চলচ্চিত্রের পরামর্শক কমিটি কী করছে
সাড়ে সাত মাসে ‘চলচ্চিত্রবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি’ সরকারকে কী বুদ্ধি-পরামর্শ দিল? সরকারই–বা কী করল?
‘পরামর্শক কমিটি নামমাত্র সক্রিয় আছে। চার মাস ধরে কোনো বৈঠক হয় না। ফলে কমিটির কার্যক্রম নেই বললেই চলে’, নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন পরামর্শক কমিটির এক সদস্য।
চলচ্চিত্রের বিষয়ে বুদ্ধি-পরামর্শ নিতে গত ২ অক্টোবর ২৩ সদস্যের পরামর্শক কমিটি পুনর্গঠন করে সরকার। প্রতি মাসে বৈঠক হওয়ার কথা থাকলেও গত চার মাসেও কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি। সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামের সময়ে দুটি বৈঠক হয়েছে। উপদেষ্টা মাহফুজ আলম মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর কোনো বৈঠক হয়নি।
চলচ্চিত্রের বিষয়ে বুদ্ধি-পরামর্শ নিতে গত ২ অক্টোবর ২৩ সদস্যের পরামর্শক কমিটি পুনর্গঠন করে সরকার।
বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলোর প্রশ্নের জবাবে বৈঠক না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা। তিনি জানান, শিগগিরই পরামর্শক কমিটির বৈঠক ডাকবেন তাঁরা।
কমিটি পুনর্গঠনের পরপর গত অক্টোবরের শেষভাগে প্রথম বৈঠক করে পরামর্শক কমিটি, এরপর ২১ জানুয়ারিতে শেষ বৈঠক করেছে।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেশ কয়েকটি কমিটি করেছে সরকার। গুরুত্ব বিবেচনায় বাকি কমিটিগুলোর চেয়ে পরামর্শক কমিটিকে এগিয়ে রাখছেন চলচ্চিত্র বিশ্লেষকেরা। তবে পরামর্শক কমিটি কতটা কাজ করতে পারছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
চলচ্চিত্র বিশ্লেষকেরা বলছেন, পরামর্শক কমিটির কাজে গা–ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে।
চলচ্চিত্র বিশ্লেষকেরা বলছেন, পরামর্শক কমিটির কাজে গা–ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে অন্তত চার সদস্যের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। কেউ কেউ অভিযোগ তুলছেন, মাসের পর মাস ধরে বৈঠক না হওয়ায় কমিটির কাজে সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়েছে। ফলে ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না তাঁরা।
কী ধরনের সমন্বয়হীনতা? এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাজের স্পষ্ট ধারণা দেওয়া হয়নি। সঙ্গে যোগাযোগের ঘাটতি তো রয়েছেই। ফলে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’
হতাশার কথা জানিয়ে আরেক সদস্য প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কোনো কাজ করতে পারছি না। কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছি না। তাহলে আমাদের এখানে থাকার কোনো মানে হয় না। আমরা কাজের কোনো সুযোগ পাচ্ছি না।’
কমিটিতে আমলাদের আধিক্য থাকায় চলচ্চিত্রের অংশীজনেরা নীতিনির্ধারণে কতটা জোরালো ভূমিকা রাখতে পারবেন, তা নিয়ে আগে থেকেই আলোচনা ছিল। এর মধ্যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও সামনে আসছে।
আমরা কোনো কাজ করতে পারছি না। কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছি না। তাহলে আমাদের এখানে থাকার কোনো মানে হয় না।
ডামাডোলের মধ্যে সরকারকে বিশেষ কোনো বুদ্ধি–পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ পায়নি পরামর্শক কমিটি।
সরকার কী করছে
ডামাডোলের মধ্যে সরকারকে বিশেষ কোনো বুদ্ধি–পরামর্শ দেওয়ার সুযোগ পায়নি পরামর্শক কমিটি। তবে দুটি বৈঠকে সরকারের তরফ থেকে পাঁচটি বিষয় উত্থাপন করা হয়েছিল, তা নিয়ে কমিটির সদস্যরা আলোচনা করেছেন। এগুলো হলো ১. টিকিট বিক্রিতে স্বচ্ছতা আনতে ই–টিকিটিং কার্যকর; ২. সিনেমা হল নির্মাণে এক হাজার কোটি টাকার ঋণ বণ্টন; ৩. ফিল্ম সিটিকে কর্মমুখী করা; ৪. চলচ্চিত্রের নীতিমালা সংস্কার; ৫. সার্টিফিকেশন বোর্ডের রেটিং–প্রথা চালু।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় দাবি করছে, পরামর্শক কমিটির পরামর্শে সরকার কাজ করছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (চলচ্চিত্র অধিশাখা) মাহফুজা আখতার প্রথম আলোকে জানান, সার্টিফিকেশন বোর্ডের বিধিমালা নিয়ে কাজ করছে সরকার। বিধিমালার কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চলচ্চিত্র নীতিমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি ঋণ নিয়ে হল–মালিক ও সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় দাবি করছে, পরামর্শক কমিটির পরামর্শে সরকার কাজ করছে।
পদাধিকারবলে পরামর্শক কমিটির সভাপতি মাহফুজ আলম, সদস্যসচিব তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (চলচ্চিত্র)। আমলা ও চলচ্চিত্রভিত্তিক তিন সমিতির বাইরে কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন অধ্যাপক আ–আল মামুন, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক আরিফুর রহমান, চলচ্চিত্র নির্মাতা ও প্রযোজক তানিম নূর, চলচ্চিত্র সমালোচক সাদিয়া খালিদ, চলচ্চিত্র সংসদ কর্মী, সমালোচক ও নির্মাতা আহমেদ সালেকীন ও বঙ্গর চিফ কনটেন্ট অফিসার মুশফিকুর রহমান।
তবে পরামর্শক কমিটির এক সদস্য বলেন, তাঁরা কোনো প্রস্তাব দেননি। সব কটিই সরকারের প্রস্তাব। তাঁর ভাষ্য, ‘এমন না যে ওরা আমাদের খসড়া দেখিয়েছে, সেটা নিয়ে আলোচনা করেছি। ওই টপিকগুলো ওরাই নির্ধারণ করে দিয়েছে। ওটা নিয়ে আমরা শুধু আলোচনা করেছি।’
ফলে পরামর্শক কমিটির পরামর্শে কোনো কাজ হচ্ছে, তা মানতে নারাজ কমিটির সদস্যেরা। সমন্বয়হীনতার প্রশ্নে গত বুধবার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (চলচ্চিত্র অধিশাখা) মাহফুজা আখতার দাবি করেন, তাঁদের কাজে কোনো সমন্বয়হীনতা নেই।
তবে তা মানতে নারাজ কমিটির একাধিক সদস্য। কেউ কেউ বলছেন, সমন্বয়হীনতার কারণে তাঁরা কোনো কাজ করতে পারছেন না।