ঢাকা চলচ্চিত্র উৎসবে মাহফুজুর রহমানের শেষ প্রামাণ্যচিত্র

প্রামাণ্যচিত্রটির দৃশ্যধারণ শেষ হওয়ার পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মৃত্যু হয়েছে মাহফুজুর রহমানেরছবি: সংগৃহীত

৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রয়াত চিত্রগ্রাহক মাহফুজুর রহমান খানের মৃত্যুর তিন বছর পর দর্শকের সামনে আসছে প্রামাণ্যচিত্র ‘থার্টি ফাইভ’। নির্মাতা আশিক মুস্তফার প্রামাণ্যচিত্রটির দৃশ্যধারণ শেষ হওয়ার পর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মৃত্যু হয়েছে মাহফুজুর রহমানের। ৩৫ মিলিমিটার যুগের সেই সময়ের এফডিসি কেমন ছিল, কীভাবে দৃশ্য ধারণ করা হতো—মাহফুফুজুর রহমানের বয়ানে তুলে তা আনা হয়েছে।

প্রামাণ্যচিত্রের কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি চিত্রগ্রাহক হিসেবেও এটি মাহফুজুর রহমানের শেষ কাজ। একবিংশ ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ১৫ জানুয়ারি বিকেল পাঁচটায় জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে প্রামাণ্যচিত্রটির প্রিমিয়ার হবে। এর আগে ইরানের একটি উৎসবে ‘থার্টি ফাইভ’–এর বিশ্ব প্রিমিয়ার হয়েছে। এতে একটি অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন আইরিন।
অভিনয় দিয়ে চলচ্চিত্রে ক্যারিয়ার শুরুর পর চিত্রগ্রহণে নাম লেখান মাহফুজুর রহমান; এরপর নিজেকে দেশসেরা চিত্রগ্রাহকে পরিণত করেছেন।
স্কুলে পড়ার সময় থেকেই তিনি চিত্রগ্রহণে আগ্রহী হন। বাবার ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলে তাঁর চিত্রগ্রহণে হাতেখড়ি হয়। চিত্রগ্রহণ শেখার উদ্দেশ্যে তিনি প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক জহির রায়হানের ‘লেট দেয়ার বি লাইট’ ছবির সেটে গিয়েছিলেন। এ ছাড়া রফিকুল বারী চৌধুরী ও আবদুল লতিফ বাচ্চুর কাছ থেকে চিত্রগ্রহণের বিভিন্ন বিষয় শিখেছেন।

এতে একটি অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন আইরিন
ছবি: সংগৃহীত

মাহফুজুর রহমান খান ছিলেন প্রখ্যাত চিত্রগ্রাহক আবদুল লতিফ বাচ্চুর শিষ্য। তাঁর অধীনে সহকারী চিত্রগ্রাহক হিসেবে ১৯৭০ সালে ‘দর্প চূর্ণ’ ও ১৯৭১ সালে ‘স্বরলিপি’ চলচ্চিত্রে কাজ করেন। প্রধান চিত্রগ্রাহক হিসেবে তাঁর প্রথম কাজ আবুল বাশার চুন্নু পরিচালিত ‘কাচের স্বর্গ’ (১৯৭২)। একই সময় তিনি আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত ‘জল্লাদের দরবার’ (১৯৭২), আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘আমার জন্মভূমি’ (১৯৭৩), মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘আলোছায়া’ (১৯৭৪), নুর-উল-আলম পরিচালিত ‘চলো ঘর বাঁধি’ (১৯৭৪), দিলীপ বিশ্বাস পরিচালিত ‘দাবি’ (১৯৭৪), সিরাজুল ইসলাম ভূঁইয়া পরিচালিত ‘একালের নায়ক’ (১৯৭৫) চলচ্চিত্রে কাজ করেন। এরপর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অসংখ্য ছবিতে চিত্রগ্রাহক হিসেবে কাজ করেছেন মাহফুজুর রহমান খান।

রাজ্জাক পরিচালিত ‘অভিযান’ (১৯৮৪) চলচ্চিত্রের জন্য শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহক বিভাগে মাহফুজুর রহমান খান প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। পরে আজহারুল ইসলাম খানের ‘সহযাত্রী’ (১৯৮৭), আখতারুজ্জামানের ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ (১৯৯৬), হুমায়ূন আহমেদের ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ (১৯৯৯), ‘দুই দুয়ারী’ (২০০০), ‘আমার আছে জল’ (২০০৮) ও ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ (২০১২), কোহিনূর আক্তার সুচন্দার ‘হাজার বছর ধরে’ (২০০৫), গোলাম রাব্বানী বিপ্লবের ‘বৃত্তের বাইরে’ (২০০৯) চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
মাহফুজুর রহমান খান আটবার বাচসাস (বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি) পুরস্কার এবং একবার ‘হাজার বছর ধরে’ (২০০৫) ছবির জন্য বিশেষ বিভাগে মেরিল-প্রথম আলো সমালোচক পুরস্কার পেয়েছেন। আরও পেয়েছেন এম আবদুস সামাদ স্মৃতি সম্মাননা (২০১৫)।