নূর–শিউলির প্রেমকাহিনি বায়োস্কোপ প্লাসে

‘নূর’ ছবির দৃশ্যে আরিফিন শুভ ও জান্নাতুল ঐশীছবি : প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে
দুই বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটছে আজ। অবশেষে দর্শকের সামনে আসছে সিনেমা ‘নূর’। প্রেক্ষাগৃহে মুক্তির লক্ষ্যেই নির্মিত হলেও শেষ পর্যন্ত ছবিটি জায়গা করে নিয়েছে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বায়োস্কোপ প্লাসে। আজ থেকে দর্শকের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে ‘নূর’-শিউলির রহস্যময় ও সংবেদনশীল প্রেমকাহিনি। লিখেছেন মনজুর কাদের

মাত্র কয়েক ঘণ্টার অপেক্ষা। দুপুর ১২টার পর থেকেই বায়োস্কোপ প্লাসে দেখা যাবে রায়হান রাফী পরিচালিত ‘নূর’। মুক্তির আগে টিজার, ট্রেলার ও গান প্রকাশের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ছবিটির প্রচারণা। সেই সঙ্গে নায়ক আরিফিন শুভ ও নায়িকা জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশীর নানা সাক্ষাৎকারে উঠে আসে শুটিংয়ের অভিজ্ঞতা, আলোচনায় থাকা রোমান্টিক দৃশ্য এবং চরিত্র গঠনের প্রস্তুতির কথা।

‘নূর’ সেন্সরে জমা পড়ে ২০২২ সালের জুলাইয়ে। প্রথম দফায় ছাড়পত্র মেলেনি। বোর্ডের আপত্তি ছিল কয়েকটি দৃশ্যে। প্রয়োজনীয় সংশোধনের পর আবার জমা দিলে সে বছরের শেষ দিকে ছবিটি ছাড়পত্র পায়। এরপরও মুক্তি নিয়ে তৈরি হয় অনিশ্চয়তা। বারবার পিছিয়ে যায় প্রেক্ষাগৃহে আসার সম্ভাবনা। অবশেষে তিন বছর পর ছবিটি মুক্তি পাচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মে।

আরও পড়ুন
ঐশী ও আরিফিন শুভ
ছবি: ফেসবুক থেকে

ছবিটির প্রযোজনায় শুরুতে ছিল শাপলা মিডিয়া। পরে এটি কিনে নেয় কোয়াইট অ্যান্ড সেট প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান। পরিচালক রায়হান রাফী বর্তমানে ব্যস্ত নতুন কাজে।

‘নূর’-এর ওটিটি মুক্তি প্রসঙ্গে রাফি বলেন, ‘শুটিংয়ের সময় বলেছি, সিনেমা হলের জন্য বানাচ্ছি। তখন প্রযোজক একজন ছিলেন, পরে বদল হলো। আমি কিন্তু সব সময় ব্যবসাসফল ছবি বানাতে পছন্দ করি। এই ছবিটা খুব অল্প টাকায় বানিয়েছি। যে টাকায় বানিয়েছি, দ্বিগুণ টাকায় ওটিটিতে বিক্রি করেছি। আমি অবশ্য আরেকটু শুটিং করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সময়, লুক, কন্টিনিউটিসহ নানা কিছু ভেবে সম্ভব হয়নি। এরপর দেখলাম, যা আছে ভালোই। ছবিটার দৈর্ঘ্য যদিও একটু কম। সবকিছু মিলে আমার মনে হয়, বাসায় বসে যদি ছবিটি দেখে, আলাদা ফিল পাবে। তাই এক্সক্লুসিভলি ওটিটিতে দিয়েছি। অনেক সময় ব্যবসার কথা চিন্তা করে আমাদের অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়, এটা সে রকমই। তবে দর্শক মজা পাবেন, আনন্দ পাবেন। অনেক আগের ছবি, কোভিড সময়ের, বাজেট সীমাবদ্ধতা ছিল; চাইলেও অনেক কিছু করতে পারিনি—এরপরও চেষ্টা করেছি ভালো কিছু করার।’

আরও পড়ুন
‘নূর’ ছবির শুটিংয়ের দৃশ্য
ছবি : প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে

‘নূর’-এ আবার জুটি বেঁধেছেন আরিফিন শুভ ও জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। তাঁদের প্রথম জুটি ছিল মিশন এক্সট্রিম সিনেমায়, এরপর এসেছে ব্ল্যাক ওয়ার। নতুন ছবির ট্রেলার প্রকাশের পর শুভর চরিত্র নিয়ে শুরু হয় নানা আলোচনা। অনেকেই ধারণা করেছিলেন, তিনি মানসিক রোগীর চরিত্রে অভিনয় করছেন। এ ধারণা একেবারেই নাকচ করেন শুভ। তাঁর ভাষায়, ‘নূর কোনো মানসিক রোগী নয়। সে বোকাসোকা, সরল। প্রেমে অন্ধ। তাই অনেকে তাকে “পাগল” বলে।’

রায়হান রাফী
ছবি : প্রথম আলো

শুভ জানান, গল্প শোনার পর থেকেই চরিত্রটি তাঁকে নাড়া দেয়। তিনি বলেন, ‘আমাদের আশপাশের ছোট শহরে এমন প্রেমিকের দেখা মেলে। নিজের ছোটবেলাতে ফিরে গেছি। বড় হতে হতে যেসব প্রেমিক দেখেছি, তারাই আমার প্রস্তুতির অংশ ছিল। রেফারেন্স বলতে আমি বাস্তবের ভেতর থেকেই নূরকে খুঁজে বের করেছি।’

২০ দিন ধরে ‘নূর’-এর শুটিং হয়েছে পাবনা শহর, ঈশ্বরদী ও ঢাকার নবাবগঞ্জে। নায়ক-নায়িকার বাড়ির দৃশ্য দেখানো হয়েছে পাবনাতেই। শতবর্ষী পুরোনো বাড়িগুলোতে শুটিং করতে গিয়ে তৈরি হয়েছে নানা স্মৃতি। শুটিংয়ের স্মৃতির মধ্যে শুভর কাছে সবচেয়ে দাগ কেটেছে একটি দৃশ্যের জন্য মাথা ন্যাড়া করার সিদ্ধান্ত।

‘নূর’ ছবির শুটিংয়ের দৃশ্য
ছবি : প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে

শুভ বলেন, ‘সিনেমায় মাত্র কয়েক মিনিটের একটি দৃশ্যে সঠিক আবেগ ধরার জন্য আমি চুল ফেলে দিয়েছি। অনেকেই তখন কৌশলে কাজটি করার পরামর্শ দিয়েছিল। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল, ওভাবে করলে মুহূর্তের আবেগ নষ্ট হবে। এর জন্য আমাকে অনেক দিন টাক মাথায় ঘুরতে হয়েছে। তবু মনে হয়, ওই সিদ্ধান্ত নূরের অনুভূতিকে সত্যি করে তুলেছে।’

ঐশীর জন্য এ ছবির শুটিং ছিল ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা। প্রথমবার পাবনায় গিয়ে শহরের শান্ত পরিবেশ তাঁকে মুগ্ধ করে। অভিনেত্রী বলেন, ‘পাবনায় একটা ঐতিহ্যের ছোঁয়া আছে। মানুষ পুরোনো বাড়িগুলো আগলে রেখেছে। সেখানে শুটিং করে মনে হয়েছিল, জায়গাগুলো খুব মিস করব। সত্যিই করি।’

ছবিতে ঐশীর চরিত্রের নাম শিউলি। শান্ত, স্নিগ্ধ এক তরুণীর চরিত্র। নিজের ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়ায় চরিত্রটি আয়ত্তে আনতে খুব বেশি অসুবিধা হয়নি বলে জানান তিনি। তবে কঠিন ছিল চরিত্রটির আবেগময় যাত্রা।

‘নূর’ ছবির দৃশ্যে আরিফিন শুভ ও জান্নাতুল ঐশী
ছবি : প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে

ঐশী বলেন, ‘সিনেমায় শিউলির যে ইমোশনাল জার্নি, সেটা আমার জীবনে হয়নি। বিষয়গুলো আয়ত্তে আনতে সময় লেগেছে। তখনকার আমার ম্যাচিউরিটি অনুযায়ী এসব অনুভূতি বুঝতে কিছুটা কঠিন ছিল। সেখানে পরিচালক আর সহশিল্পীর সহায়তা খুব দরকার ছিল এবং আমি সেটা সুন্দরভাবেই পেয়েছি।’

ছাড়পত্র পাওয়ার পর একাধিকবার শোনা গেছে, ‘নূর’ মুক্তি পাচ্ছে। আবার মাঝপথে থেমে গেছে প্রচারণা। অভিনয়শিল্পীরাও ব্যস্ত হয়ে পড়েন অন্য কাজে। সম্প্রতি মুক্তির খবর নিশ্চিত হওয়ার পর আবারও প্রচারণায় নেমেছেন সবাই।

এত দেরিতে মুক্তি পেলে ছবির আবেদন কমে যায় কি না, এমন প্রশ্নে শুভ বলেন, ‘শুটিং শেষ হওয়ার পর মুক্তিতে দেরি হলে অনেক সময় গল্পের আবেদন কমে, এটা সত্যি। কারণ, সময়ের সঙ্গে দর্শকের রুচি, পটভূমি আর প্রযুক্তি বদলায়। তবে কিছু গল্প সময়ের ওপর নির্ভর করে না। দেখানোর মুহূর্তে সেগুলো সব সময়ই সমসাময়িক লাগে। নূর তেমনই একটি গল্প। প্রেমের অনুভূতি সময় মেনে চলে না। নব্বইয়ের দশকের একজন অন্ধ প্রেমিক যেমন আচরণ করত, আজকের প্রেমিকও একই আবেগ থেকেই করে।’

‘মিশন এক্সট্রিম’ ছবিতে ঐশী ও শুভ
সংগৃহীত

শুভর সঙ্গে তিনটি সিনেমায় কাজ প্রসঙ্গে ঐশীর অভিজ্ঞতাও ইতিবাচক। হাসতে হাসতে তিনি বলেন, ‘শুভ ভাইয়ার সঙ্গে কাজ মানেই স্বস্তি। উনি খুব সংবেদনশীল, আবার খুব সাপোর্টিভ। আমাকে খুব স্নেহ করেন। তাঁর সঙ্গে কাজ করলে মনে হয়, আমি নিরাপদ জায়গায় আছি। না বুঝলে প্রশ্ন করতে পারি। ভুল করলে উনি খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেন। তিনি আমার কাছে মেন্টরের মতো।’

দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে দর্শকের সামনে আসছে ‘নূর’। নূর-শিউলির প্রেমকাহিনি ওটিটিতে কেমন সাড়া ফেলে, সে অপেক্ষাই এখন। নির্মাতা, শিল্পী ও দর্শকের বহুদিনের প্রত্যাশা আজ পূরণ হচ্ছে। তিন বছর ধরে আটকে থাকা এই ছবির ভাগ্য কী হয়, তার উত্তর দেবে সময়ই।