিত্রকে বাস্তবের কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারেন। বড় পর্দায় যে চরিত্রগুলোতে অভিনেতা প্রশংসিত, তাঁর বেশ কটিতে তাঁকে দেখা গেছে কয়েদির ভূমিকায়। কয়েক দিন আগে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা নতুন একটি ওয়েব সিরিজের টিজারেও অভিনেতাকে দেখা গেছে জেলবন্দী আসামির চরিত্রে। ক্যারিয়ারে ‘জেলখানা-যোগ’ দিয়ে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন চঞ্চল। কেবল কয়েদি নয়, প্রতিটি চরিত্রে বারবার নিজেকে ভাঙার সেই অভিজ্ঞতা ভক্তদের সঙ্গে ভাগাভাগি করেছেন অভিনেতা।

কারাগার ওয়েবে সিরিজের একটি দৃশ্যে চঞ্চল চৌধুরী
ছবি: সংগৃহীত

শুধু চঞ্চল চৌধুরীর ক্যারিয়ারই নয়, দেশি চলচ্চিত্রশিল্প দীর্ঘদিন পরে মনে রাখার মতো সিনেমা উপহার দিয়েছিলেন গিয়াসউদ্দিন সেলিম। তাঁর মনপুরা দিয়েই নাটক ছাড়িয়ে বড় পর্দার দর্শকদের কাছে আলোচিত হয়ে ওঠেন অভিনেতা। এই ছবিতে প্রথম তাঁকে জেল খাটতে দেখা যায়। অপরাধ না করেও জেলে থাকা সোনাই চরিত্রের প্রতি দর্শকদের ভালোবাসা জন্মে। তবে তখন কে জানাত মনপুরা দিয়ে যে ‘জেলখানা-যোগ’ শুরু, সেটা অব্যাহত থাকবে পরে আরও কয়েকটি সিনেমায়। তবে বেশ কয়েকবার কয়েদি চরিত্রে অভিনয় করলেও চরিত্রগুলোর বৈশিষ্ট্য, আবহবিন্যাস, প্রেক্ষাপট—সবই আলাদা। একের পর এক বৈচিত্র্যময় চরিত্রে হাজির হওয়ার চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে অভিনেতা বলেন, ‘সব সময় প্রতিটি কাজের পেছনে আলাদা সময় দিই। চরিত্রে বৈচিত্র্য তো এমনি এমনি আসে না। চরিত্র দিয়ে দর্শকদের মুখোমুখি হওয়া খুবই কঠিন কাজ। যে কারণে শুরু থেকেই সবার আগে ভাবি চরিত্র নিয়ে। অভিনেতার কাজই ভিন্ন কিছু করা। এক শ, দুই শ চরিত্রে কাজ করলে একই রকম হতে হবে তা নয়, ডাইমেনশনটা খুব দরকার। এটাই অভিনেতার সংগ্রাম বা সাধনা।’

বারবার জেলখানার সঙ্গে তাঁর ‘আত্মীয়তা’ স্মরণ করে ফেসবুকে চঞ্চল লিখেছেন, ‘জেল খেটেছি চারবার। মৃত্যুদণ্ড হয়েছে দুবার...একবার জেল থেকে পালিয়েছি…ফাঁসিতে ঝুলেছি একবার। জেলখানার সঙ্গে আমার অন্য রকম আত্মীয়তা।’ মনপুরা সিনেমার পর চঞ্চল আবার জেলবন্দী হন আয়নাবাজিতে। সিনেমারজুড়েই ছিল শরাফত করিম আয়নার ভেলকি। যে অন্যের হয়ে জেল খাটে। এভাবে ভালোই চলছিল। হঠাৎ একবার জেলে আটকে যায় আয়না? দর্শকদের টেনশন বাড়তে থাকে। আয়নার কি শাস্তি হবে? সে কি জেল থেকে বের হতে পারবে? টানটান উত্তেজনার পর অবশেষে জেল থেকে বের হয় আয়না। হলভর্তি দর্শক করতালি দিয়ে স্বাগত জানান তাকে। আয়নাবাজিতে তাঁর সেই সংলাপ ‘বোঝো নাই ব্যাপারটা’ এখনো অভিনেতার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে জনপ্রিয় সংলাপ বললেও বাড়িয়ে বলা হয় না।

‘আয়নাবাজি’ সিনেমার একটি দৃশ্যে চঞ্চল
ছবি: সংগৃহীত

চরিত্রগুলোর পেছনের গল্প ভাগাভাগি করে এই অভিনেতা বলেন, ‘সব কটি চরিত্র নিয়েই দীর্ঘ স্টাডি ছিল। স্টাডি ছাড়া কোনো চরিত্রে অভিনয় করি না। যে চরিত্রগুলোর কথা দর্শক বলেন, সেগুলো পরিশ্রমের ফসল। অনেক আগের নাটকের চরিত্রে ফিরে যাই তাহলে, জাপান ডাক্তার, হাড়কিপ্টে নাটকের গহরসহ অনেক চরিত্রের কথা বলা যায়। অনেক চিন্তাভাবনা করে ডিরেক্টর আমাকে নেন। এরপর শুরু হয় চরিত্র নিয়ে আমার গবেষণা। সাম্প্রতিক সময়ের কথা বললে সিনেমার মধ্যে পাপ পুণ্য, হাওয়া, ওয়েবের মধ্যে তাকদির, মুন্সিগিরি, বলি দেখলে দর্শক বুঝতে পারবেন, কতটা পরিশ্রম করতে হয়েছে। একেকটিতে চরিত্র একেক ধরনের।’
মনপুরা, আয়নাবাজির পর চলতি বছরের মে মাসে মুক্তি পাওয়া পাপ পুণ্যতেও আবার মামলায় জড়ান। ছবিটির খোরশেদ চেয়ারম্যান চরিত্রটি মিথ্যা খুনের মামলায় ফেঁসে যায়। সিনেমার শেষ দৃশ্যগুলোতে পাপ–পুণ্যের কঠিন হিসাব–নিকাশে দর্শকদের মন জয় করে নেন খোরশেদ চরিত্রে অভিনয় করা চঞ্চল চৌধুরী।

এদিকে চলতি মাসেই মুক্তি পাবে তাঁর নতুন ওয়েব সিরিজ কারাগার। সেখানেও তিনি জেলের গল্প থেকে বের হতে পারেননি। এ নিয়ে অভিনেতা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘অভিনীত চরিত্রের মধ্যে সোনাই, শরাফত করিম আয়না, খোরশেদ চেয়ারম্যানের হয়ে জেলে ছিলাম অনেক দিন। সর্বশেষ দীর্ঘদিন জেলে কাটালাম হইচইয়ের নতুন ওয়েব সিরিজ কারাগার-এর জন্য। সবার জন্য সব সত্য, আমার জন্য অভিনয়।’

মনপুরা সিনেমায় এভাবেই পর্দায় এসেছিলেন চঞ্চল
ছবি: সংগৃহীত

কারাগার-এ অভিনয় প্রসঙ্গে চঞ্চল বলেন, ‘এই কারাগার জেলখানার এক কয়েদির গল্প। কারাগারের প্রতিটি সেলে কয়েকজন কয়েদি থাকে। একদিন গুনতে গিয়ে দেখা যায় একজন বেশি! বাড়তি একজনকে যে সেলে পাওয়া যায়, সেখানে সে নাকি ৫০ বছর ধরে বন্দী। এই চরিত্রের জন্য লুকটা কেমন হতে পারে, সেটার জন্য চিন্তাভাবনা করেই অভিনয় করা। সময় নিয়ে আমার লুকটা তৈরি করা হয়েছে।’ কারাগার পরিচালনা করেছেন সৈয়দ আহমেদ শাওকী। একই প্ল্যাটফর্মে এই অভিনেতা ও পরিচালক জুটির আগের কাজ তাকদীর ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছিল। এখন অবশ্য হাওয়া সিনেমায় চান মাঝি চরিত্রের জন্য দর্শকদের প্রশংসা কুড়াচ্ছেন চঞ্চল চৌধুরী।