শাকিবের ‘তাণ্ডব’-এ কি নিশো থাকছেন
বাংলাদেশের ক্রিকেট আর ঢাকাই সিনেমার মধ্যে একটা ভালো মিল আছে। ক্রিকেটে আছে ‘সাকিবিয়ান’ আর ‘তামিমিয়ান’। বাংলা সিনেমার দুনিয়ায় এক দশকের বেশি সময় ধরে আছে ‘শাকিবিয়ান’, এর মধ্যে নতুন করে যোগ হয়েছে ‘নিশোইয়ান’। বড় তারকার আলাদা ভক্ত-সমর্থক থাকতেই পারে। সাধারণ ভক্তদের আবেগের বশে মাঝেমধ্যে বাড়াবাড়িও হয়ে থাকে। কিন্তু দুই তারকার ভক্তদের মধ্যে বিনা কারণে যে ‘ভার্চ্যুয়াল যুদ্ধ’ বেধেছে, এর ব্যাখ্যা কী। অতীতে এটা অনেকবার হলেও রায়হান রাফীর ঈদের সিনেমা ‘তাণ্ডব’কে ঘিরে যা হচ্ছে, সেটা যেন সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
ঈদের সিনেমার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী তারকার ভক্তদের মধ্যে ‘ভার্চ্যুয়াল যুদ্ধ’র বিশদে যাওয়ার আগের পটভূমি একটু বলা যাক। গত ২৩ মে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ছিল মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারের ২৬তম আসর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আফরান নিশো ও তাসনিয়া ফারিণ। অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্রে ২৫ বছর পূর্তির জন্য শাকিব খানকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। তারকা জরিপে ‘তুফান’-এর জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কারও পান তিনি। তবে বড় চমক তখনো বাকি ছিল।
একপর্যায়ে শাকিব ও নিশোকে মঞ্চে দেখা যায় একসঙ্গে পারফর্ম করতে। অনুষ্ঠানে শাকিবের প্রশংসা করেন নিশো। ব্যস, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় দুই তারকার পারফরম্যান্স। অনেকে সাধুবাদ জানান। কেউ আবার তাঁদের এই ‘মধুর মিলন’ মানতে পারেননি। তাঁরা আবার মিম বানান, কেউ আবার নাচের কিছু খণ্ডিত অংশ প্রচার করে বলার চেষ্টা করেন, শাকিবের উপস্থিতি পছন্দ করেননি নিশো। তবে মোটাদাগে দুই তারকার পারফরম্যান্স প্রশংসিত হয়। কিন্তু ঝড়ের তখনো বাকি ছিল।
এদিন শাকিব খানকে বিশেষ সম্মাননা দেওয়ার আগে সঞ্চালক নিশো বলেন, ‘তিনি নাম্বার ওয়ান, সবাই তাঁকে বলে সুপারস্টার।’ শাকিব খানকে উৎসর্গ করে বিশেষ পরিবেশনা শুরুর আগে নিশো আরও বলেন, ‘২৫ বছর ধরে আমাদের এই ইন্ডাস্ট্রিকে সবটাই দিয়ে গেছেন এবং দীর্ঘ সময় ধরে তাঁকে অনুকরণ করছে, অনুসরণ করছে; তিনিই তো আমাদের সত্যিকারের...আমাদের ইন্ডাস্ট্রির রাজকুমার, আমাদের মহারাজা।’
কিন্তু ২৫ মে রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কারণ, শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’-এ নিশোর উপস্থিতি! সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে ‘তাণ্ডব’-এর অতিথি চরিত্রে দেখা যাবে নিশোকে। তবে নির্মাতা রায়হান রাফী এটা শাকিব খানকে জানাননি। না জানিয়েই নিশোর অংশের শুটিংয়ের চেষ্টা করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আগুন জ্বলে উঠতে আর কী চাই! মাঠে নেমে পড়েন হাজারো ‘শাকিবিয়ান’, ফেসবুকে তৈরি হয় একের পর এক ভিডিও এবং পোস্টও। ছিল ‘নিশোইয়ান’ও। যৌক্তিক-অযৌক্তিক সমালোচনা ছাড়িয়ে সেটা চলে যায় অকথ্য গালাগালি পর্যন্ত।
এর মধ্যে আবার খবর হয়, রাফী নাকি ‘সুড়ঙ্গ’ আর ‘তাণ্ডব’ মিলিয়ে একটি সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স তৈরি করতে চাইছেন। সে জন্যই ছবিতে নিশোর উপস্থিতি জরুরি। নতুন ইস্যু পেয়ে আবার ঝাঁপিয়ে পড়েন দুই তারকার ভক্তরা। ফেসবুকে ভক্তরা নানা ধরনের মত জানিয়েছেন। কেউ শাকিবের পক্ষে, কেউ নিশোর পক্ষে। কেউ আবার নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন।
এর মধ্যে নির্মাতা রাফীর ফোনকল ফাঁস নিয়ে লিখেছেন কেউ কেউ। একজন যেমন লিখেছেন, ‘কয়েক দিন ধরেই শুনছি, শাকিব নাকি “তাণ্ডব”-এর কাজ আটকে দিয়েছে নিশোর অতিথি চরিত্র থাকায়, অথচ এখন দেখি ডাবিং করছে। গুজব থেকে দূরে থাকার জন্য রাফীও বলল। এতে পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে, আজকের রাফীর যে কল রেকর্ডটা একজন এক্স প্রডিউসার ও বর্তমানে ভিউ ব্যবসায়ী যে লোকটা প্রচার করছিল, ওইটা ফেক (ভুয়া) ছিল। আমিও বলি, রাফী এসব বেকার লোকের সঙ্গে কথা বলার টাইমই-বা পায় কীভাবে।’
আরেকজন লিখেছেন, ‘রাফী স্ট্যাটাস দিয়ে প্রমাণ করল, ভিউ ব্যবসায়ীরা যা ছড়াতে থাকে, পুরোটাই হচ্ছে গুজব আর মিথ্যা। ওরা বলল, শাকিব খান শুটিংয়ে যায়নি, অথচ শুটিং শেষ করেছে। ডাবিংও শেষ। “তাণ্ডব” প্রধানত শাকিব খানের সিনেমা, কিন্তু এই ছবিতে আফরান নিশো আর সিয়াম আহমেদ গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে থাকবে। আর এইটা শাকিব খানের নিজের ইচ্ছাতেই হচ্ছে, এবার করো বয়কট। মেরিল-প্রথম আলো অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের কথা মনে আছে? আফরান নিশোও নাচছে, শাকিব খানও নাচছে। “তাণ্ডব”-এ এমনটাই থাকতে যাচ্ছে।’ এদিকে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, শাকিব খানকে জানিয়েছেন পরিচালক রায়হান রাফী, শাকিব খান চান না—এমন কিছু রাফী করবেন না। এর মধ্যে আরেকজন লিখেছেন, ‘শাকিব-ভক্তরা সোশ্যাল মিডিয়ায় “তাণ্ডব” সিনেমা বয়কটের ঘোষণা করছে, যা মোটেও সিনেমা এবং ইন্ডাস্ট্রির জন্য ভালো না। আফরান নিশোকে নিয়ে মূলত দ্বন্দ্ব। তারা চায় না “তাণ্ডব” সিনেমায় আফরান নিশো কোনোরকমের পার্ট হোক কিংবা ক্যামিও দিক। সিনেমার প্রমোশনের সময় শাকিব খানকে নিয়ে বা কিছু মন্তব্য করেছেন, যা করা উচিত ছিল না।’
আরেকজন লিখেছেন, ‘মজার ছলে বললেও (নিশোর উক্তি) জিনিসটা শাকিব-ভক্তদের মনে আঘাত করে। তাই তারা চায়, নিশো এই সিনেমার পার্ট না হোক। আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো, অবশ্যই আফরান নিশো ঠিক করেননি...তাই বলে তাঁকে সরি বলতে হবে, ব্যাপারটা এমনও নয়। প্রকৃতপক্ষে যারা ভক্ত, তারা কখনো তার প্রিয় হিরোর সিনেমা বেহাত হতে দিতে চায় না।’ আরেক ভক্ত লিখেছেন, ‘বয়কটের যে একটা জোয়ার এসেছে, তা মোটেও ঠিক নয়। আমি আশা করছি, দর্শক হিসেবে আমাদের সমর্থন ভালো কাজের প্রতি, ঝামেলার প্রতি নয়। এতেই সবার মঙ্গল। আমরা সবাই মিলে এক হলে ভালো কিছু তৈরি হবে...আর আমরা আলাদা হয়ে গেলে ভালো কিছু তৈরির সম্ভাবনা কমে যাবে। বাংলা সিনেমার জয় হোক।’
ভক্তদের বাড়াবাড়ি নিয়ে আরেক ভক্ত লিখেছেন, ‘পাগলামি ভালো, কিন্তু দিনের পর দিন অতিরিক্ত কখনোই ফল ভালো কিছু আনে না।’ তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘তাণ্ডব’ মুক্তির আগে আরেক ‘তাণ্ডব’ বয়ে গেলেও নির্মাতা রাফী, শাকিব, নিশো বা প্রযোজনা সংস্থা স্পিকটি নট। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়েও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শিগগিরই ছবিটি সার্টিফিকেশন বোর্ড থেকে মুক্তির সনদ পাবে। শাকিবের ‘তাণ্ডব’-এ নিশো আছে কি নেই, সেটা তখন জানা যাবে।
তবে নিশো ‘তাণ্ডব’-এ থাকুন আর না-ই থাকুন, এতেই ল্যাঠা চুকবে বলে মনে হয় না। কারণ ওই ‘শাকিবিয়ান’ আর ‘নিশোইয়ান’। থাকলে এক পক্ষ নিজেদের জয়ী ভাববে, না থাকলে আরেক পক্ষ। তাই ঢাকাই ছবির দুই তারকাকে নিয়ে ভক্তদের ‘ভার্চ্যুয়াল যুদ্ধ’ যে এখানেই শেষ নয়, বাংলা সিনেমার খোঁজখবর রাখলে সেটা আপনার বুঝে যাওয়ার কথা।